গত ২ জানুয়ারি ভোররাতে কোনো উপন্যাস বা থ্রিলার মুভির ভিলেনের মতো হাতে একটি রড নিয়ে বের হন ধনেশ ধনকাদ। বয়স ৪৩ থেকে ৪৫ এর মধ্যে। অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা মাত্র ১ ঘণ্টার মধ্যে ৬ জনকে লোহার রড দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক এই লেফটেন্যান্ট হরিয়ানা কৃষি বিভাগে চাকরি করতেন। ভারতে সাড়া ফেলে দেওয়া ঘটনাটি ঘটে রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণের পালওয়াল শহরে। সেখানে উচ্চ সতর্কতা জারি করেছিল কর্তৃপক্ষ। হাতপাতালে এক নারীকে খুনের পর আগ্রা রোডে আরো ৫ জনকে হত্যা করেন। পরে অবশ্য পুলিশ তাকে হামলার মুখে ধরতে সক্ষম হয়েছে। তবে সবার মনের প্রশ্নটা হলো, কে এই নরেশ ধনকাদ?
পড়াশোনায় খুবই ভালো ছিলেন, বক্সিং চ্যাম্পিয়নের খেতাব অর্জন বা থিয়েটারে কাজের সুনামও ছিল তার
হিন্দুস্তান টাইমস তার সম্পর্কে নতুন কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে। এগুলো জেনে নেওয়া যাক।
১. মনোবিশেষজ্ঞদের মতে, নিঃসন্দেহে নরেশ ধনকাদ হলেন কোনো হরর মুভির পর্দা থেকে বাস্তবে আসা ‘সাইকো কিলার’। তার বয়স ৪৩। তার স্ত্রী সীমা। তিনি কখনই বুঝতে পারেননি যে তার স্বামীর মনে এমন ভয়ংকর পরিকল্পনা রয়েছে। এই রোমহর্ষক ঘটনার দিন দুপুরে তিনি স্ত্রীকে একটি সালওয়ার কুর্তা কিনে দেনে। সীমার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর থেকেই তিনি মনোচিকিৎসকের অধীনে ছিলেন।
২. নরেশ একজন বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। থিয়েটারেও পারফর্মার হিসেবে পরিচিতি পান। পড়াশোনার ভালো ছিলেন। হিসার অ্যাগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটিতে নিজের ব্যাচে প্রথম হয়েছিলেন তিনি।
৩. পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। ১৯৯৯ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন নরেশ। কিন্তু লেফটেন্যান্ট হিসেবে ৩ বছরের চাকরিতে থাকতে পারেননি। কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিসেস পরীক্ষায় প্রথম দফাতেই বাদ হয়ে যান।
৪. পারিবারিক ঝামেলায় সীমা তার বাবার বাড়িতেই থাকতেন। মাঝে মাঝে শ্বশুর বাড়িতে যেতেন তিনি। ছেলেকে দারুণ ভালোবাসতেন। বড় একটা বাক্সভর্তি ফল নিয়ে ছেলেকে দেখতে যেতেন। কিন্তু তাকে শ্বশুরবাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হতো না। এ ঘটনার মাস ছয়েক আগেও তিনি এক প্রতিবেশীকে ইট দিয়ে আঘাত করেন।
৫. তিনি প্রায় সময়ই নির্মম হয়ে উঠতেন। অনেকের সঙ্গেই বাজে আচরণ করেছেন এবং মারমুখী হয়ে উঠতেন।
৬. পালওয়াল শহরে মাত্র ৪০০ মিটারের মধ্যেই ৫ জনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের সবারই মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।
৭. যে এক নারীকে হত্যা করা হয়েছে তার দেহটা রক্তে ভাসছিল। তার মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়। পালওয়াল হাসপাতালের অপেক্ষমানদের লবিতে বসেছিলেন তিনি।
ওইদিন অন্তসত্ত্বা ননদকে ভর্তি করিয়ে অপেক্ষা করছিলেন পঁয়ত্রিশের বছরের অঞ্জুম। হঠাৎ তার ওপর লোহার রড নিয়ে হামলা চালায় বছর নরেশ ধনকাদ। পিটিয়ে হত্যার পর অঞ্জুমের লাশ হাসপাতালের ওয়াশরুমে লুকিয়ে রাখে। এরপর হাসপাতালেই রড নিয়ে মিনিট পাঁচেক ঘুরে বেড়ায় সে।
কিন্তু রাতের হাসপাতালে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকায় হাসপাতালে কেউই সাহস করে খুনিকে ধরতে এগিয়ে আসেনি। পরে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে সে। পুলিশকে খবর দেওয়ার পর খুনির অবস্থান বুঝতেই কিছুটা সময় কেটে যায়। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শেষপর্যন্ত সকাল সাড়ে ৬টার দিকে খুনিকে গ্রেপ্তার করে হরিয়ানা পুলিশ।