আব্দুল্লাহ আল মামুনঃ
শতবর্ষ আগের বাপ দাদার মাটি দিয়ে তৈরী ঝুঁকিপূর্ণ একটি ঘরে কোনরকম জীবনের শেষ বেলা কাটাচ্ছেন বৃদ্ধ হোসেন আলী। জীবন সংগ্রামের শেষ সময়ে এখন তাঁর একমাত্র সঙ্গী স্ত্রী সাহারা খাতুন। কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটলেও দুই সদস্যের এই পরিবারের এখন প্রধান সমস্যা হিসেবে দাড়িয়েছে সুপেয় পানির অভাব।
গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা ইউনিয়নের সিংদিঘী গ্রামের ইন্নছ আলীর ছেলে হোসেন আলী (৭০)। অন্যের বাড়িতে দিনমুজুরের কাজ করে অনেক কষ্ট করে তিন সন্তানকে বড় করেছেন। সন্তানরা সংসার গড়ার পর এক এক করে বাবা ও মাকে ছেড়ে চলে যায়। জন্মের পর থেকে অভাব পিছু ছাড়েনি হোসেন আলীর,তাই আজোও নিজের বাড়িতে প্রতিদিনের ব্যবহার্য পানির যোগান মিটাতে একটি টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করতে পারিননি তিনি। ভরসা ছিল প্রতিবেশীর বাড়ি সেখানেও এখন বাধা পড়েছে। নিজের অসুস্থ শরীর নিয়ে এখনও তার দিনের বেশীর ভাগ সময় ও চিন্তা কেটে যায় পানির কথা ভেবে। স্ত্রী সাহারা খাতুন স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে মাসিক ৮শত টাকা বেতনে ঝাড়–দারের কাজ করেন। এটাই দুই সদস্যের পরিবারের আয়ের একমাত্র মাধ্যম। স্থানীয় একটি পুকুরের পানি ও দূরের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সংগৃহীত পানি দিয়ে কোনরকমে দিন অতিবাহিত হচ্ছে তাঁদের।
হোসেন আলীর প্রতিবেশি ও সিংদিঘী গ্রামের বাসিন্দা মামুন প্রিয়া জানান, প্রতিদিনই অসুস্থ শরীর নিয়ে দূর থেকে পানির কলস বহন করে পরিবারে পানির যোগান দেন হোসেন আলী। এ দূরাবস্থা দেখে আমার খুব খারাপ লাগে ।
বৃদ্ধ হোসেন আলী জানান,তিনি নিজে গত কয়েক বছর যাবৎ অসুস্থ থাকায় কাজে যেতে পারেননা। স্ত্রীর সামান্য আয়ের উপর নির্ভর করে তাদের চলতে হয়। এক বেলা খাবার না খেলেও তার চলে ,কিন্তু পানি ছাড়াতো আর চলে না। প্রতিবেশীদের বাড়িতে একদিন পানি আনতে গেলে পরের দিন তারা না করে দেয়। তাই দূর থেকে পানির চাহিদা মেটাতে হয়। যা করতে জীবনের শেষ বেলায় অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে।
হোসেন আলীর স্ত্রী সাহারা খাতুন জানান, পানির অভাবে সপ্তাহে একদিনও গোসল করতে কষ্ট হয়। কাপর চোপর স্থানীয় একটি পুকুরের পানি দিয়ে ধৌত করতে হয়। তবে একটি টিউবওয়েলের ব্যবস্থা হলে খুব উপকার হতো।
উপজেলার মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম খোকন জানান, বিষয়টি আমার ধারণার বাহিরে ছিল। তবে এই পরিবারের জন্য সুপেয় পানির যোগানে খুব দ্রুততম সময়ে একটি টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করা হবে।