বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আবদুল হামিদ বলেছিলেন, দেশের ৭০ ভাগ রাজনীতি চলে গেছে ব্যবসায়ীদের হাতে। উনার কথাটা সঠিক। আর বার বার সঠিক প্রমানিতও হচ্ছে। দিন দিন ওই অগ্রগামির মাত্রা বাড়ছে। কারণ, যে সকল ব্যবসায়ী রাজনীতিতে প্রবেশ করছেন তাদের হাতে রাজনীতি জিম্মি হয়ে যাচ্ছে। ত্যাগী নেতাদের সামনে রাজনীতি, ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখে দেখে ত্যাগী কর্মীদের আগ্রহে ভাটা পড়ছে। রাজনীতি করতে করতে জীবন শেষ হলেও হঠাৎ করে ব্যবসায়ী বা আমলারা যোগদান করার আগেই দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার ফলে ত্যাগী কর্মীদের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায়, নবাগত কারো আগমনই ঘটে জাতীয় পতাকা প্রাপ্তীর মাধ্যমে। পতাকাবাহী গাড়ি দিয়ে নবাগতদের যাত্রা শুরু হয়। আর ওই পতাকাবাহী গাড়িতে ফুল ছিটিয়ে দেয়ার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন ত্যাগী কর্মীরা।
আবার দলের শীর্ষ পর্যায়ে থাকা সাবেক নেতা-নেত্রীর অনেকে রাজনীতি করতে করতে পরপারে চলে গেছেন। জাতীয় পতাকার জন্য যারা সারাজীবন মরণপন যুদ্ধ করেছেন, স্বামী হারিয়েছেন, বিধবা হয়েছেন, তাদের ভাগ্যেও জোটেনি একটি জাতীয় পতাকাবাহী গাড়ি। এমনকি পতাকা দিয়েও ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে ত্যাগী কর্মী ও তার পিতার পতাকা। এটা জাতির দুর্ভাগ্য ছাড়া আরর কিছু নয়।
ইতিহাস বলছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরের খেতাপ প্রাপ্ত অনেক ত্যাগী কর্মী এখনো আছেন, যার বা যাদের ভাগ্যে জাতীয় পতাকাবাহী গাড়িই জোটেনি। অথচ দেশ বিরোধী রাজাকারদের গাড়িতেও জাতীয় পতাকা উড়েছে। এ সবের পর আজকের শতাব্দীতে দেখা যাচ্ছে, অতীত ইতিহাসে মরিচিকা পড়ে যাচ্ছে। রাজনীতির জায়গাটা জবর দখল হয়ে যাচ্ছে। ত্যাগী কর্মীদের অস্তিত্ব সংকট, তীব্র হচ্ছে।
রাজনীতিতে এই অধঃপতন ঠেকাতে কোন উদ্যোগ নেই। বরং রাজনীতিকে কোনঠাসা করার উদ্যোগ বেশী। এর কারণ কি? এটা নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন।
অনেকে বলছেন, কাাঁচা টাকাওয়ালা নবাগতদের দলে মুল্যায়ন বেশী। কারণ তারা টাকা খরচ করতে পারেন। আর ত্যাগী নেতা-কর্মীরা রাজপথে থাকতে থাকতে ঘর সংসার পর্যন্ত সঠিক ভাবে করতে পারছেন না। সংসার খরচ যেখানে চলে না, সেখানে রাজনীতির জন্য টাকা খরচ করার সক্ষমতা থাকে না। তাই ত্যাগী কর্মীরা টাকার জন্য অবহেলিত।
মাঠ পর্যায়ে রাজনীতি করেন এমন ত্যাগী ও প্রবীন নেতাদের মতে, পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি ও ক্ষমতার জন্য টাকার প্রয়োজন। আর টাকার প্রয়োজনে কাঁচা টাকাওয়ালা নবাগতদের গুরুত্ব দিচ্ছেন শীর্ষ নেতারা। ফলে দিন দিন ত্যাগী কর্মীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আর যারা ত্যাগী ছিলেন তারা এখন টাকার পিছনে দৌঁড়াচ্ছেন। ফলে রাজনীতিতে ত্যাগী কর্মীর সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় দেখা যায়, রাজধানী ঢাকার রাজপথ রক্তে লাল করা ত্যাগী নেতারা সাহস করে তেমন কেউ মনোনয়নই ক্রয় করেন না। কারণ মনোনয়নের আগেই নানা ধরণের সংকেত তৈরী হয়ে গেছে। তাই মনোনয়ন চেয়ে শীর্ষ নেতার মন খারাপ করে লাভ নেই বরং ক্ষতি হবে ভেবে ত্যাগী তেমন সিনিয়র কোন নেতা মনোনয়নপত্রই সংগ্রহ করতে সাহস পাচ্ছেন না।
সাধারণ মানুষ বলছেন, রাজনীতি যদি টাকা ওয়ালাদের হাতে চলে যায়, আর রাজনীতি যদি ব্যবসা হয়ে যায়, তবে দেশ ও মানুষ নিয়ে ভাববার লোকের সংকট দেখা দিবে। এমন সময় আসতে পারে, যখন তেমন কোন ত্যাগী রাজনীতিবিদ খোঁজে পাওয়া দুস্কর হবে। এতে রাজনীতি শব্দটি তার অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে রাজনীতিকে ব্যবসার কবল থেকে মুক্ত করা সময়ের দাবী।
ড. এ কে এম রিপন আনসারী
এডিটর ইনচীফ
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম