আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে জঙ্গিরা বহু আগে থেকেই প্রকৃত নাম গোপন করে ছদ্মনাম ব্যবহার করে আসছিল। জঙ্গিদের একেকজনের ছদ্মনাম থাকে গড়ে তিন থেকে চারটি। এখন তারা ছদ্মনামের পরিবর্তে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ‘কোড নম্বর’ ব্যবহার করতে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম থেকে গত সোমবার রাতে গ্রেপ্তার দুই জঙ্গিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, এক জঙ্গির কোড (শনাক্তকরণ নম্বর) অন্যজন জানে না। এটি জানে শুধু জঙ্গি সংগঠনের ‘আমির’ (দলপতি)। ফেসবুক কিংবা মুঠোফোনে ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমির নির্দিষ্ট জঙ্গির কাছে তার কোড নম্বর জানতে চান। কাউকে ফোন করার পর সঙ্গে সঙ্গে তার জন্য নির্দিষ্ট কোড নম্বরটি বলতে না পারলে আমির বুঝে নেন ওই সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে রয়েছে। ফেসবুকসহ ইন্টারনেটে কোনো অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও প্রথমেই কোড নম্বর না জানালে আমির বুঝে নেন অন্য কিছু ঘটেছে।
নব্য জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি আশফাকুর রহমান ওরফে আবু মাহির আল বাঙালি ওরফে রাসেল জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এসব তথ্য দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে সোমবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট এলাকার ভাড়া বাসায় ধরা পড়েন আইএস মতাদর্শের অনুসারী নিষিদ্ধঘোষিত এই জঙ্গি সংগঠনটির আরও এক সদস্য। তাঁর নাম রাকিবুল হাসান ওরফে সালাউদ্দিন আইয়ুবী ওরফে জনি। তাঁদের কাছ থেকে ১০টি গ্রেনেড এবং দুটি সুইসাইড ভেস্ট (আত্মঘাতী বন্ধনী) উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার থেকে তাঁদের সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিট চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিট চট্টগ্রামের প্রধান এ এ এম হুমায়ুন কবির বলেন, গ্রেপ্তার দুই জঙ্গির কাছ থেকে উদ্ধার করা দুটি মুঠোফোন পরীক্ষা করে তাঁরা দেখেছেন যোগাযোগের জন্য তাঁরা টেলিগ্রাম নামের একটি অ্যাপস ব্যবহার করতেন। দুজনের একাধিক সাংগঠনিক নামও রয়েছে। এর বাইরে তাঁদের আলাদা কোড নম্বরও রয়েছে। সংগঠনের কারও কাছে এই কোড নম্বর না বলতে দুজনই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। একসঙ্গে দুজন দুই মাস থাকলেও একজনের কোড নম্বর আরেকজন জানেন না। জঙ্গিরা কোড নম্বর ব্যবহার করছে, এটি এবারই প্রথম জানা গেল।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, জঙ্গি আশফাকের কোড নম্বর ‘৬৩০’। রাকিবুলের ‘৭৫০’। দুজনের মুঠোফোনে ব্যবহার করা অ্যাপ থেকে বের করা গেছে নব্য জেএমবির একাংশের আমিরের (নাম বলেছেন ‘ডন’) কোড নম্বর ‘৯৫০’। দুজনে বলেছেন, তথ্য আদায়ের জন্য জঙ্গি সদস্য সেজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ যাতে আমিরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে, সে জন্যই কোড নম্বর ব্যবহার করা হয়। এক সদস্য আরেক সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভিন্ন পন্থা ব্যবহার করে। তখন কেউ কারও কোড নম্বর বলে না।
সদরঘাটের জঙ্গি আস্তানা থেকে বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট চট্টগ্রামের পরিদর্শক আফতাব হোসেন বলেন, দুই জঙ্গির কাছে ওই বাসায় কারা কারা আসত, সে বিষয়ে এখনো মুখ খোলেননি তাঁরা। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা অব্যাহত রয়েছে।