২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রথমে মনোনয়ন পান খাদিজাতুল আনোয়ার। তাঁর বাবা ফটিকছড়ির (চট্টগ্রাম-২ আসন) সাবেক সাংসদ রফিকুল আনোয়ার। ওই নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ মহাজোট গঠন করলে ফটিকছড়ি আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয় তরিকত ফেডারেশনকে। যে কারণে এখানে প্রার্থী বদল হয়। তরিকতের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনি সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগে কোন্দল বেড়েছে বলে জানান স্থানীয় নেতারা। তাঁরা বলেন, এখানে আওয়ামী লীগের অন্তত চারটি উপদল রয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে পরপর দুবার ফটিকছড়ি থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন রফিকুল আনোয়ার। তাঁর সময়ে আওয়ামী লীগে বিভক্তি থাকলেও তা প্রকাশ্য ছিল না। ২০১২ সালে তাঁর মৃত্যুর পর কোন্দল প্রকট হয়ে ওঠে। আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী এখন পর্যন্ত চারজন। তাঁদের মধ্যে দুজন রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে ও ভাই। স্থানীয় রাজনীতিতে চাচা-ভাতিজি পৃথক দুটি ধারার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার এবারও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী। তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ তাঁর সঙ্গে রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন তিনি। খাদিজাতুল আনোয়ার বলেন, ‘আমার বাবা ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রেখেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর সংগঠনের ঐক্য নষ্ট হয়েছে। দলকে ঐক্যবদ্ধ করার স্বার্থে আগামী নির্বাচনে আমি মনোনয়ন চাইব। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার পরও জোটের স্বার্থে আমি সরে দাঁড়াই। ফটিকছড়িতে জোটের কিছু নেতার কারণে আওয়ামী লীগের কোন্দল বেড়েছে।’
চাচা ফখরুল আনোয়ারের বিষয়ে তিনি বলেন, রাজনীতি করার অধিকার সবার রয়েছে। তবে রফিকুল আনোয়ারের একমাত্র উত্তরসূরি তিনি সেটি রাজনীতিতেও।
অন্যদিকে, রফিকুল আনোয়ারের ভাবমূর্তি কাজে লাগিয়ে মাঠে আছেন তাঁর ছোট ভাই ফখরুল আনোয়ারও। তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক। এলাকায় তাঁরও নিজস্ব অনুসারী রয়েছে। ভাতিজি খাদিজাতুল আনোয়ারের বিরুদ্ধে তিনি মাঠে সোচ্চার। তিনি বলেন, জোটের প্রার্থীকে সাংসদ নির্বাচিত করে ফটিকছড়ির মানুষ পায়নি। এলাকায় কোনো উন্নয়ন হয়নি। তাঁর দাবি, জোটের লোকজনের কারণেই আওয়ামী লীগে কোন্দল ঢুকেছে। আর ফায়দা লুটছেন জোটের নেতা-কর্মীরা। দলের ঐক্য এবং এলাকার উন্নয়নের জন্য তিনি মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান।
ভাতিজির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে ফখরুল আনোয়ার কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
চাচা-ভাতিজি ছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম। তিনি ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (মানবতাবিরোধী অপরাধে পরে তাঁর ফাঁসি কার্যকর হয়) কাছে হেরে যান। হেরে গেলেও তিনি মাঠ ছাড়েননি। এলাকায় তাঁরও অনুসারী রয়েছে। পেয়ারুল ইসলাম বলেন, ফটিকছড়ির আওয়ামী লীগের মূলধারা একদিকে। মূলধারার বাইরে আরও কয়েকটি উপদল রয়েছে। উপদলে বিভক্ত লোকজনের কারণে আওয়ামী লীগের বদনাম হচ্ছে। আর এলাকায় কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় জোটের সাংসদের ওপর স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আওয়ামী লীগ থেকে এবার প্রার্থী প্রয়োজন। আগামী নির্বাচনে দল থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
তিন নেতার বাইরে সাদাত আনোয়ার নামের একজন শিল্পপতি নীরবে দেড় বছর ধরে ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর প্রয়াত আবদুল্লাহ আল হারুনের ভাগনে তিনি। তাঁর আরেক মামা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান।
ব্যক্তিগত তহবিল থেকে দানখয়রাত করার কারণে সাদাত আনোয়ার এলাকায় আলোচনায় আসেন। ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য তিনি।
সাদাত আনোয়ার বলেন, ‘আমার দাদা এবং বাবা জনপ্রতিনিধি ছিলেন। মামা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। সেই সূত্রে আমার রাজনীতিতে আসা। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে এলাকায় আগে সময় দিতে পারিনি। আমাদের নেতা রফিকুল আনোয়ারের মৃত্যুর পর ফটিকছড়ির রাজনীতিতে শূন্যতা বিরাজ করছে। তাঁর জায়গা কেউ পূরণ করতে পারেনি। তাঁর পথ অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে চাই।’
তবে আগামী নির্বাচনে ফটিকছড়ি আসনটি আবারও মহাজোটের শরিক তরিকত ফেডারেশনকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে মনে করেন অনেক নেতা-কর্মী। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম বলেন, জোটের প্রার্থী সাংসদ হওয়ায় ফটিকছড়িতে দলের মধ্যে অনৈক্য তৈরি হয়েছে। বিষয়টি দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁরা জানাবেন। আগামী নির্বাচনে এই আসনে দলীয় প্রার্থী দিতে তাঁকে অনুরোধ করবেন তাঁরা।