ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া চার আসামি জামিনে বেরিয়ে গেছেন। এই চারজনই গ্রেপ্তারের পর নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তাঁদের তিনজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সহযোগিতায় জালিয়াতির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া আরও ২৫ শিক্ষার্থীর নাম তাঁরা তদন্তে পেয়েছেন। এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ ছাত্রসহ ২১ জন কারাগারে আছেন। কয়েকজন নিজেদের শিশু বলে আদালতে দাবি করেছেন।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার ২৫ আসামিই আদালতে নিজেদের জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা অনেকের নাম বলেছেন। তাঁদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে।
গত ১৯ অক্টোবর রাতে অভিযান চালিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল থেকে ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন রানা ও আবদুল্লাহ আল মামুনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরদিন সিআইডির পরিদর্শক মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বাদী হয়ে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন এবং ১৯৮০ সালের পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনে তাঁদের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তানজিল, বিকেএসপির সহকারী পরিচালক (বরখাস্ত) অলিপ বিশ্বাস, অলিপের ভাই উৎপল ও জেনিথ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাঁরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য হিসেবে ইলেকট্রনিক ডিভাইস সরবরাহ করেন। এই ডিভাইস নিয়ে হলে ঢুকে পরীক্ষার্থীরা তাঁদের কাছে প্রশ্নপত্র পাঠান। চক্রের অন্য সদস্যরা দ্রুত উত্তরপত্র তৈরি করে আবার সেসব পরীক্ষার্থীর কাছে সরবরাহ করেন।
৩২ লাখ টাকায় প্রশ্নপত্র কেনা
এ মামলায় গ্রেপ্তার ২৫ আসামির সবাই প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অবশ্য কয়েকজন ওই জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইফতেখার। তাঁর জামিন আবেদন নাকচের আদেশে বলা হয়েছে, নাহিদ ইফতেখার ৩২ লাখ টাকায় প্রশ্নপত্র কিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ১৯তম স্থান দখল করেন, যা তিনি নিজে ১৬৪ ধারায় স্বীকার করেছেন।
গত সোমবার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন সজীব আহমেদ। ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের এই শিক্ষার্থী আদালতে বলেছেন, গ্রেপ্তার হওয়া ওই প্রেসের কর্মচারী খান বাহাদুরের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র পেয়েছিলেন তিনি। পরে তা বিক্রি করে ১৬ লাখ টাকা পান। খান বাহাদুরকে দেন ১০ লাখ টাকা। আদালতে জমা দেওয়া সিআইডির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামি সজীব সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য হিসেবে ২০১৬ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছেন।