ডিআইজি মিজানকে নিয়ে তোলপাড়

Slider সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী সারাদেশ
image-3801-1515265045

 

 

 

 

 

ঢাকা: তরুণীকে তুলে নিয়ে এসে অস্ত্রের মুখে বিয়ে করা ডিআইজি মিজানুর রহমানকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। জোর করে বিয়ে ও সম্পর্ক গোপন রাখার অভিযোগে প্রত্যাহারের পর তাকে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল ডিএমপির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যত বড় কর্মকর্তাই হোন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তিনি যদি এমন গর্হিত কাজ করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে আইজিপির নেতৃত্বে শিগগিরই তদন্ত কমিটি গঠিত হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

সোমবার পুলিশ সপ্তাহ শুরুর পর থেকেই রাজারবাগে সাংবাদিকসহ অনেকেই খুঁজতে থাকেন এই ডিআইজিকে। তবে রাজারবাগের অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন সব কর্মকর্তা উপস্থিত থাকলেও দেখা যায়নি অতিরিক্ত কমিশনার মিজানকে। তাকে দেখেছেন, এমন কোনো তথ্য কোনো পুলিশ কর্মকর্তা দিতে পারেননি। গতকালও রাজারবাগ ও ডিএমপিতে তার কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি ।

যে মুহূর্তে দেশসেরা কাজের মাধ্যমে বিপিএম-পিপিএম পদক প্রাপ্তির গৌরবে পুলিশ বিভাগ প্রশংসায় আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে, পুরস্কৃত পুলিশ সদস্যরা দেশের জন্য নিজের জীবনবাজি রাখার আনন্দে উদ্ভাসিত। ঠিক সেই মুহূর্তেই ডিআইজি মিজানের নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা গোটা পুলিশ বিভাগকে হকচকিত করে দেয়। পুলিশের বার্ষিক অনুষ্ঠান ‘পুলিশ সপ্তাহের’ আনন্দঘন পরিবেশও অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। উচ্চপদস্থ একজন পুলিশ কর্মকর্তার চারিত্রিক বেলেল্লাপনা, ক্ষমতার অপব্যবহার, আইনকে তোয়াক্কা না করাসহ ভুক্তভোগী নারীকে নির্যাতন ও মামলা হয়রানি চালানোর কাহিনী জনমনে চরম ক্ষোভের জন্ম দেয়।

ডিআইজি মিজানকে নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় চলাকালেই যশোরের আবাসিক হোটেলে আরেক নারী এএসআই ধরা পড়ার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে এমপিপুত্রের সঙ্গে একই কক্ষে অবস্থান করার অপ্রীতিকর ঘটনায় তাকে আটক করা হয়েছে। সমাজ হিতৈষীদের মতে এসব ঘটনা পুলিশের প্রতি আস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অবশ্য পুলিশ সদর দফতরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেছেন, দুই-চারটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে গোটা পুলিশ বিভাগকে দায়ী করা ঠিক নয়। কারও ব্যক্তিগত অপরাধ অপকর্মের দায়-দায়িত্ব গোটা পুলিশ বিভাগ কেন নেবে!

নারীপ্রীতি, বিকৃত যৌনাচার

ডিআইজি মিজানের নারীপ্রীতি, বিকৃত যৌনাচার, নিপীড়ন-নির্যাতনমূলক কার্যকলাপ নিয়ে গুঞ্জন এখন মানুষের মুখে মুখে। তার সহপাঠীরা জানিয়েছেন, চলনে বলনে নরম স্বভাব, ভালো চরিত্র প্রদর্শন করলেও মিজান আগাগোড়াই ধূর্ত টাইপের। অভিনয়ে পাকা মিজান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালেও একই সঙ্গে তিন তিনটি মেয়ের সঙ্গে লীলা করে বেড়াতেন। তিন প্রেমিকা জোট বেঁধে একসঙ্গে টিএসসিতে হাজির হয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের সামনেই তাকে চরম নাজেহাল করেছিল। বিসিএস করাকালেও শিক্ষা ক্যাডারের এক সুন্দরী মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় উত্তম মধ্যমের শিকার হন তিনি। পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকায় পোস্টিং পাওয়ার পরও তার এক ডাক্তার বন্ধুর সহযোগিতায় মেডিকেলের এক ছাত্রীকে প্রেমের অভিনয়ে দীর্ঘদিন ভুগিয়েছেন। তাকে নিয়ে দেশের বিভিন্ন পর্যটন রিসোর্টে যাওয়া, অবস্থান করা এবং ধানমন্ডিতে ফ্ল্যাট ভাড়া করে বসবাসেরও অভিযোগ ওঠে। সিলেটে মহানগর পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব পালনকালেও লন্ডন প্রবাসী এক ধনাঢ্য পরিবারে অহরহ যাতায়াত ও দৃষ্টিকটু অবস্থানের কথা চাউর আছে। সেখানে এক নারীর সঙ্গে প্রেম ঘনিষ্ঠতা থাকার কথা আলোচনায় উঠলে কথিত প্রেমিকাকে বাদী সাজিয়ে সিলেটের এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকিয়েছেন। এ সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই সিনিয়র সাংবাদিককে গ্রেফতার করাসহ নানাভাবে নাজেহাল করে ছাড়েন তিনি।

নিজের স্ত্রী-সন্তান থাকার পরও ব্যাংকে চাকরিরত মরিয়ম আক্তার ইকোকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে বিয়ে করে বন্দীদশায় রাখাসহ নিয়মিত নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে। ইকোর দেওয়া সাক্ষাৎকার সূত্রে জানা যায়, ডিআইজি মিজান একজন বিকৃত যৌনাচারের ব্যর্থ পুরুষ। তিনি পছন্দের মেয়েদের তার কব্জায় নিয়েই চেতনানাশক ওষুধের প্রয়োগে অজ্ঞান করতেন। এরপর তার ওপর বিকৃত অত্যাচারে মেতে উঠতেন। মিজান যৌনশক্তিবর্ধক ভায়াগ্রা ও অন্যান্য ওষুধ সেবন করতেন বলেও জানিয়েছেন ইকো। মেলামেশাকালেও মিজান নারীদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে বিকৃত সুখ উপভোগ করতেন। সর্বত্রই মিজান দাপুটে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে জাহির করতেন এবং যে কাউকে হুমকি-ধমকি দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করতেন না।

মিজানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক পুলিশ সদস্য জানান, বিভিন্ন উৎস থেকে প্রচুর টাকা-পয়সা পেতেন তিনি। এসব টাকার সিংহভাগই ব্যয় হতো নারীদের পেছনে। নারী সঙ্গতে সন্তুষ্ট এই পুলিশ কর্মকর্তা সিলেটে চাকরিরত অবস্থায়ও দু-তিন দিনের ব্যবধানে ঢাকায় আসা-যাওয়ায় কোনো ক্লান্তি ছিল না তার। ইকোকে বিয়ে করে ৫০ হাজার টাকা মাসিক ভাড়ার ফ্ল্যাটে রাখলেও একই সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আরেক মেয়েকে কর্ণফুলী গার্ডেন সিটিতে ফ্ল্যাট ভাড়ায় রাখতেন। ওই ফ্ল্যাটের মাসিক ভাড়া ৬০ হাজার টাকা বলে জানা গেছে। ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা গোপন দুটি ফ্ল্যাটেই প্রতি মাসে আড়াই লক্ষাধিক টাকা কীভাবে ব্যয় করতেন? সমাজ হিতৈষীরা সেই রহস্যভেদ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *