তিব্বতে ভূমিকম্পের কারণে ভারতে ব্রহ্মপুত্র-সিয়াংয়ের পানি ঘোলা হয়ে পড়েছে বলে দাবি করল চীন। জানাল, গত মাসের ওই ভূমিকম্পে তৈরি হওয়া তিনটি হ্রদ ও ইয়ারলুং সাংপো নদীর পানির তথ্য তারা নিয়মিত জানাবে।
তিব্বতের ওই সাংপো ভারতে অরুণাচল প্রদেশে ঢুকে নাম পেয়েছে সিয়াং এবং আসামে ব্রহ্মপুত্র। সম্প্রতি সিয়াং-ব্রহ্মপুত্রের পানি কাদামাটি ও অন্যান্য দূষণকারী মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য দু’টিতে। ভূমিকম্পের কারণে এমনটা হয়ে থাকতে পারে বলে কেন্দ্রীয় সরকার জানালেও রাজ্য দু’টি তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। এর কারণ জানতে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করারও দাবি জানানো হয়। গত ২২ ডিসেম্বর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে চিনের ‘স্টেট কাউন্সিলর’ ইয়াং জিয়েচির যে সীমান্ত বৈঠক হয় সেখানে এই প্রসঙ্গে কথা হয়। এ বারে মুখ খুলল চীন সরকার।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বক্তব্য, গত মাসে তিব্বতে বড় ভূমিকম্প হয়েছে। রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৬.৪। এর জেরে বিশাল তিনটি হ্রদ সৃষ্টি হয়েছে। এগুলির কোনটি কত বড়— তার পুরো মাপজোক এখনো হয়নি। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলো, পানির চাপে যদি ওই তিন হ্রদ একসঙ্গে জুড়ে যায়, কিংবা সেগুলির পাড় ভেঙে তার জল আচমকা সাংপো দিয়ে বয়ে নামে, তবে বিপদ হবে ভারতে। জলোচ্ছাসে সিংয়া ও ব্রহ্মপুত্রের দু’ধারে বিস্তীর্ণ জনবসতির বিপুল ক্ষতি হতে পারে।
ফলে ওই তিন হ্রদ ও সাংপোর হাল হকিকত নিয়মিত জানাটা ভারতের পক্ষে খুবই জরুরি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং মঙ্গলবার বেইজিংয়ে বলেন, ‘‘ভারত ও চীনের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের বর্তমান যে কাঠামো রয়েছে, তার মাধ্যমেই দু’দেশের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা নদীগুলির তথ্য জানাব আমরা।’’
ভারতে অনেকের অভিযোগ, চীনে নির্বিচার নির্মাণকাজের কারণেই সিয়াং-ব্রহ্মপুত্রের পানি এমন ঘোলা ও দূষিত হয়ে পড়েছে। এমন অভিযোগও ওঠে যে, জিনজিয়াং প্রদেশে নদীর পানি পাঠাতে সুদীর্ঘ সুড়ঙ্গ খুঁড়ছে বিইজিং। এ তারই ফল। চীনা মুখপাত্র হুয়া এ দিন সেই অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘হ্রদগুলি প্রকৃতিক কারণেই তৈরি হয়েছে। এগুলি আদৌ মানুষের তৈরি নয়। ভারতেও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞেরাও এ কথাই জানিয়েছেন। উপগ্রহ-ক্যামেরাতেও ধরা পড়েছে বিষয়টি। আমরা আশা করব ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ভিত্তিহীন জল্পনা প্রচার করা থেকে বিরত থাকবে।’’
পাক-চীন বাণিজ্য করিডোরে যুক্ত হচ্ছে আফগানিস্তান
এনডিটিভি
চীন ও পাকিস্তান তাদের যৌথ অর্থনৈতিক করিডোরের সাথে এবার আফগানিস্তানকেও যুক্ত করতে যাচ্ছে। এ উদ্দেশ্যে প্রকল্পে ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় বৃদ্ধি করা হবে বলে জানিয়েছন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের একটি অংশ। এশিয়া, ইউরোপসহ অন্যান্য অঞ্চলকে সংযুক্তকারী চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের অংশ এই বাণিজ্যিক করিডোরটি পাকিস্তান শাসিত কাশ্মিরের মধ্য দিয়ে চলে গেছে।
বেইজিংয়ে চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পর গতকাল চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং বলেছেন, এই অর্থনৈতিক করিডোর উন্নয়নের উদ্দীপক হিসেবে পুরো অঞ্চলের উপকারে আসবে বলে চীন আশা করছে। তিনি আরো বলেন, আফগানিস্তানের উন্নয়ন ও জনগণের জীবনযাত্রার উন্নতি খুবই জরুরি এবং আশা করছি দেশটি যৌথ এই সহযোগিতা উদ্যোগে যোগ দেবে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান তাদের পারস্পারিক সম্পর্কের দূরত্ব ঘোচাতে সম্মত হয়েছে বলেও তিনি জানান। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুতরাং চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরকে আফগানিস্তানে প্রসারিত করতে চীন ও পাকিস্তান উভয় আগ্রহী। তবে সেটি হবে সব পক্ষের লাভ ও উন্নয়নের নীতির ভিত্তিতে’।
তবে বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য দেশ তিনটিকে পারস্পারিক ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে বলেও মনে করে চীন। এ জন্য সহজে বাস্তবায়নের জন্য প্রথমে ছোট ছোট উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে ঠিক কী ধরনের পদেক্ষেপ নেয়া হবে সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছুই বলা হয়নি কোন দেশের পক্ষ থেকে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, তার দেশও চীনের বন্ধুত্ব খুবই দৃঢ়। কিন্তু তবে আফগানিস্তানকে এই প্রকল্পে যুক্ত করার বিষয়ে তিনি সরাসরি কিছু বলেননি। তিনি বলেন, সিপিইসির সফল বাস্তবায়ন আফগানিস্তান, ইরান, মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সংযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির মডেল হিসেবে কাজ করবে’।
অনেক দিন ধরেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করতে ‘সাহায্যকারী পক্ষ’ হিসেবে কাজ করছে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই দেশ দু’টির মধ্যে সম্পর্ক কখনোই উষ্ণ ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে দেশ দু’টির সম্পর্কে আরো অবনিত হয়েছে। তালেবানকে সহযোগিতা ও অর্থায়নের জন্য ইসলামাবাদকে অভিযুক্ত করছে কাবুল। যদিও পাকিস্তান বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে। অন্য দিকে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মিরের ওপর দিয়ে চীন থেকে পাকিস্তানে বাণিজ্য করিডোর নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে ভারত।