২০১৮ ভোটের বছর। বছরের শুরুতে তীব্র শীতেও বইছে নির্বাচনী হাওয়া। এই ভোটের বছরেই মাথা তুলে দাঁড়াবে সরকারের অগ্রাধিকার, জনবান্ধব ও বহুল কাঙ্ক্ষিত অনেক অবকাঠামো। বিশ্বব্যাংককে বাদ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে শুরু করা দেশের সবচেয়ে বড় পদ্মা সেতু পুরো পেখম মেলবে এ বছর। রাজধানীর যানজট নিরসনে নেওয়া ২২ হাজার কোটি টাকার বড় প্রকল্প ঢাকা মেট্রো রেল দৃশ্যমান হবে এ বছরই। জাপানের অর্থায়নে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগামী ২৫ জানুয়ারিই উদ্বোধন করার কথা। চীনের অর্থায়নে পটুয়াখালীর পায়রায় এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ চলছে জোরেশোরে। আসছে বছরের মাঝামাঝি সময়েই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে আসতে পারে। বাগেরহাটের রামপালে ভারতের অর্থায়নে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এরই মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের কাজ শেষ হয়েছে। মূল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনায় আরো যেসব অবকাঠামো লাগবে সেগুলো উন্নয়নের জন্য নেওয়া এক হাজার ১২৮ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজও এ বছর শেষ করার কথা বলছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। আর এসব তথ্য জানা গেছে সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দশটি মেগা প্রকল্প নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তৈরি করা সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে।
এশিয়া মহাসড়কের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করে পাশে সার্ভিস লেন রেখে দুই লেন থেকে মহাসড়কগুলো চার লেন করা হচ্ছে। এ বছরই দৃশ্যমান হবে দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঢাকার সঙ্গে উত্তরের ১৬ জেলার সড়ক যোগাযোগের অবলম্বন জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল চার লেন। প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৫১ শতাংশ। দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ। ঢাকায় এরই মধ্যে উড়াল অবকাঠামো ডানা মেলে উড়ছে। সর্বশেষ মগবাজার-মালিবাগ উড়াল সেতু চালু হয়েছে। নতুন করে ঢাকার মিরপুরের কালশি থেকে শতাব্দী মোড় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটারের একটি উড়াল সড়কের কাজও শুরু করেছে সরকার। বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বে অবকাঠামো উন্নয়ন সূচকে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র বলছে, বড় বড় প্রকল্পের দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য সরকার দশটি মেগা প্রকল্পকে ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত করে। এসব প্রকল্পে কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি হলে সঙ্গে সঙ্গে যাতে তার সমাধান করা যায়, সে জন্য গঠন করা হয়েছে উচ্চপর্যায়ের কমিটি। দশটি প্রকল্পের মধ্যে বেশির ভাগ প্রকল্পই সঠিক পথে রয়েছে। তবে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ রাজনৈতিক কারণে পিছিয়ে পড়েছে। এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানও বলছেন, ‘অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোকে আমরা বিশেষ নজর দিয়েছি। আলাদা যত্ন করি। এসব প্রকল্পে টাকার যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সেদিকে সার্বক্ষণিক সরকারের মনোযোগ রয়েছে।’
পদ্মা সেতু : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সেতুর কাজ শেষের দিকে নিয়ে যেতে চায় সরকার। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পর্যন্ত সোয়া ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ দোতলা সেতুর অগ্রগতি ৫২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা সংযোগ সড়ক এবং সার্ভিস এরিয়ার কাজ শেষ। ৩০ সেপ্টেম্বর জাজিরা অংশে বসানো হয়েছে সেতুর প্রথম স্প্যান। আরো দুটি স্প্যান বসানোর প্রস্তুতি চলছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের কালের কণ্ঠকে বলেন, কাজ চলছে নির্দিষ্ট লক্ষ্য সামনে রেখে। সেতু বিভাগের অধীন প্রকল্পের মাওয়া ও জাজিরায় মূল সেতুর পাইলিং কাজ ও নদীশাসনের কাজ চলছে। শরীয়তপুরের জাজিরা এলাকায় প্রায় ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের সংযোগ সড়ক এখন দর্শনার্থীদের চোখ কেড়ে নেয়। পুরো প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা।
পদ্মা রেল সংযোগ : ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ভাঙ্গা, নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। রেলপথ মন্ত্রণালয় এটি বাস্তবায়ন করছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের ঢাকা সফরকালে এ প্রকল্পে অর্থায়ন চুক্তি হয়েছিল। চীন ঋণ দেবে ২৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি অর্থ সরকারি তহবিল থেকে সংস্থান করা হবে। রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, চীনের কাছ থেকে ঋণ পেতে চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হবে দ্রুত সময়ের মধ্যে। রেলের জন্য মাওয়া ও শরীয়তপুর অংশে যারা বাড়িঘর হারিয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এ ছাড়া প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের কাজও চলছে পুরোদমে। প্রকল্পের বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজও এগিয়ে চলেছে। জানা গেছে, গত ২৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ইআরডির কাছে চিঠি পাঠিয়ে চীনা কর্তৃপক্ষকে দ্রুত চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর শিগগিরই এই প্রকল্পের চুক্তির বিষয়ে চীন সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
মেট্রো রেল : রাজধানীতে মাথার ওপর দিয়ে ছুটে চলবে একের পর এক ট্রেন। উত্তরা থেকে পল্লবী হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়াল রেলপথ দাঁড়াবে খুঁটির ওপর। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও অংশে খুুঁটি বসানোর আনুষঙ্গিক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মিরপুর অংশে আগারগাঁও থেকে তালতলা, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় চলছে স্বপ্নের প্রথম মেট্রো রেলের কাজ। প্রকল্প কর্মকর্তারা আশা করছেন, ছয় মাসের মধ্যে তা দৃশ্যমান হতে শুরু করবে। উত্তরা-আগারগাঁও রেলপথ ২০১৯ সালের মধ্যে চালু করা সম্ভব হবে বলে তাঁরা মনে করছেন। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে প্রকল্পে। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দেবে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা জাইকা। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্য বলছে, ২২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আর্থিক অগ্রগতি প্রায় ১৫ শতাংশ। ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে এই রেলপথ। রেলপথে স্টেশন থাকবে ১৬টি, থাকবে ২৪ সেট ট্রেন।
আটটি অংশে ভাগ করে কাজ চলছে। প্রকল্পের থাইল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইটালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কম্পানি ২, ৩ ও ৪ নম্বর অংশ বাস্তবায়ন করছে। অংশ-২-এর আওতায় উত্তরার দিয়াবাড়ীর ষোলোহাটিতে ডিপো তৈরি করা হচ্ছে। নির্মাণ করা হবে বিরতিতে ট্রেন রাখার স্থান স্ট্যাবলিং ইয়ার্ড, ট্রেন মেরামত ও ওভারহোলিংহের মালামাল রাখার গুদাম, কারখানা, ট্রেন পরিচালনার কেন্দ্র, পরিদর্শন, জেনারেটর ভবন, ট্রেন পরিষ্কার রাখার স্থাপনা, বহুতল গাড়ি পার্কিং। উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার উড়াল সড়ক ও ৯টি স্টেশন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, উত্তরায় মাটি ভরাটসহ বিভিন্ন কাজের অগ্রগতি প্রায় ৭০ শতাংশ। ট্রেন ও ডিপোর সরঞ্জামাদি কিনতে জাপানের কাওয়াসাকি মিতসুবিসির সঙ্গে ক্রয়চুক্তি হয়েছে এরই মধ্যে।
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র : কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে জাপান সরকারের ঋণে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল নির্মাণকাজ প্রকল্প এলাকায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। সোনাদিয়ায় নয়, বরং এখন এই মাতারবাড়িতেই একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে চায় সরকার। এমন কথাই জানালেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩৬ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে জাপান সরকার ঋণ দেবে ২৯ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জোগান দেওয়া হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়ে সেটি জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশাবাদ বিদ্যুৎ বিভাগের।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র : ইউনেসকোর আপত্তি ও পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের মধ্যেই চলছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ। প্রকল্পের অর্থায়ন ও ঠিকাদার দুটোই ঠিক হয়ে গেছে। ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়নের কাজও সেরে ফেলেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ১৬ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে দুই হাজার ২৭০ কোটি টাকা। সার্বিক অগ্রগতি ৫ শতাংশ। আগামী দুই বছরের মধ্যে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কম্পানি (এনপিটিসি)।
