চতুর্থ শ্রেণীর বইয়ে কভার প্রথম শ্রেণীর, অসংখ্য ত্রুটি

Slider শিক্ষা

285166_124

 

 

 

 

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ত্রুটিপূর্ণ বই সরবরাহ করা হয়েছে। গত ১ জানুয়ারী নতুন বছরের প্রথম দিনে বই উৎসব থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হয়। শিক্ষার্থীরা নতুন বই হাতে পেয়ে নতুন উদ্যামে পড়াশোর প্রস্তুতি শুরু করে। কিন্তু প্রথম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণির প্রায় ২ হাজার পাঠ্যবইয়ে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ বই পেয়ে বছরের শুরুতে ক্লাসে এসে তাদের হোঁচট খেতে হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা কিছুটা হলেও ব্যাহত হচ্ছে।

কোটালীপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, প্রথম শ্রেণির ৫ শ’ বাংলা বইয়ের মধ্যে ৪র্থ শ্রেণির বাংলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ১ম শ্রেণির ইংরেজি ২ শ’ বইয়ের মধ্যে প্রথম ১ থেকে ১২ পৃষ্ঠা নেই। প্রথম শ্রেণির ৩ শ’ গণিত বইয়ে ১ ও ২ পৃষ্ঠা নেই। ২য় শ্রেণির ২শ’ গণিত বইতে জ্যামিতির অধ্যায় নেই। ৩য় শ্রেণির ২শ’ বাংলা বইয়ে ১ থেকে ৭ পৃষ্ঠা নেই। ৪র্থ শ্রেণির ২শ’ বাংলা বইয়ে ১ থেকে ১০ পৃষ্ঠা নেই। ৫ম শ্রেণির ১ শ’ ইংরেজি বইতে ৪৪ থেকে ৭৮ পৃষ্ঠা নেই। ৫ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বাইতে ৩০ থেকে ৪০ পৃষ্ঠা নেই। একই বিষয়ের ১ শ’ বইতে ৯১ থেকে ৯৮ পৃষ্ঠা নেই।

কোটালীপাড়া উপজেলার বাগান উত্তরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী পিউ সাহা জানান, তার বাংলা বইয়ে কভার উল্টো। তার ক্লাসের আরো কয়েক জনের বাংলা বইয়ের একই অবস্থা। এছাড়া সহপাঠী জয়িতা রতœর বাংলা বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠা আঠা দিয়ে জোড়ানো। পৃষ্ঠা খুলছে না। এতে নতুন বই পাওয়ার আনন্দে ভাটা পড়েছে। এখন তাদের মন খারাপ।

একই বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র ফারুক হোসেন জানান, তার বাংলা বইয়ের প্রথম ৬ পৃষ্ঠা নেই। ৩য় শ্রেণির ছাত্র তন্ময় বাকচী জানায়, তার বাংলা বইয়ের প্রথম ৭ পৃষ্ঠা নেই। ৩য় শ্রেণির ছাত্র সুজিৎ বিশ্বাস জানায়, তার বাংলা বইয়ের ৮৬ থেকে ১০৩ পৃষ্ঠা নেই। এ অবস্থায় তাদের বছরের প্রথম দিকের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করে।

ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কাঞ্চন রত্ন বলেন, ত্রুটিপূর্ন বই হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা আমাদের জানায়। এ বইয়ের কারণে বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি আমি প্রধান শিক্ষককে অবহিত করি।

অভিভাবক দীনেশ সাহা বলেন, ত্রুটিপূর্ণ বই সরবরাহ করায় বছরের শুরুতে আমার মেয়ে পূর্ণিমা সহ কিছু শিক্ষার্থী হোঁচট খেয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ বই পেয়ে আনেকের মন খারাপ হয়েছে। এ কারণে তারা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে না। দ্রুত তাদের ত্রুটি মুক্ত বই সরবরাহ করে এ সমস্যার নিরসন করা হোক।

কোটালীপাড়া উপজেলার বাগান উত্তরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ কান্ত সরকার বলেন, শ্রেণি শিক্ষকরা বিষয়টি আমাকে জানানোর পর আমি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করি। আমরা ত্রুটিপূর্ণ বইয়ের তালিকা ইতিমধ্যে ওই অফিসে পাঠিয়েছি। শিক্ষা অফিস থেকে ত্রুটিমুক্ত বই সরবরাহ করা হবে। পরে সে বই আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেব।

কোটালীপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার বইতে ত্রুটি রয়েছে। আরো বইতে ত্রুটি রয়েছে বলে বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে খবর পাচ্ছি। বাংলাদেশ ডিজিটাল প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড থেকে বইগুলো সরবরাহ করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। সরবরাহকারীরা ত্রুটিপূর্ণ এসব বই ফিরিয়ে নেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *