ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পোশাকের চাহিদা বাড়ছে

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

000051Kalerkantho_18-01-03-01

 

 

 

 

ভারতে গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল সর্বমোট ১২ কোটি ৯৮ লাখ ইউএস ডলার বা এক হাজার ৭৭ কোটি টাকা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৬১ মিলিয়ন ডলার কম।

তবে আশার কথা হলো, চলতি অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে ৮ কোটি ৭২ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রায় ৫৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রতিবেশী দেশটিতে। গত ১ জুলাই ভারতে জিএসটি (গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স) বাস্তবায়নের পর সেখানে উৎপাদন মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ভারতের বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের প্রাধান্য বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ইপিবি এবং বিজিএমইএ সূত্র জানায়, নভেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থবছরে ভারতে ৮ কোটি ৭২ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় (৫ কোটি ৬৭ লাখ ডলার) ৫৩.৮৬ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ওভেন পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৫ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৫১ শতাংশ। আর নিটিং পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩ কোটি ১ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬৯ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ছেলেদের ব্লেজার, ট্রাউজার, জ্যাকেট রপ্তানি হয়েছে সর্বোচ্চ ৩ কোটি ১৩ লাখ ডলার। এ ছাড়া মেয়েদের ট্রাউজার, জ্যাকেট রপ্তানি হয়েছে ১ কোটি ডলারের বেশি। ছেলেদের শার্ট ও টি-শার্ট রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে ৯৮ লাখ ও ৯৬ লাখ ডলারের।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১ জুলাই থেকে ভারতে জিএসটি বাস্তবায়ন করার ফলে সেখানে গার্মেন্ট পণ্য উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। এ কারণে সেখানকার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশি পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন। নকশা ও গুণগতমান বিচারে বাংলাদেশে পণ্যের বৈচিত্র্য অনেক বেশি। এ ছাড়া সড়ক পথে পণ্য নেওয়ার সুবিধার কারণেও সে দেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের তৈরি পোশাককে পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রাখেন। কিন্তু বাংলাদেশি পণ্য আমদানি নীতিতে সরকারি বাধার কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এ দেশ থেকে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য নিতে পারেন না।

এদিকে ভারতের তৈরি পোশাকের বিশাল বাজারের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে সামগ্রিক আমদানি খুব একটা বেশি নয়। তবে দ্রুত বৃদ্ধি ভারতীয় উৎপাদনের জন্য হুমকি হিসেবেই দেখছেন সেখানকার তৈরি পোশাকের উদ্যোক্তারা। ভারতীয় টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ কনফেডারেশনের চেয়ারম্যান সঞ্জয় জেইন সেখানকার বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা সরকারকে এ বিষয়ে বিধান পরিবর্তন করতে বলেছি’। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গার্মেন্টস উদ্যোক্তারা চীন থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ফ্যাব্রিকস আনতে পারেন। অথচ ভারতীয় পোশাক প্রস্তুতকারীরা চীন থেকে একই ফ্যাব্রিকসের জন্য ২০ শতাংশ আমদানি শুল্ক দিতে হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও শ্রম ভারতের তুলনায় সস্তা। যে কারণে ভারতে উৎপাদন খরচ বাংলাদেশের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি। ’

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ পরিচালক ও মেলো ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফ উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভারতে ১৩০ কোটি মানুষের তৈরি পোশাকের বিশাল বাজার রয়েছে। নানা বাধা ও সীমাবদ্ধতার কারণে প্রতিবেশী হলেও আমাদের সেখানে দখল নামমাত্র। অথচ আমাদের ফেব্রিকের বৈচিত্র্য তাদের তুলনায় অনেক বেশি। সড়কপথের সঙ্গে যোগাযোগের কারণেও ভারতে ব্যবসার সুযোগ অনেক বেশি। যদিও ভারতের পলিসি ব্যবসাবান্ধব নয়। তারা বাংলাদেশি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অনেক ধরনের শুল্ক বাধা দিয়ে রেখেছে। ’

ভারতের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট ক্রেতার সঙ্গে ব্যবসার সুযোগ কম। এ কারণে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতার সুযোগও সেখানে কম বলে তিনি জানান।

বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এস এম নূরুল হক বলেন, ‘অনেক ধরনের বাধা সত্ত্বেও সারা পৃথিবী যদি সেখানে বাজার সৃষ্টি করতে পারে আমরা পারব না কেন? আমাদের দুই দেশের পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অনেক ভালো। এ সম্পর্কটাকে কাজে লাগিয়ে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায় করে নিতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘ভারতীয়দের যেহেতু নিজস্ব কটন সুবিধা আছে এবং তারা টেক্সটাইলে অভিজ্ঞ তাই আমি বিজিএমইএর দায়িত্বে থাকাকালীন (২০০২-২০০৪) সময়ে সেখানকার ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছিলাম বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার। তারা এখানে উৎপাদন করে ভারতে বাইব্যাক করতে পারে। সে অনুযায়ী তাদের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছিল। কিন্তু নানা কারণে পরবর্তী সময় তা আর হয়নি। ’ এখনো বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাতে ভারতীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *