চলমান শৈত্যপ্রবাহ আরও এক-দুই দিন থাকতে পারে। দেশের বেশির ভাগ এলাকায় গতকাল শুক্রবার রাত ও ভোরে তাপমাত্রা বাড়লেও দিনে কমেছে। দিনের তাপমাত্রা এক দিনের ব্যবধানে ৩ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গেছে। ফলে দিনেও অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। দিন-রাত ধরে চলা শৈত্যপ্রবাহ দেশের বেশির ভাগ মানুষকে পর্যুদস্ত করে ফেলেছে।
ঘন কুয়াশার কারণে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে সাত ঘণ্টার জন্য বন্ধ ছিল রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথ এবং মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী নৌপথে ফেরি চলাচল।
গতকাল চট্টগ্রাম বিভাগের দু-একটি জেলা বাদে প্রায় পুরো দেশ হাড়কাঁপানো শীতে ছিল জবুথবু। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ বলছে, আরও দুই-এক দিন চলবে শৈত্যপ্রবাহ। আজ শনিবারও দেশের বেশির ভাগ নদীতীরবর্তী এলাকা ও অন্যান্য স্থানে ঘন কুয়াশা থাকতে পারে। দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত চলতে পারে। ফলে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে সমস্যা হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান এ ব্যাপারে বলেন, শৈত্যপ্রবাহটি শুরু হয়েছিল মূলত জেট বায়ু নামে একটি শীতল বাতাসের প্রবাহ ও উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপবলয় একসঙ্গে বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় হয়ে পড়ায়। জেট বায়ুটি বাংলাদেশের ওপর থেকে সরে গেলেও উচ্চ চাপবলয়টি এখনো সক্রিয়। ফলে শৈত্যপ্রবাহটি সক্রিয় রয়েছে এবং এটি আরও এক-দুই দিন থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল এক লাফে তা কমে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে। অন্যদিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও অনেক এলাকায় তা এখনো ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে। একই সঙ্গে বেশির ভাগ এলাকার ওপর মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা ছিল। আর থেমে থেমে ঠান্ডা বাতাসও বয়ে গেছে।
গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল নওগাঁর বদলগাছিতে ৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ ডিগ্রি। দেশের অন্যান্য এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রির নিচে ও সামান্য ওপরে। এসব এলাকায় আজও একই ধরনের তাপমাত্রা থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
কুয়াশায় ফেরি চলাচল বন্ধ
ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল ভোর থেকে ছয় ঘণ্টা রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া এবং মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। এতে দুই নৌপথের উভয় পাশে আটকা পড়ে শত শত যানবাহন।
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, কুয়াশার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ভোররাত সাড়ে তিনটা থেকে এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে উভয় ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া চারটি ফেরি মাঝনদীতে আটকা পড়ে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফেরি চলাচল শুরু হয়।
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) তানভীর হোসেন বলেন, গতকাল ছয় ঘণ্টা ফেরি বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। তবে যাত্রীভোগান্তি কমাতে বাসগুলোকে আগে পারাপার করা হয়।
মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাম হোসেন বলেন, এই নৌপথে ভোর চারটার দিকে কুয়াশার তীব্রতা বেড়ে গেলে দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে ঘন কুয়াশার কারণে উভয় ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া চারটি ফেরি মাঝনদীতে নোঙর করে। গতকাল সকাল ১০টার দিকে কুয়াশা কমে এলে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হয়।