এমন অদ্ভুত অনুভূতির সঙ্গে পরিচয় ছিল না তাঁর। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে নিরঙ্কুশ জয়ে আনন্দে ভেসে যাওয়াই তো স্বাভাবিক। তা নাসির হোসেন আনন্দিত হচ্ছেন ঠিকই। তবু মনের কোণে হঠাৎ হঠাৎ বেজে ওঠে বিষণ্নতার বেহাগ। খেলোয়াড় হিসেবেই যে এ অর্জনে অবদান রাখার কথা ছিল তাঁর!
‘আমরা এভাবে সব ম্যাচে জিতেছি বলে ভালো লাগছে। তবে বারবারই মনে হচ্ছে, এ দলটির অংশ আমি থাকতে পারতাম’-কাল কথাগুলো বলার সময়ও যেন কেঁপে উঠছিল নাসিরের কণ্ঠ। ২০১১ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে যিনি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পারফরমার। ফর্মের সঙ্গে আড়ির কারণে নাসির এবার বাদ পড়েছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট-ওয়ানডে স্কোয়াড থেকে। ঐতিহাসিক ‘বাংলাওয়াশ’-এর অংশীদার তাই থাকা হয়নি তাঁর।
বাদ পড়ার পর শুরুর কিছু দিন খুব এলোমেলো গেছে নাসিরের। থই খুঁজে পাচ্ছিলেন না কিছুতেই। সময়ে সেই ক্ষতে পড়েছে প্রলেপ। আত্মপোলব্ধিতে তাই অন্যদের আর কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন না নাসির, ‘আমি চাপ হয়তো বেশি নিয়ে ফেলেছিলাম। জাতীয় দলে ঢোকার পর থেকে ভালো সময়ের মধ্যে ছিলাম তো। খারাপ সময় কিভাবে সামলাতে হয়, বুঝিনি। এবার বুঝেছি। অনেক কিছু শিখেছি। ভবিষ্যতে যা আমার কাজে আসবে খুব।’
বাদ পড়ার পর থেকেই নাসিরের নিজেতে ফেরার চ্যালেঞ্জ। তাতে খুব যে খারাপ করছেন, এমন না। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সর্বশেষ দুই ম্যাচে খেলেছেন পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংস। এর আগে বিসিবি একাদশের হয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও তাই। কলকাতায় আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে তিন ম্যাচে দুই ফিফটি। ‘এখন আর কোনো চাপ নেই। আমি আমার মতো খেলছি। ব্যাট করতে ভালো লাগছে তাই। মাঝে এ ভালো লাগাটাই কমে গিয়েছিল’-নাসিরের বিশ্লেষণ। এখন সেই ভালো লাগা ফিরেছে। জাতীয় দলে ফেরার আশা করতে তাই দোষ কোথায়!
নাসির সরাসরি কিছু বলেন না। অত দূর না ভেবে নিজের ব্যাটিং উপভোগের মন্ত্র জপছেন তিনি, ‘আমি আগের মতো ব্যাটিংয়ে মজাটা পেতে চাই। সেটি পাচ্ছিও। এভাবে খেলতে থাকলে জাতীয় দলে নিশ্চয়ই ফিরব। বিশ্বকাপেও খেলব। তবে সত্যি বলছি, এখন অত সব আর ভাবি না। আবাহনীর হয়ে প্রিমিয়ার লিগটায় ভালো খেলি। এরপর যা হয় হবে।’
ওই ভালো খেলতে পারলে জাতীয় দলের বন্ধ দুয়ারটা সহসাই আবার খুলে যাবে নাসিরের সামনে। জাতীয় দলের জয়োৎসবে আর দর্শক হয়ে থাকতে হবে না তাঁকে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের ওই অদ্ভুত অনুভূতির কষ্টের অংশটার মুখোমুখি যে আর হতে চান না নাসির!