রামপুরা থানা বিএনপির চলতি কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ সহসভাপতি পদে রয়েছেন আব্দুল খালেকের ছেলে মোঃ আলম। তিনি আওয়ামীলীগ সরকার বিরোধী লাগাতার হরতাল অবরোধকালে জ্বালাও পোড়াও, নাশকতা সৃষ্টিসহ পেট্রোল বোমাবাজি মামলারও আসামি। আওয়ামীলীগ নেতা শিল্পপতি হুমায়ুন জহির হত্যা মামলারও অন্যতম আসামি তিনি। বিএনপির সংসদ সদস্য কারাগারে মৃত নাসির উদ্দিনের দেহরক্ষী হিসেবে পরিচিত মোঃ আলমকে আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে যুগ্ম সাধারন সম্পাদক করা হয়েছে। আলমের ভাই মহসীন হোসেনও থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধেও জ্বালাও পোড়াও, নাশকতা সৃষ্টি, শতাধিক গাড়ি ভাংচুরসহ সরকারি কর্মকান্ডে বাধাদান সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে। তাকেও আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত থানা ও ওয়ার্ড কমিটির দুটি স্থানেই নাম দিয়ে রাখা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বর্ষ বরণের রাতে বাধন নামে এক তরুণির শ্লীলতাহানির ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কৃত ও জেলখাটা আসামি চন্দন দাসও ঠাঁই পেয়েছেন রামপুরা থানা আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদকের পদ। নারায়নগঞ্জ চাষাঢ়ার ডাকসাইটে যুবদল নেতা আখতার হোসেন ওরফে আদম আখতারেরও ঠাঁই জুটেছে রামপুরা আওয়ামীলীগের থানা কমিটিতে। খিলগাঁও তালতলা সুপার মার্কেটের সভাপতি হুমায়ুন কবীর আজাদ ওরফে বিএনপি আজাদকেও থানা আওয়ামীলীগের ৪ নম্বর সহসভাপতি পদ দেওয়া হয়েছে।
এভাবেই বিএনপি-জামায়াত জোটের বিভিন্ন কমিটির দায়িত্বশীল নেতারা অবলীলায় ঢুকে পড়ছেন আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলোর দায়িত্বশীল নেতৃত্বে। এসব ব্যাপারে ত্যাগী নেতা কর্মিদের বাদ-প্রতিবাদ, আবেদন নিবেদন কোনো কিছুই গ্রাহ্য করা হচ্ছে না। বরং যারাই এসব বিএনপি-জামায়াতিদের বিরোধীতা করছেন তাদের নাম কমিটিতেই রাখা হচ্ছে না।
এমন একনায়কতন্ত্রী মনোভাব আর মোটা অঙ্কের অর্থ ছড়াছড়ির মধ্য দিয়েই গঠন করা হচ্ছে রাজধানীর রামপুরা থানা এবং ২২, ২৩ ও ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন। টাকার কাছে ধরাশায়ী হয়ে বিএনপি-জামায়াতের বর্তমান কমিটির নেতা কর্মিরাই থানা আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব লাভ করতে যাচ্ছে। অন্যদিকে ছিটকে পড়ছে দলের ত্যাগী নেতা কর্মিরা। সাবেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের নাম কেটে ঢুকানো হচ্ছে সরকার বিরোধী জ্বালাও পোড়াও মামলার আসামিসহ নাশকতা সৃষ্টিকারীদের। ইতিমধ্যেই প্রস্তাবিত এ কমিটি থেকে বিএনপি-জামায়াত নেতা কর্মিদের নাম বাদ দিয়ে প্রকৃত আওয়ামীলীগারদের নিয়ে কমিটি গঠন করতে দু’দফা ফেরত পাঠানো হয়েছে। সংশোধিত কমিটি গঠনের জন্য নির্দ্দিষ্ট সময়সীমাও বেধে দিয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রের কোনো আদেশ নির্দেশ এ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে পাত্তাও পাচ্ছে না। বরং আওয়ামীলীগের নীতিমালা অনুযায়ী কমিটি গঠনের কাঠামো পর্যন্ত মানা হচ্ছে না। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি পদকে সাধারণ সদস্যদের সহাবস্থানে রাখা হয়েছে।
ঢাকা-১১ আসনভুক্ত থানা ও ওয়ার্ড কমিটি চুড়ান্তকরণের দায়িত্ব প্রাপ্ত আহবায়ক সাবেক এমপি জাহানারা বেগম এতসব অসঙ্গতির কারণে প্রস্তাবিত কমিটিতে সাক্ষর না দিয়ে দুই মাস ঝুঁলিয়ে রাখেন। কিন্তু তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করাসহ হুমকি ধমকির মুখে জোরপূর্বক ওই কমিটির প্রস্তাবনায় সাক্ষর প্রদানে বাধ্য করারও অভিযোগ উঠেছে। বহুবিধ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র থেকে রামপুরা থানা আওয়ামীলীগের কমিটি অনুমোদন ছাড়াই ফেরত পাঠানো হয় এবং শিগগির জামায়াত-বিএনপিমুক্ত কমিটির প্রস্তাবনা পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট থানা আওয়ামীলীগ কমিটির প্রভাবশালী নেতা কোনো কিছুই তোয়াক্কা করছেন না, বাদ দিচ্ছেন না বিএনপি-জামায়াতি নেতাদেরও। বরং নতুন নতুন কৌশলে তাদেরকে কমিটিতে রাখার পাঁয়তারাও চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বিএনপির মোহসীন হোসেনের নাম পরিবর্তন করে হাল নাগাদের ভোটার তালিকায় নাম দেয়া হয়েছে মোঃ কবীর হোসেন। এ নামটি এবার যোগ করা হয়েছে ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের কমিটিতে।