প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্ব করতে মংডুতে মাইন বিস্ফোরণ নাটক

Slider বিচিত্র

283437_16

 

 

 

 

মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে প্রতিনিয়ত গুলিবর্ষণসহ উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে রোহিঙ্গাদের কোণঠাসা করে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করছে। রোহিঙ্গা পল্লীগুলোতে সেনাদের টহল ও তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে।  গত শুক্রবার সকালে মংডুতে স্থলমাইন বিস্ফোরণের কারণ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ও ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে। রাখাইনের মংডু শহরের অদূরে স্থলমাইন বিস্ফোরণে পাঁচ সেনাসদস্য আহত হওয়ার খবরকে রোহিঙ্গা পল্লীতে নতুন করে অভিযান চালানো ও বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করতেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মংডুতে এ বিস্ফোরণ নাটক করছে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, উত্তর রাখাইনে যে ক’টি রোহিঙ্গা পল্লী অক্ষত রয়েছে সেগুলো অবরোধ করে রেখেছে সেনারা। কোনো রোহিঙ্গা গ্রামের বাইরে যেতে পারছে না। এমনকি হাটবাজারে কেনাকাটা ও চিকিৎসা নিতেও বাইরে যেতে মানা। প্রতিদিন সেনাসদস্যরা রোহিঙ্গা গ্রামে সারিবদ্ধভাবে টহল দিচ্ছে। টহল দেয়ার সময় ক’জন রোহিঙ্গাকে আটকও করেছে তারা। ফলে গ্রামগুলোতে গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পুরুষরা ঘর ছেড়ে খামার বাড়ি ও পাহাড়ে আত্মগোপন করেছেন।

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী শহর মংডুর আশপাশে রোহিঙ্গা পল্লীগুলোতে সেনাদের টহল ও তল্লাশি জোরদার করেছে। মংডু এলাকার খায়ের পাড়া, জামতলী, কোনাপাড়া, হরিতলা, জুলাপাড়া ও তুম্বুতে ভারী অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে সেনাসদস্যরা মহড়া দিতে দেখেছে রোহিঙ্গারা। এ সময় আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা ঘর ছেড়ে পালিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, তমব্রু সীমান্ত এলাকা থেকে দুই রোহিঙ্গা কিশোরকে ধরে নিয়ে গেছে টহলরত সেনারা। সীমান্তের একেবারে জিরো পয়েন্টে থাকা রোহিঙ্গাদের ঘিরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রতিনিয়ত গুলিবর্ষণসহ উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ায় সীমান্তে সঙ্ঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় চলতি মাসেই তাদের আশ্রয় শিবিরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজিবি।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শুরুর দিকে বিজিবির বাধার মুখে বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, তমব্রু চাকমার কূল সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থান নেয় হাজার হাজার রোহিঙ্গা।

তাৎক্ষণিকভাবে উখিয়ার কুতুপালং এবং বালুখালী আশ্রয় শিবিরে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ার পাশাপাশি নানা জটিলতার কারণে নো-ম্যান্স ল্যান্ডই হয়ে ওঠে তাদের আশ্রয়কেন্দ্র। কিন্তু অবস্থানরত এসব রোহিঙ্গাকে ঘিরেই নানা ধরনের উসকানিমূলক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং মগরা এ রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করে তাই খুব ভয় লাগে। আমাদের ওপারে যেতে দেয় না সে দিন পাঁচ-ছয়জন যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে নিতে প্রথম থেকেই মিয়ানমার সেনাবাহিনী সীমান্তের খুব কাছাকাছি এসে গুলিবর্ষণ করছে। এ অবস্থায় মিয়ানমারের সাথে সঙ্ঘাত এড়াতে নো ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে জানালেন ৩৪ বিজিবি উপ-অধিনায়ক মেজর ইকবাল আহমেদ।

তিনি বলেন, এখানে নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে এবং বর্ডার ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রেও এটা বাধার সৃষ্টি করে। এ জন্য তাদের আমরা নিয়ে আসছি।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানরত ১৫ হাজার রোহিঙ্গার জন্য নতুন করে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয় শিবিরের ইউইউ শেডে বলে জানালেন উখিয়ার ইউএনও মোহাম্মদ নিকারুজ্জামান চৌধুরী। কুতুপালং আশ্রয় শিবির ক্যাম্প ইনচার্জ রেজাউল করিম বলেন, হয়তো দু-এক সপ্তাহের মধ্যে নো-ম্যানস ল্যান্ড থেকে রোহিঙ্গাদের আনার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। এর আগে একই উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে অবস্থানরত অন্তত ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে সরিয়ে আনা হয়েছে।

এ দিকে আকিয়াবে রোহিঙ্গাদের আইডিপি ক্যাম্পের পাঁচ রোহিঙ্গা যুবককে অমানবিক নির্যাতন করেছে মিয়ানমারের পুলিশ। গত ৩ জানুয়ারি বিকেলে প্রয়োজনীয় কাজে আইডিপি ক্যাম্পের বাইরে যায় ওই যুবকেরা। তারা শৈ থেম মাই জি এলাকায় পৌঁছলে পুলিশ তাদের আটক করে নির্যাতন চালায়। পুলিশ চলে গেলে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ক্লিনিকে নিয়ে যায়।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর ওপর হামলার অজুহাতে পুরো রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, উচ্ছেদের মাধ্যমে জাতিগত নিধন চালায় সেনারা। এতে অন্তত ৯ হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু নিহত হন। সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নেন বাংলাদেশে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *