প্রথমে ভর্তি ফি ও বেতন বাড়ানো প্রতিবাদ জানান তিনি। এরপর শিক্ষকদের কাছে জানতে চান, কেন তাঁর সন্তান পরীক্ষায় ভালো ফল করেনি। অভিভাবকের ‘অপরাধ’ বলতে এটুকুই। কিন্তু তাঁর কথায় ক্ষিপ্ত হন শিক্ষকেরা। দুপক্ষের মধ্যে শুরু হয় তর্ক, পরে তা গড়ায় হাতাহাতিতে। একপর্যায়ের শিক্ষকেরা ওই অভিভাবককে বেঁধে ফেলেন। এরপর পিটুনি।
গত রোববার বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া কেজি অ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলে এ ঘটনা ঘটে। বিদ্যালয়টি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। অভিভাবককে বেঁধে মারধর করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে কক্সবাজারে শহরে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। অভিযুক্ত শিক্ষকদের শাস্তি দাবি করেন অনেকে।
নির্যাতনের শিকার অভিভাবক আয়াত উল্লাহ (২৬) বাদী হয়ে গতকাল সোমবার দুপুরে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় দুই শিক্ষকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করেছে প্রশাসন। কমিটির প্রধান কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নোমান হোসেন। গতকালই তিনি তদন্তকাজ শুরু করেছেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রোববার বেলা ১১টার দিকে আয়াত উল্লাহ বাড়ির পাশের খরুলিয়া কেজি অ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চান তাঁর ছেলে পরীক্ষায় ভালো ফল না করার কারণ কী। স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে ছেলে। অভিভাবকের প্রশ্ন শুনে প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিন উত্তেজিত হয়ে গালমন্দ করেন। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ সময় পাশের খরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হকও ঘটনাস্থলে এসে আয়াতকে মারধর শুরু করেন। এরপর আরও কয়েকজন তরুণ আয়াতকে রশি দিয়ে হাত ও পা বেঁধে মাটিতে ফেলে বেদম পিটুনি দেন। পরে আয়াতের চিৎকার শুনে কয়েকজন পথচারী এসে তাঁকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।
আয়াত উল্লাহ (২৬) বলেন, এই দুটি বিদ্যালয়ে অনিয়ম চলছেই। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নেও অনিয়ম করা হয়। তিনি বলেন, ৬০০ টাকার ভর্তি ফি করা হয়েছে এক হাজার টাকা, আর ২০০ টাকার মাসিক বেতন হয়েছে ২৫০ টাকা। কেন এভাবে টাকা বাড়ানো হয়েছে জানতে চাওয়ায় তাঁকে মারধর করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে খরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক বলেন, ‘আয়াত উল্লাহ আমাদের স্কুলের ছাত্র ছিল। বেয়াদবি করায় তাকে এমন শাস্তি দেওয়া হয়েছে।’ শিক্ষক হয়েও হাত-পা বেঁধে মারধর করা উচিত হয়েছে কি না প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ঘটনাটি এলাকার ক্ষুব্ধ লোকজন ঘটিয়েছে।
খরুলিয়া কেজি অ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিনও বলেন, শিক্ষকের সঙ্গে বেয়াদবি করায় এলাকার লোকজন আয়াত উল্লাহকে শিক্ষা দিয়েছে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, মামলার আগেই অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এলাকা থেকে আত্মগোপন করেছেন। তিনি বলেন, আয়াত উল্লাহও ৬ মামলার আসামি। তিনি এখন জামিনে আছেন। এই মামলার বাদী-বিবাদী সবাই জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী। আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, আয়াতের করা মামলার আসামিরা হলেন খরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক, খরুলিয়া কেজি অ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিন, দুই স্কুলের সহকারী শিক্ষক সহকারী শিক্ষক নজিবুল্লাহ, নুরুল হক ও অজ্ঞাতপরিচয়ের দুজন।