মাদক ও জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নির্মূল হয়নি : আইজিপি

Slider বাংলার আদালত

011015kalerkantho-01-01-2018-9

 

 

 

 

পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক গত এক বছরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ভালো উল্লেখ করে বলেছেন, এই সময়ে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে জঙ্গিদের পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি। মাদক সমস্যাও পুরোপুরি দূর করা যায়নি।

আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে গতকাল শনিবার পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে শহীদুল হক এসব কথা বলেন। পাশাপাশি গর্বের সঙ্গে জানান, জঙ্গিবাদ দমনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ইন্টারপোল প্রথমবারের মতো তাঁর বাহিনীর দুজন কর্মকর্তাকে চেয়ে পাঠিয়েছে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এদিন পুলিশ সদর দপ্তরে ‘নবনির্মিত মিডিয়া সেন্টার’ উদ্বোধন করেন। পরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ‘মাদক ও জঙ্গি পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। কারণ দুটোই আসক্তি। মাদকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা ইয়াবা। একটি দেশ থেকে ইয়াবার চালান আসছে। তবে মাদক ও জঙ্গির বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখানো হচ্ছে।’

আইজিপি বলেন, ‘জঙ্গিরা জান্নাতের স্বপ্ন দেখিয়ে জঙ্গিবাদে আসক্ত করে। ২০১৬ সালে হলি আর্টিজান হামলার পর আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। জঙ্গিদের আস্তানা চিহ্নিত করে নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছি। গত বছর ৩৫টি জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানকালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য মারা গেছেন।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অভিযান পরিচালনাকারী পুলিশ সদস্যদের সম্মানিত না করলে তাঁরা কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।’

আইজিপি জানান, ২০১৭ সালে পুলিশের অভিযানের সময় ৫৭ জন জঙ্গি সুইসাইডাল ভেস্টের মাধ্যমে আত্মহত্যা করেছে। এক শর বেশি জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়েছে। জঙ্গি দমনে পুলিশের অর্জন শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও প্রশংসিত হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে শহীদুল হক বলেন, ‘সমুদ্রে সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। হাজার হাজার মত্স্যজীবী নৌকায় করে প্রতিদিন আসে। তারা প্রতিবেশী দেশ থেকে মাছের পেটে করে, সবজির মধ্য দিয়ে ইয়াবা নিয়ে আসে। এটা বন্ধ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু মাদকের ব্যাপারে পুলিশের অবস্থান জিরো টলারেন্স। কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে। গত পাঁচ বছরে মাদক বহনকারীদের বিরুদ্ধে দুই লাখ ৮৭ হাজার ২৫৪টি মামলা হয়েছে। পুলিশ মাদক ব্যবসায় বিনিয়োগকারীদের একটি তালিকা করেছে। তা সিআইডি তদন্ত করবে।’ তাঁর মতে,  আইন দিয়ে, মামলা করে মাদক সমস্যার সমাধান করা যাবে না। পরিবারের ভূমিকা হচ্ছে আসল।

মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্য থাকার অভিযোগে গত বছর কতজন পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে—এই প্রশ্নের জবাবে আইজিপি জানান, এই মুহূর্তে তাঁর কাছে সেই তালিকা নেই। তবে পুলিশের কোনো সদস্য যেন মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে না পড়েন সেদিকে নজরদারি রয়েছে। কেউ জড়িত হলে সাধারণ মানুষের মতোই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো ও তা তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অনেকের চাকরি পর্যন্ত চলে গেছে। এখন পুলিশে নিয়োগ দেওয়ার আগে ‘ড্রাগ টেস্ট’ করা হচ্ছে। এতে কোনো প্রার্থী মাদকাসক্ত হলে তিনি প্রথম স্থান অধিকারী হলেও তাঁকে পুলিশে চাকরি দেওয়া হচ্ছে না।

অস্ত্র, মাদকসহ বিভিন্ন অবৈধ জিনিসের উদ্ধারের হার বেড়ে যাওয়ায় মামলার পরিমাণ বেড়েছে জানিয়ে পুলিশপ্রধান বলেন, পুলিশের সক্ষমতা ও কার্যক্রম বৃদ্ধির কারণে উদ্ধার বেড়েছে। উদ্ধারের পরিমাণ বাদ দিলে ‘ট্র্যাডিশনাল ক্রাইম’ তুলনামূলক কমেছে। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের অপরাধ প্রসঙ্গে শহীদুল হক বলেন, ২০১৬ সালে এক লাখ ৮১ হাজার ১৬৮টি মামলা হয়েছে। ২০১৭ সালে মামলার সংখ্যা দুই লাখ ১৩ হাজার ৫২৯টি।

ইন্টারপোলে বিশেষজ্ঞ হচ্ছেন দুই কর্মকর্তা : আইজিপি বলেন, ‘সম্প্রতি ইন্টারপোলের এক সভায় আমাদের জঙ্গিবাদ দমনের প্রক্রিয়া প্রশংসিত হয়েছে। ইন্টারপোলের সেক্রেটারি আমার কাছে জঙ্গিবাদ দমনে দুজন কর্মকর্তা চেয়েছেন, যাঁরা অন্যান্য রাষ্ট্রে জঙ্গিবাদ দমনের প্রশিক্ষণ দেবেন। এরই মধ্যে দুজনের নাম আমরা অনুমোদন করেছি।’

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এর আগে খণ্ডকালীন প্রশিক্ষণে গেলেও জঙ্গিবাদ দমনে বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইন্টারপোলে বাংলাদেশ পুলিশের স্থায়ী নিয়োগের বিষয়টি এবারই প্রথম ঘটতে যাচ্ছে। মনোনয়ন পাওয়ার কারণে দুজন চূড়ান্তভাবে প্রশিক্ষক হওয়ার সুযোগ পাবে বলেও আশা করা হচ্ছে। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত না হওয়ার কারণে ওই দুই কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করেননি সংশ্লিষ্টরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *