‘দেহা করার কথা কইয়া, না হইলে খালি খালি ধইরা থানায় নিয়া মামলার ডর দেহায়। পরে টেহা দিলে কিচ্ছু না। খালি ছাইড়া দেয়।’ মনোহরদী থানার ওসি রুহুল ইমামের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন মনোহরদীর তামাককান্দা এলাকার আসাদ মিয়া। তিনি জানান, গত ৪ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে তামাককান্দা এলাকায় নিজ বাড়ির পাশে সহপাঠী সুমন মিয়া, সুজন মিয়া, লিটন মিয়া ও আবদুর রহমান মিলে আড্ডা দিচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে মনোহরদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শওকত আসেন এবং তাঁদের একসঙ্গে দেখতে পেয়ে ধরে মনোহরদী থানায় নিয়ে যান। পরে থানায় নিয়ে দুই লাখ টাকা দাবি করে বলা হয়, অন্যথায় জুয়ার মামলায় ফাঁসানো হবে। আত্মীয়স্বজনরা মিলে গভীর রাতে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। আসাদ মিয়া বলেন, ‘আমরা এসআই শওকতরে প্রায় ৭০ হাজার টেহা দেওয়ার পরে ভোরবেলা সবাইরে ছাড়ছে।’
সর্বশেষ গত ৩০ ডিসেম্বর রাতে মনোহরদীর চালাকচর চেংগান এলাকার আবদুল হাই মাস্টারের ছেলে হাদিউল ইসলাম ও ড্রেনেরঘাট এলাকার দুলাল মিয়াকে ওসি রুহুল ইমাম দেখা করার কথা বলে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহিন মিয়া ও এসআই শওকতের মাধ্যমে দেখা করার কথা বলে থানায় নিয়ে যান। সেখানে রাতভর আটকে রেখে ৩৫ হাজার টাকার বিনিময়ে পরদিন ৫ ডিসেম্বর দুপুর দেড়টায় ছাড়িয়ে নিয়ে যান স্বজনরা। হাদিউল ইসলাম কালের কণ্ঠেকে বলেন, রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওসি সাহেব থানায় এসে বলেন, ‘আমরা নাকি চুরির মালের ব্যবসা করি’ এই অভিযোগে থানা হাজতে আটকে রাখে। পরে ‘আমাদের এলাকার গ্রাম পুলিশ আলাউদ্দিনের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা দাবি করে। আমরা দিতে অস্বীকৃতি জানাই। শুনে লেবুতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, চন্দবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রউফ হিরন ভাই দেখা করতে আসেন। সবার পরামর্শে আমি গ্রাম পুলিশ আলাউদ্দিনের মাধ্যমে ১৫ হাজার আর দুলাল চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পাই।’
এ ছাড়া হেনস্তার শিকার হয়েছেন সরকারি কর্মচারীরাও। তাঁদের মধ্যে আছেন উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের অফিস পিয়ন শফিকুল ইসলাম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, শুধু শুধু তাঁকে থানায় ধরে নেওয়া হয়েছিল। শফিকুল বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, এত টাকা কই থেকে দিমু বলে আকুতি-মিনতি করলেও ছাড়েনি। পওে অনেক কষ্টে ৮২ হাজার ৫০০ টাকা দিই। ওসি নিজে আমার কাছ থেকে টাকা বুঝে নেন। আর একই সময় আমার সঙ্গে স্থানীয় আব্দুল বাতেন মিয়ার ছেলেকেও আটক করে নিয়ে যায়, তাঁর কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নেয় ওসি। এমন ওসি বিদায়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়মু।’