অনাথ, প্রতিবন্ধীদের আশ্রম। কিন্তু তার আড়ালেই চলছিল যৌন নির্যাতন। নেতৃত্বে খোদ সুপারিন্টেন্ডেন্ট সন্ন্যাসী!
আশ্রম থেকে পালানো কিশোরীর অভিযোগ সত্যি হলে ধেমাজি জেলার শ্রী শ্রী সেবাশ্রম আদতে ছিল ছোটখাটো রাম রহিমের ডেরা।
শিলাপাথার বরপাথারে থাকা শ্রী শ্রী সেবাশ্রম থেকে গভীর রাতে একটি মেয়ে পালিয়ে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ভীত, সন্ত্রস্ত মেয়েটির দাবি ছিল, আশ্রমের প্রধান মাধবকৃষ্ণ দেব গোস্বামী তাঁর উপরে তিন বছর ধরে যৌন নির্যাতন চালাচ্ছেন। রাতে সুযোগ বুঝে গোস্বামীকে ধাক্কা দিয়ে সে পালিয়েছে। ঘটনার পরে পুলিশে এফআইআর দায়ের করা হয়। গোস্বামী ও তাঁর দুই সঙ্গী পলাতক।
মেয়েটি সাংবাদিকদের জানায়, আশ্রমে অনাথ ও প্রতিবন্ধী মেয়েদের দু’টি ঘরে বন্ধ করে রাখা হয়। একটির দরজায় তালা দেওয়া থাকে। অন্যটি দড়ি দিয়ে বাঁধা। মাধব গোস্বামী, তাঁর শ্যালক দীপঙ্কর চেতিয়া ও অন্য সঙ্গী শ্যামল গগৈরা মেয়েদের বাছাই করে রাতে গোস্বামীর কাছে নিয়ে যায়। চলে যৌন নির্যাতন। মেয়েটি বলে, ‘‘তিন মাস ধরে আমার উপরে অত্যাচার চলছিল। আমায় মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল ওরা। দু’দিন আগে আমার দুই বান্ধবী হোম থেকে পালিয়েছে। সে দিন পায়ে ব্যথা থাকায় আমি পালাতে পারিনি। গত কাল দরজা খুলে আমায় নিয়ে যাওয়ার সময় ওদের ধাক্কা মেরে পালাই। ভিতরে আমার মতো আরও অনেক মেয়ে আটকে রয়েছে।’’ প্রতিবেশী মহিলা জানান, আশ্রম থেকে মেয়েদের চিৎকারের আওয়াজ আসত। রাতে একটি মেয়ে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছিল। দরজা খুলতেই সে বলতে থাকে, ‘‘আমায় রক্ষা কর।’’ পরে আশ্রমের ভিতরের কথা আমাদের জানায় মেয়েটি।
পুলিশ-প্রশাসন, চাইল্ডলাইনের সঙ্গে বরাবর সুসম্পর্ক রেখে চলা মাধবকৃষ্ণ গোস্বামীর আশ্রমে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরকার, পুলিশ, আধা সেনা কর্তারা আসতেন। রাজ্যপাল জগদীশ মুখীর সঙ্গে তোলা ছবি মাধবকৃষ্ণের ফেসবুক প্রোফাইল ছবি। কিন্তু সেই আশ্রমে যে এমন কাণ্ড চলত তা ভাবতেই পারছে না পুলিশ-প্রশাসন বা শিশু সুরক্ষা কমিটি।
রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনীতা চাংকাকতি বলেন, ‘‘পুলিশের পাশাপাশি আমরা নিজেদের মতো করেও তদন্ত চালাব। মেয়েটির জবানবন্দি নেওয়া হবে। ঘটনাটি সত্য হলে খুবই আশঙ্কার কথা।’’ পুলিশ সুপার নীলেশ স্বর্গাকারে জানান, মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হবে। তার ভাষ্য নথিভুক্ত করা হচ্ছে। অভিযুক্ত মাধবকৃষ্ণ গোস্বামী ও তাঁর সঙ্গীরা পলাতক। এ দিকে পুলিশ গোস্বামীকে পলাতক বলে দাবি করলেও, মাধবকৃষ্ণ এ দিন সাংবাদিকদের একাংশের কাছে দাবি করেন, তিনি নির্দোষ। এলাকার কিছু ব্যক্তি তাঁর কাছে টাকা দাবি করেছিল। টাকা না পেয়েই ওই কিশোরীকে কাজে লাগিয়ে তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। ওই দুষ্টচক্র আশ্রম বন্ধ করে দিতে চাইছে। গোস্বামীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে এ দিন এলাকায় মিছিল বের হয়। ধেমাজির জেলাশাসক রোশনি করাতি জানান, ঘটনাটি নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা শিশু সুরক্ষা অফিসারকে ওই আশ্রমের আবাসিকদের তদারক ও কাজকর্ম তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সুত্রঃ আনন্দবাজার