ভর্তি পরীক্ষায় বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে তাঁরা ৩০-এর মধ্যে ২৭ বা ২৮ করে পেয়েছেন। বাংলাতেও প্রচুর নম্বর। কিন্তু ইংরেজি ভালো করতে পারেননি। কারণ, ফাঁস হওয়া প্রশ্নের ইংরেজি অংশের ঠিকমতো সমাধান করা যায়নি। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ৩০-এর মধ্যে থাকলেও তাঁরা কাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলো পাননি।
গত রোববার গভীর রাতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য পেয়েছে। এই দুজন সিহাব হাসান খান ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ও সালমান এফ রহমান সমাজকল্যাণ বিভাগে পড়েন। তাঁরা ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র পেয়েছিলেন। এই নিয়ে এখন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির দুটি চক্রের মোট ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাস বলেন, রোববার দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে ওই দুই ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়ে ওই দুজন পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। তাঁদের প্রতিজনের কাছ থেকে ৪ লাখ করে টাকা নিয়ে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন হাতে তুলে দিয়েছিলেন নাটোর জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান। রাকিবুলকে ১২ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
সিআইডি সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসের কর্মী সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে প্রশ্ন পান ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল। এরপর তিনি ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে ২২ জন শিক্ষার্থীকে সাভারের পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় তাঁর বোনের বাড়িতে নিয়ে রাখেন। সেখানেই ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সমাধান তাঁদের মুখস্থ করানো হয়। ওই ২২ জনের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪ লাখ করে টাকা নিয়েছিলেন রাকিবুল। রোববার গ্রেপ্তার হওয়া সিহাব ও সালমান ওই ২২ জনের মধ্যে দুজন। ওই দুজন ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে তাঁদের সঙ্গে থাকা ২২ জনের মধ্যে ১৬ জনের নাম সোমবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন।
সিআইডির কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় সিহাব বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ২৮ দশমিক ৫০, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ২৭ দশমিক ৩০ ও বাংলায় ২৫ দশমিক ১০ নম্বর পান।
কিন্তু ইংরেজিতে ৩০-এর মধ্যে পেয়েছিলেন মাত্র ১০। যার কারণে ‘ঘ’ ইউনিট থেকে ভর্তি পরীক্ষায় ৯২ দশমিক ১০ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকায় ১৪তম স্থান নিয়েও ওপরের সারির বিষয়গুলো পাননি সিহাব। কারণ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ বা সমাজবিজ্ঞান অনুষদের আইন, অর্থনীতির মতো ওপরের সারির বিষয়গুলোতে পড়তে হলে ইংরেজিতে অন্তত ১৬ পেতে হয়। পরে ইসলামিক স্টাডিজে ভর্তি হন সিহাব। অন্যদিকে সালমান ‘ঘ’ ইউনিট থেকে মেধাতালিকায় ২৬তম হয়েও ওপরের সারির কোনো বিষয় পাননি। তিনি ইংরেজিতে পেয়েছিলেন ১২।
গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্ররা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, পরীক্ষার আগের রাতে অন্য বিষয়গুলো সমাধান করতে পারলেও ইংরেজি ঠিকমতো সমাধান করতে পারেননি।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, এসব জালিয়াত চক্র এবং জালিয়াতি করে পরীক্ষা দেওয়া প্রত্যেককে শনাক্ত করে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। আরও তদন্ত চালিয়ে যাবে সিআইডি।