আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘৫ জানুয়ারি জনগণের গণতন্ত্রের বিজয় দিবস। অন্যদিকে বিএনপির রাজনৈতিক আত্মহত্যা দিবস। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির রাজনৈতিক আত্মহত্যা দিবস। বিএনপি আজকে কী দিবস পালন করছে? রাজনৈতিক আত্মহত্যা দিবস। আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপিকে আরেকবার আত্মহত্যা করতে হবে।’ তিনি গতকাল বিকেলে বনানী পূজামণ্ডব মাঠে ঢাকা মহনগর উত্তর আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে এসব কথা বলেন। ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে উদ্যাপন করতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে হবে। বাংলাদেশে উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হলে শেখ হাসিনার সরকারকে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে।’
একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে উন্নয়নের মহাসড়কে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নৌকার অভিযাত্রা আজ থেকে শুরু হলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আবারও সেই নৌকা, সোহরাওয়ার্দীর নৌকা, শেরে বাংলা ফজলুল হকের নৌকা, মওলানা ভাসানীর নৌকা, বঙ্গবন্ধুর নৌকা আবারও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পরাজিত করে বিজয়ী হবে।’
পদ্মা সেতু জোড়াতালি দিয়ে নির্মাণ হচ্ছে, সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এমন মন্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তিনি জানেন না বলে বেকুবের মতো এমন হাস্যকর বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি আরেকটা বক্তব্য দিয়েছেন- সাবমেরিন নাকি উদ্বোধনের পর পানিতে ডুবে গেছে। হায়রে কপাল মন্দ, চোখ থাকতে অন্ধ! আরে, সাবমেরিন তো পানিতেই ডুবে থাকে। মূর্খের মতো বলছে সাবমেরিন পানিতে ডুবে গেছে। যেটা পানিতেই ডুবে থাকে সেটা আবার নতুন করে ডুববে কিভাবে? মাথা খারাপ!’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বহুরূপী ব্যারিস্টার সাহেব, আপনাকে সবাই চেনে। দেশে একটু ঝড়ঝঞ্ঝা এলেই বিদেশে পালিয়ে যান, তার নাম কী? ব্যারিস্টার মওদুদ সাহেব। তিনি ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে অবৈধ বাড়ি রক্ষা করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছেন। অবৈধভাবে বাড়ি দখল করে ভুয়া কাগজপত্র আদালতে দাখিল করেছেন, এমন লোকের হাতে দেশ কি নিরাপদ? এই লোক যদি আইনমন্ত্রী হয় এ দেশের আইনের বারোটা বেজে যাবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ব্যারিস্টার মওদুদ বলছেন, বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। সময় আর নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। নির্বাচনও কারো জন্য অপেক্ষা করবে না। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে, বিএনপির যদি সাধ্য থাকে তবে ঠেকাতে আসুক। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালে পারেনি। এবারও যদি পেট্রলবোমা, সন্ত্রাস করে নির্বাচন ঠেকাতে আসে তবে বাংলার জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুন ও মুহম্মদ ফারুক খান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ।
মহানগর উত্তরের সমাবেশের পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এক জনসভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচন কারো জন্য অপেক্ষা করবে না। নির্বাচনী ট্রেন বিএনপির স্টেশনে থামবে না। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে। বিরল প্রাণীর মতো বিলুপ্ত হয়ে যাবে বিএনপি। পৃথিবীতে অনেক রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাদের (বিএনপির) অবস্থা মুসলিম লীগের চেয়েও খারাপ হয়ে যাবে।’
‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উদ্যাপনে আয়োজিত এ জনসভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও এনামুল হক শামীম, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ।
গণতন্ত্রের বিজয় দিবস উদ্যাপনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে পৃথক দুই কর্মসূচি উপলক্ষে আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী জমায়েত হয়। মিছিল শোভাযাত্রাসহ নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়। নানা বাদ্যযন্ত্র নিয়েও হাজির হয় অনেক নেতাকর্মী।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইউনাইটেড ইসলামী পার্টির সমাবেশ অনুষ্ঠিত : ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচনের ৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইউনাইটেড ইসলামী পার্টির আলেম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসাইন। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ প্রমুখ।
সমাবেশে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘৫ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতির জন্য ইউনাইটেড ইসলামী পার্টি এক মাস আগে আবেদন করেছিল। সে জন্য আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কেউই এখানে সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি।’