মেয়েশিশুটির নাম জানা নেই। কথাও তেমন একটা বলতে পারে না। বয়স আনুমানিক সাড়ে তিন বছর। বসে ছিল ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টারের একটি চেয়ারে। সকাল থেকেই শিশুটিকে চোখে পড়ছিল মেডিক্যালে কর্মরতদের। শিশুটির পাশেই ছিল একটি কাপড়ের ব্যাগ। সকাল থেকেই ওই চেয়ারে বসেই কাঁদছিল শিশুটি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, এরপর রাত কিন্তু খোঁজ মেলেনি কোনো স্বজনের। কেউ খোঁজও করেনি শিশুটির।
শিশুটি তখন কেঁদেই চলছে। উপস্থিত লোকজনের কেউই তার কান্না থামাতে পারছিলেন না। কেউ কোলে নিয়ে আদর করছেন। কেউ জুস দিয়ে কাছে নিতে চাইছেন। কিন্তু কিছুতেই কান্না থামছে না। ঘটনাটি গত সোমবারের। জরুরি বিভাগে উপস্থিত কেউ কেউ মেডিক্যাল চত্বরে শিশুটির স্বজনদের খোঁজ করছেন। কেউ বলছেন, হয়তো মেয়েটিকে ফেলে রাখার জন্যই ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে রেখে যাওয়া হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, কোন রোগীর স্বজনেরা মেয়েটিকে ভুলে রেখে গেছেন। যদি কেউ ভুলেও রেখে যান তাহলে মেয়েটির খোঁজ নিতে তো ঢাকা মেডিক্যালে আসার কথা। গতকাল পর্যন্ত মেয়েটির খোঁজে কেউ আসেননি ঢাকা মেডিক্যালে। অবশেষে কন্যাশিশুটির ঠাঁই হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২০৭ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে।
এ দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসিরউদ্দিনের নির্দেশে গত সোমবার রাতেই শিশুটিকে ওই ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানেই শিশুটিকে দেখাশোনা ও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে এ কে এম নাসিরউদ্দিন জানান, যেহেতু শিশুটির স্বজনকে এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সেহেতু রাতেই তাকে একটি ওয়ার্ডে রাখা হয়। শিশুটি কোনো রোগে আক্রান্ত না হলেও সম্ভবত কিছুটা প্রতিবন্ধী। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিস্তারিত জানা যাবে। তবু তাকে ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনে শিশুটিকে মা ও শিশু নিবাসে রাখা হবে। তবে আপাতত সে ওয়ার্ডেই থাকবে বলে জানান পরিচালক।
এ ছাড়া হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তারা যেন শিশুটির স্বজনদের খুঁজে বের করেন। এ ছাড়া শিশুটির স্বজনদের খোঁজে মাইকিং করা হয়েছে বলেও জানান পরিচালক।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টারের কর্মচারী ও কাউন্টারে বসে থাকা বিভিন্ন রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে জানা গেছে, বিকেল ৪টার পর থেকেই শিশুটি চেয়ারে বসে কাঁদছিল। শিশুটির সাথে একটি কাপড়ের ব্যাগ রয়েছে। ব্যাগের ভেতর শীতের কয়েকটি পোশাক ছিল।
ঢাকা মেডিক্যাল পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী ইনচার্জ বাবুল মিয়া জানান, শিশুটির ডান পা সামান্য বাঁকা। এখনো কোনো স্বজন তার খোঁজে আসেননি। শিশুটিকে ইচ্ছে করেই ফেলে গেছেন বলে আমাদের মনে হচ্ছে। শাহবাগ থানায় শিশুটির বিষয়ে জানানো হয়েছে।