অন্যদিকে শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকেরাও আজ সোমবার থেকে আমরণ অনশন শুরু করবেন। দুটি কর্মসূচিই হচ্ছে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের নিবন্ধন পাওয়া সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির ডাকে ওই সব মাদ্রাসার শিক্ষকেরা ১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবস্থানের পর ৯ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশন করছেন।
প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী শনিবার জানিয়েছিলেন, রোববার (গতকাল) তাঁরা মাদ্রাসার শিক্ষকনেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন। তারই প্রেক্ষাপটে আমরণ অনশনের ষষ্ঠ দিনের মাথায় গতকাল সচিবালয়ের পশ্চিম পাশে সরকারি পরিবহন পুল ভবনে অবস্থিত কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগে শিক্ষামন্ত্রী এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সমিতির শিক্ষকনেতাদের তিন দফায় বৈঠক হয়। প্রথমে শুধু প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়। পরে বেলা একটায় মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সমিতির সভাপতি কাজী রুহুল আমিন চৌধুরী ও মহাসচিব কাজী মোখলেছুর রহমানের বৈঠক হয়। এরপর বেলা তিনটার দিকে ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষকনেতা মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আবার বৈঠক করেন। ৩টা ২৮ মিনিটে মলিন মুখে বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন শিক্ষকনেতারা। তাঁরা জানান কোনো আশ্বাস পাননি।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মাদ্রাসাশিক্ষকদের বিষয়টি নিয়ে তাঁরা চেষ্টা করবেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন। তাই শিক্ষকেরা যেন অনশন ভঙ্গ করে বাড়ি চলে যান, সে জন্য অনুরোধ করেছেন। তবে দাবি পূরণের আশ্বাস দেননি বলে জানালেন।
বেরিয়ে যাওয়ার সময় কথা হয় সমিতির মহাসচিব কাজী মোখলেছুর রহমানের সঙ্গে। ক্ষুব্ধ এই শিক্ষকনেতা বলেন, মন্ত্রীর কাছ থেকে তাঁরা কোনো আশ্বাস পাননি। তাই অনশন চালিয়ে যাবেন। সরকার থেকে শিক্ষকদের সামনে গিয়ে স্পষ্ট ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা বাড়ি যাবেন না।
এরপর শিক্ষকনেতারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশনস্থলে যান। সেখানে কাজী মোখলেছুর রহমান বক্তৃতায় বলেন, শিক্ষামন্ত্রী এর আগেও একাধিকবার চেষ্টার কথা বলেছিলেন। তাই এখন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বা শিক্ষামন্ত্রী নিজে এখানে এসে স্পষ্ট ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা অনশন করে যাবেন। তাঁর ভাষায়, জীবন গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে। এ সময় শিক্ষকেরা স্লোগান দিতে থাকেন।
আরও ২০ শিক্ষক অসুস্থ
আমরণ অনশনের যতই দিন যাচ্ছে অসুস্থ হওয়া শিক্ষকের সংখ্যাও বাড়ছে। গতকাল ষষ্ঠ দিনে নতুন করে ২০ জন অসুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে ছয় দিনে মোট ১৬৫ জন অসুস্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা। অসুস্থ শিক্ষকদের মধ্যে চারজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। এ ছাড়া অনশনস্থলেই মোট ৪৫ জনকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। অনশনস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক শিক্ষক স্যালাইন নিয়েই অনশন করছেন। প্রচণ্ড শীতের মধ্যেই রাস্তা ও ফুটপাতে শুয়ে বা বসে আছেন। শিক্ষামন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় তাঁরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ।
এমপিওভুক্তদের আমরণ অনশন আজ থেকে
এদিকে প্রেসক্লাবের মূল ফটকের পূর্ব পাশে লাগাতার অবস্থানরত এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যেও বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের নেতারা। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শিক্ষকেরা খোলা আকাশের নিচে বসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
লিয়াজোঁ ফোরামের উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম বলেন, আজ সোমবার থেকে তাঁরা আমরণ অনশন শুরু করবেন। এতে আরও শিক্ষক কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দাবি পূরণের ঘোষণা ও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ না নেওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শিক্ষকনেতারা বলছেন, শিক্ষা জাতীয়করণ হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই উপকৃত হবেন। বৈষম্য কমবে।