শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলায় ধর্ষণের শিকার অন্তঃসত্ত্বা এক শিশুর গোপনে গর্ভপাত করানোর সময় মৃত্যু হয়েছে। পরে ওই শিশুর লাশ মাটি চাপা দিয়ে গুম করার সময় পুলিশ দুজনকে আটক করেছে।
গতকাল বুধবার রাতে গোসাইরহাট উপজেলার চর মহিসকান্দি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। শিশুটির নাম তাসলিমা আক্তার (১৩)। সে এবার চরমহিসকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছিল। তার বাবার নাম ইউসূফ খান।
গোসাইরহাট থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবেশী নুর ইসলাম মাদবর (৫৫) মোবাইল ফোনে গেম দেখানোর প্রলোভন দেখিয়ে সম্প্রতি তাসলিমাকে ধর্ষণ করেন। কিন্তু ভয়ে বিষয়টি সে পরিবারকে জানায়নি। এতে তাসলিমা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। গত সোমবার নুর ইসলামের স্ত্রী আয়েশা বেগম তাঁর বাবার বাড়িতে তাসলিমাকে বেড়াতে নিয়ে যান। গতকাল দুপুরে কুচাইপট্টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা মাজেদা বেগমের বাড়ির পাশের কোদালপুর ভুলু সরদার কান্দি গ্রামের নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিশুটির গর্ভপাতের চেষ্টা করা হলে তার মৃত্যু হয়। পরে রাতে লাশ কুচাইপট্টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। লাশ মাটি চাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ওই কেন্দ্রের পাশে গর্তও করা হয়। এমন সময় পুলিশ খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে লাশটি উদ্ধার করে। এ সময় ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা মাজেদা বেগম ও তাঁর ভাই আমিরুল ইসলামকে হাতেনাতে আটক করে।
পুলিশ জানায়, আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত শিশুটির বাবা ইউসূফ খান বাদী হয়ে গোসাইরহাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় নুর ইসলাম, তাঁর স্ত্রী আয়েশা বেগম, তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী নাছিমা বেগম, স্বাস্থ্য কল্যাণ পরিদর্শিকা মাজেদা বেগম ও তাঁর ভাই আমিরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, অবৈধ গর্ভপাত, হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগ আনা হয়েছে।
চরমহিসকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রায়হান সুলতানা বলেন, ‘এমন লোমহর্ষক ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ওই অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। কোনো অবস্থাতে যেন অভিযুক্তরা ছাড় না পায়।’
অভিযুক্ত নুর ইসলামের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে পাওয়া যায়নি। তাঁদের পুত্রবধূ রেখা আক্তার বলেন, ‘আমার শ্বশুর ১৫ দিন থেকে এলাকায় নেই। গত চার দিন থেকে শাশুড়িও বাড়িতে নেই। গ্রামে শুনতেছি শ্বশুর ওই মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছে। শাশুড়ি তাকে গর্ভপাত করাতে নিয়েছে। তখন তার মৃত্যু হয়েছে।’
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার থান্ডার খায়রুল হাসান বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে গর্ত করে লাশ মাটি চাপা দেওয়া হচ্ছে এমন খবর পেয়ে রাতে অভিযান চালাই। সেখান থেকে দুজনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা লোমহর্ষক এই কাহিনির বিবরণ দিয়েছেন।’
গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদি মাসুদ বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আটক দুজনকে শুক্রবার আদালতে পাঠানো হবে। বাকি তিনজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।