দু’দিন আগে পর্যন্ত তাঁর দেশকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন। তাঁকে ‘রকেট ম্যান’ বলে বহু বার ব্যঙ্গ-বিদ্রুপও করেছেন। কিন্তু এ বার কিছুটা হলেও সুর নরম করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্টের গদিতে বসার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি মার্কিন দৈনিককে কালই একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ট্রাম্প। আর সেখানেই তিনি জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উনের সঙ্গে তাঁর নাকি দারুণ সম্পর্ক।
ট্রাম্প স্পষ্টই বলেছেন, ‘‘অনেকের সঙ্গেই আমার সম্পর্ক দারুণ। শুনলে হয়তো আপনারা চমকে যাবেন। কিম জং উনের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক বেশ ভাল।’’ খোদ ট্রাম্পের মুখ থেকে এমন কথা শুনে গোটা বিশ্বে জল্পনা শুরু হয়েছে তবে কি দীর্ঘ কয়েক দশকের খরা কাটিয়ে উত্তর কোরিয়ার শাসকের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের? ট্রাম্প খোলসা করে কিছুই বলেননি অবশ্য। তবে তাঁর এই মন্তব্যের পরে দু’দেশের সম্পর্কের টানাপড়েন কিছুটা হলেও কমবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
গত বছর জুড়ে একের পর এক পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে আমেরিকার ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলেছেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম। পিয়ংইয়ং থেকে সরাসরি আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকিও দিয়ে রেখেছিলেন তিনি। চুপ করে থাকেননি ট্রাম্পও। গত বছর সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চ থেকে সরাসরি উত্তর কোরিয়াকে ধ্বংস করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ না করার জন্য পিয়ংইয়ংয়ের উপর চেপেছে একাধিক আর্থিক নিষেধাজ্ঞাও। উত্তর কোরিয়ার দীর্ঘ দিনের বন্ধু চিনও শেষ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার প্রশ্নে আমেরিকার পাশেই দাঁড়িয়েছিল। কিমকে ঠেকাতে কোরীয় উপসাগরে দক্ষিণ কোরিয়া আর জাপানকে নিয়ে একের পর এক মহড়াও সেরেছে মার্কিন বাহিনী। কার পরমাণু অস্ত্রের বোতাম কত বড়, সে নিয়েও তরজা চলেছে বিস্তর। তবে কিম জানিয়ে রেখেছিলেন, আমেরিকা আগে থেকে আক্রমণ না করলে তিনি হামলা চালানোর কথা ভাববেন না।
গত বছরের শেষ থেকে সুর নরমও করেন কিম। আমেরিকার পক্ষ নেওয়ার পর থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গেও পিয়ংইয়ংয়ের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল। কিন্তু হঠাৎই দক্ষিণ কোরিয়ায় শীতকালীন অলিম্পিক্সে তাঁর দেশ অংশ নেবে বলে ইচ্ছেপ্রকাশ করেন কিম। দু’বছরের শৈত্য কাটিয়ে ৯ তারিখ আলোচনার টেবিলে বসেন দুই কোরিয়ার প্রতিনিধিরা।
সম্ভবত সেটা দেখেই দু’দিন আগে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ট্রাম্পও। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, দক্ষিণের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয়ে কি আমেরিকার সঙ্গে তাদের দূরত্ব বাড়াতে চাইছেন কিম? ট্রাম্প সাফ বলেছেন, ‘‘আমি হলেও তা-ই করতাম। তবে সবাই তো আর প্রেসিডেন্ট হয় না। প্রেসিডেন্ট এক জনই, সেটা আমি।’’
কিমের প্রশংসা শোনা গিয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখেও। রাশিয়াও দীর্ঘদিনের বন্ধু উত্তর কোরিয়ার। পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জের নেওয়া একাধিক নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের বিরোধিতাও করতে দেখা গিয়েছে ক্রেমলিনকে। কাল পুতিন বলেন, ‘‘কিম যে ভাবে এগোচ্ছেন, তাতে এক অভিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মতো কোরীয় উপসাগরের অস্থিরতা কাটাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন।’’
পাকিস্তান নিয়েও আজ কিছুটা সুর নরম করেছেন ট্রাম্প। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা আশাবাদী, পাকিস্তান তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জঙ্গিদের আমাদের হাতে তুলে দেবে।’’ জঙ্গি দমনে যে অনুদান বন্ধ রেখেছে আমেরিকা, সে সম্পর্কে ট্রাম্পের মন্তব্য, ‘‘আমরা তো সেই টাকা অন্য খাতে খরচ করিনি। দরকারে পাকিস্তানকে আবার দেওয়া যেতেই পারে।’’