নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের জন্য ৭৬টি রাজনৈতিক দল নতুন করে আবেদন করেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ দলই একেবারে অপরিচিত, নামসর্বস্ব। ইসি বলছে, নিবন্ধনের শর্ত কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করে নতুন নিবন্ধন দেওয়া হবে।
৭৬টি দলের বাইরে আরও ১৫টি দল নিবন্ধন আবেদনের সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করেছে। তবে ইসি আর নতুন করে সময় বাড়াবে না। নতুন দলের নিবন্ধনের আবেদন চেয়ে গত ৩০ অক্টোবর গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ইসি। আজ রোববার ছিল আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন।
ইসি সূত্র জানায়, ঐক্য ন্যাপ, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, জোনায়েদ সাকীর গণসংহতি আন্দোলন যেমন নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, তেমনি নাকফুল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নিউ সংসদ লীগ, ঘুষ নির্মূল পার্টি, মঙ্গল পার্টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল), কর্মসংস্থান আন্দোলন, বাংলাদেশ সমাধান ঐক্য পার্টি (বসবাস), সোনার বাংলা উন্নয়ন লীগ, সত্যব্রত আন্দোলন, সততা দল, জাতীয় পরিবারকল্যাণ পার্টি, শান্তির দল, জনতার কথা বলে, মৌলিক বাংলা, জনস্বার্থে বাংলাদেশ, সুশীল সামাজিক আন্দোলন, আলোকিত পার্টির মতো বাহারি নামের অনেক দল।
নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে আছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামিক গাজী, জালালী পার্টি, ইনসানিয়া বিপ্লব, ইউনাইটেড ইসলামী পার্টি, ইসলামিক পার্টি, ফরায়েজি আন্দোলন, বাংলাদেশ রামকৃষ্ণ পার্টি, বাংলাদেশ হিন্দুলীগ, মাইনরিটি জনতা পার্টি ইত্যাদি।
এ ছাড়া নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা দলের তালিকায় আছে— জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, পিপলস ডেমেক্রেটিক পার্টি, জনতা পার্টি, রিপাবলিকান পার্টি, সমাজ উন্নয়ন পার্টি, জাতীয় লীগ, পরিবহন লেবার পার্টি, তৃণমূল ন্যাশনাল পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, মানবাধিকার আন্দোলন, ন্যাশনাল কংগ্রেস বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, গণশক্তি দল, বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি), কৃষক শ্রমিক পার্টি, লিবারেল পার্টি, মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলন, জাতীয় দল, নতুন ধারা বাংলাদেশ, সাধারণ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (ডিপিএলডিপি), মুক্তিযোদ্ধা কমিউনিজম ডেমোক্রেটিক পার্টি, গণ আজাদী লীগ, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক পার্টি, তৃণমূল লীগ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ আওয়ামী পার্টি (ভাসানী ন্যাপ)।
তালিকায় কোনো কোনো দলের নাম একাধিকবারও আছে।
ইসি সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ৭৬টি দল নিবন্ধনের আবেদন করেছে। এসব আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি কমিটি করা হবে। নিবন্ধনের সব শর্ত দলগুলো পূরণ করছে কি না, তা কঠোরভাবে যাচাই করা হবে। প্রয়োজনে মাঠপর্যায়ে তদন্ত ও গোয়েন্দা প্রতিবেদন নেওয়া হবে। আগামী মার্চ নাগাদ নতুন দলের নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত আসবে। পাশাপাশি নিবন্ধিত দলগুলো শর্ত পূরণ করছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। যেসব দলের কর্মকাণ্ড নেই, শর্ত পূরণ করছে না, তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দল আছে ৪০টি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯০ (এ) অনুসারে নির্বাচন কমিশন আগ্রহী দলগুলোকে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিবন্ধন দিয়ে থাকে। আরপিও অনুযায়ী তিনটি শর্তের মধ্যে একটি পূরণ হলে একটি দল নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয়। শর্তগুলো হলো দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যেকোনো জাতীয় নির্বাচনের আগ্রহী দলটির যদি অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকেন; যেকোনো একটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী অংশ নেওয়া আসনগুলোয় মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ পায়; বা দলটির যদি একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ (২১ টি) প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন-সংবলিত দলিল থাকে।