সৌদি আরবের সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সম্প্রতি ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে এসেছে সেই পরিবর্তন।
সৌদি আরবের অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে রিয়াদে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সালমান পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, আমরা অতীতে যা কিছু করেছি, সেখান থেকে ফিরে আসছি। আমাদের দেশ হতে যাচ্ছে মধ্যপন্থী ইসলামের দেশ। যেটা সকল ধর্মের এবং সব দেশের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।
গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সালমান আরো জানান, গত ৩০ বছরে যা ঘটেছে, তা আর বিশ্ববাসী দেখতে পারবে না। সৌদি আরবে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল কর্মকাণ্ড এবং পিছিয়ে পড়ার ব্যাপারে ইরানকে দোষারোপ করেন তিনি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাতে ইউরি বারমিন একটি মন্তব্য প্রতিবেদন লেখেন। সেখানে তিনি এ ব্যাপারে বলেন, তার মানে গত ৩০ বছরে সৌদিতে যে ইসলাম চর্চা করা হয়েছে সেটা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এছাড়া সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য চলমান ইসলামি রীতি থেকে কিছুটা সরে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সালমান নিজেই স্বীকার করেছেন গত ৩০ বছর ধরে তাদের দেশ ভুল পথে পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু সালমান কি আসলেই মধ্যপন্থী ইসলাম সৌদি আরবে চালু করতে চান?
গত আড়াইশ বছর ধরে ওয়াহাব-সউদ বিদ্বেষ চলে আসছে। সালমান কি সেটা থামিয়ে দিতে পারবেন?
২০১০ সালে তৎকালীন বাদশাহ আবদুল্লাহ এক আদেশ জারি করেন যে, রাজ্যের ফকীহরা (ইসলামি শাস্ত্র ফিকাহ বিশারদ) ফতোয়া জারি করতে পারবেন। অথচ বাদশাহ সালমান এবং তার পুত্র মুহাম্মদ বিন সালমান তো বহু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফকীহদের অনুমতি ছাড়াই।
২০১৬ সাল থেকেই সে দেশের প্রিন্সদের ধরপাকড়ের ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি রাজ পরিবারের সদস্য এবং ব্যবসায়ীদের আটকে রেখে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটলো। বাদশাহের প্রাসাদের ঢুকে ঝগড়ার অভিযোগে আটকের ঘটনাও ঘটেছে।
চলতি বছরে সংস্কৃতিতে উল্লেখ করার মতো বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে সৌদিতে। গানের কনসার্ট করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নারীদের যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
গত ৩৫ বছর পর দেশটিতে চলচ্চিত্রের প্রদর্শনীর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সর্বশেষ গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে সে দেশের নারীদের।
দুর্নীতি দমনের নামে ক্রাউন প্রিন্স শুদ্ধি অভিযান চালানোর দাবি করলেও বিষয়টিকে অন্যভাবে বিশ্লেষণ করছেন অনেকেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্নীতি দমনের নামে চাপ প্রয়োগ করে অর্থ আদায় করছেন ক্রাউন প্রিন্স সালমান।
সম্প্রতি ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে সাধারণ তরুণদের বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কট্টর সৌদিতে মধ্যপন্থী ইসলাম এবং দুর্নীতির অভিযোগে ধরপাকড়ের ঘটনাকে সেখানকার বহু মানুষ সমর্থন জানিয়েছেন।
গাড়ি চালাতে পারার অনুমতি পেয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েছেন সৌদি নারীরা। নারীবাদিরা এবং মানবাধিকারকর্মীরা নতুন সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে ক্রাউন প্রিন্স সালমানের সিদ্ধান্তের সমালোচনাও কিন্তু কম হচ্ছে না।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরিকে আটকে রেখে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য করারও অভিযোগ উঠেছিল সৌদি আরবের বিরুদ্ধে। যদিও সাদ সে অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। সময় এবং তার কাজই বলে দেবে সালমান কতোটা মডারেট ইসলাম চান।
আলজাজিরা অবলম্বনে