শীত নেমেছে। শুরু হয়েছে পিঠাপুলি খাওয়ার ধুম। এর মধ্যে আবার বড়দিন আর নতুন বর্ষবরণের আমেজ। উপাদেয় সব খাবারের সমারোহ। জিবে জল চুকচুক করছে। কিন্তু রক্তে চিনির পরিমাণটা মেপে দেখেছেন তো, মানে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে তো?
বছরের এ সময়টা উৎসবের। মানুষ এ সময় ঘুরতে বেরোয়। বাড়ি বাড়ি মিষ্টান্ন পিঠাপুলি তৈরির সাজ সাজ রব পড়ে যায়। এদিকে চিকিৎসকেরা বলছেন, বছরের এ সময়ে ডায়বেটিসের সঙ্গে বসবাসকারীদের রক্তে ‘এইচবিএওয়ানসি’-এর পরিমাণ বেড়ে যায়। মানে রক্তের লোহিত কণিকায় যে রক্তবর্ণ হিমোগ্লোবিন, তা যে পরিমাণ শর্করা বহন করে, তার পরিমাপই এইচবিএওয়ানসি। এর মাত্রা পাঁচের নিচের হলে স্বাভাবিক। কিন্তু সাড়ে ৬ শতাংশ কিংবা তার বেশি হলেই ডায়াবেটিস! গরমকালের তুলনায় শীতের এই সময়ে রক্তের হিমোগ্লোবিনে সেই এইচবিএওয়ানসির মাত্রাটা বেড়ে যায়, বলছেন চিকিৎসকেরা।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা জরুরি। এই সময়ে তো আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিত। পিঠাপুলির স্বাদ, বড়দিন আর বর্ষবরণের আমেজে কী খাব আর কী খাব না, সেটা আসলে মাথায় থাকে না। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, নির্দিষ্ট কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে এই দুনো শীতেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ভারতী হাসপাতালের অ্যান্ডোক্রিনোলজিস্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সঞ্জয় কালরা বলেন, ‘বর্ষবরণের এই সময়ে কেক, পেস্ট্রি কিংবা এ ধরনের মিষ্টান্ন অন্য খাবারগুলোর তুলনায় রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায়। এ ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে মিষ্টিজাতীয় খাবারে একটা কামড়ই যথেষ্ট। পুরোটুকু খাওয়ার দরকার নেই। এ সময় একটু বেশি খিদে লাগে। তাই প্রধান খাবারগুলো গোটা দিন ধরে অল্প অল্প করে খাওয়াই ভালো। কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার কথা ভুলে গিয়ে স্যুপ-সালাদজাতীয় খাবার খান। ভাজাপোড়ার থেকে রোস্ট, গ্রিলড কিংবা সেদ্ধ খাবার খাওয়া নিরাপদ।’
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পরিমিত ব্যায়ামও জরুরি। কিন্তু শীতের সকালে উঠে ব্যায়াম করে কে! তার চেয়ে ঘুমটাই বেশি ভালো লাগে। সঞ্জয় কালরার যুক্তি, শীতে মানুষ একটু বেশি আলসেমিতে ভুগে থাকে। এ কারণে নিয়মিত ব্যায়াম করাটা হয়ে ওঠে না। পথ বাতলে দিলেন সঞ্জয়, ‘প্রতিদিন অন্তত একটু সময় হলেও ব্যায়াম করুন। সেটা আপনার ইনসুলিনকে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে বেশি কার্যক্ষম করে তুলবে। বেশি করে খাদ্যশস্য ও ফল-ফলাদি খান। “ফ্রস্ট বাইট” থেকে বাঁচতে পা দুটি সব সময় ঢেকে রাখুন, যেন কোনো সংক্রমণ না ঘটে।’
চিকিৎসক সঞ্জয় পানি খাওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। শীতে যেহেতু একটু বেশি খিদে লাগে, তাই প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫ গ্লাস পানি খেলে শরীরে ‘মেকি খিদে’র ভাবটা থাকে না। তা ছাড়া এ পরিমাণ পানি আপনার শরীর থেকে বিষ দূরীকরণেও সাহায্য করবে। শরীরটাও হবে বেশ জলযোজিত।’ সূত্র: ডেকান ক্রনিকল