পায়রা হবে বিদ্যুৎ অঞ্চল : ভবিষ্যতে পটুয়াখালীর পায়রা হবে দেশের বিদ্যুতের অন্যতম হাব বা অঞ্চল। পায়রায় সব মিলিয়ে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। পায়রায় চীনের অর্থায়নে এখন চলছে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ৩১ শতাংশের কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। কেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে ২০১৯ সালের এপ্রিলে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে আগামী পাঁচ বছরে বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে ১২ হাজার মেগাওয়াট। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র হাব জোগান দেবে ৯ হাজার মেগাওয়াট। এ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে এলে পাল্টে যাবে গোটা দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল। খুলনায় মৃত শিল্পাঞ্চল প্রাণ ফিরে পাবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করা গেলে পায়রা বন্দরকে ঘিরে নতুন নতুন শিল্প-কারখানাও গড়ে উঠবে বলে মনে করছে সরকার।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র : গত ৩০ নভেম্বর দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে দেশের মানুষের ৫৭ বছরের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। চুল্লির মূল নির্মাণকাজ চলছে দ্রুতগতিতে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে রাশিয়া সরকার ঋণ দিচ্ছে ৯০ হাজার কোটি টাকার মতো।
আরো কিছু উন্নয়নযজ্ঞ : এ ছাড়া উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ সহজ করতে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে বাংলাদেশ সেতু বিভাগ। বিমানবন্দর সড়ক থেকে আশুলিয়ার ইপিজেড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে এটি। এটি চালু হলে ঢাকার সঙ্গে ৩০টি জেলার সংযোগ স্থাপনকারী আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া-চন্দ্রা মহাসড়কে যানজট কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি নির্মাণ করবে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)। ব্যয় হবে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। চার বছরে এটির কাজ শেষ হবে।
চার লেন উন্নয়ন পর্ব : ঢাকা-চট্টগ্রাম ও জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এবার গুরুত্বপূর্ণ সব মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়নের পর্ব শুরু হয়েছে। এশীয় মহাসড়কের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করতে মহাসড়ক নির্মাণে এখন থেকে দেশে যেসব চার লেন নির্মাণ করা হবে সেগুলোয় মূল মহাসড়কের পাশে হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা লেন থাকবে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পদ্মা সেতু চালুর পরপরই ব্যবহারের জন্য নেওয়া হয়েছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন প্রকল্প। এটি দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। ধীরগতির যানবাহনের জন্য তাতে থাকবে আলাদা লেন। মহাসড়ক হবে ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। ব্যয় হবে ছয় হাজার ৮৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। কয়েক দিন আগে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কেরানীগঞ্জ থেকে শুরু করে মাওয়া অংশে প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নের কাজ চলছে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে দ্রুত সড়ক যোগাযোগের জন্য কুমিল্লার ময়নামতি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধরখার পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার চার লেন মহাসড়ক নির্মাণ করা হবে। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। ধীরগতির যানবাহনের আলাদা সার্ভিস লেন থাকবে তাতে। প্রকল্পের জন্য ভারত থেকে তিন হাজার আট কোটি ৩৫ লাখ টাকা ঋণের প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশের পুরনো মহাসড়ক ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার চার লেন নির্মাণে দিন-রাত কাজ চলছে। প্রকল্পে ব্যয় হবে পাঁচ হাজার ৯৯৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে দেশে প্রথমবারের মতো ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনের সংস্থান রেখে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মোড় থেকে নাটোরের বনপাড়া মোড় পর্যন্ত ৫১.২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ দুই লেনের জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল। বর্তমানে ৩৯৪ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কের উভয় পাশে একস্তর নিচু দিয়ে পৃথক সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ এগিয়ে চলেছে। ২০১৬ সালে নেওয়া হয়েছে এলেঙ্গা-রংপুর চার লেন প্রকল্প। এটিরও কাজ চলছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।