সদ্যপ্রয়াত চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে আজ রবিবার বিকেল ৩টায় চশমা হিলের বাসায় যাচ্ছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর শনিবার বিকেল থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসার আশপাশ ঘিরে অবস্থান নিতে শুরু করেন বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। শনিবার রাত ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে নিরাপত্তা সংক্রান্ত চূড়ান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।
গণভবন থেকে দলের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম জানান, প্রধানমন্ত্রী রবিবার বিকেল ৩টায় প্রয়াত নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় যাবেন। এ ব্যাপারে তাঁর সফরসূচি চূড়ান্ত হয়েছে।
এর আগে সকালে নৌবাহিনীর বার্ষিক কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রী রবিবার সকালে নৌবাহিনীর বার্ষিক রাষ্ট্রপতির কুচকাওয়াজে যোগ দেবেন। সকাল ১০টা ১০ মিনিটে পতেঙ্গা নেভাল একাডেমিতে পৌঁছাবেন তিনি। সেখানে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি নির্ধারিত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নৌবাহিনীর কর্মসূচি শেষে মহিউদ্দিনের বাসায় যাবেন-বিষয়টি চট্টগ্রামের প্রশাসনকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-উত্তর) মো. আব্দুল ওয়ারিশ খান।
শনিবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আসবেন। নিরাপত্তার মহড়া দেওয়া হচ্ছে। আমরা চশমা হিল এলাকায় আছি। পুরো এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ‘
মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের বাসায় আসবেন বলে জানানো হয়েছে। প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বাসায় এসেছেন। ‘
জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘চশমা হিলের প্রবেশপথ খুবই সরু। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টিকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। ‘
প্রসঙ্গত, গত ১৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
মহিউদ্দিনের শোকসভা সেই লালদিঘি ময়দানে : যে লালদিঘির মাঠে বজ্রকণ্ঠে চট্টগ্রামের কথা বলতেন মহিউদ্দিন, সেই মাঠে শেষযাত্রায়ও গিয়েছিলেন চট্টগ্রামবাসীর এই অভিভাবক। সেদিন লাখ লাখ জনতা চোখের জলে বিদায় দিয়েছিলেন তাঁদের প্রিয় নেতাকে। সেই ময়দানে এবার হতে যাচ্ছে তাঁর শোকসভা।
চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ যৌথভাবে আগামী ১৪ জানুয়ারি দুপুরে এ শোকসভার আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার নগরীর চশমা হিলে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসভবনে অনুষ্ঠিত সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল আলম চৌধুরী।
নগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক বলেন, ‘লালদিঘি ময়দান থেকেই মহিউদ্দিন ভাইয়ের উত্থান। স্মৃতিবিজড়িত সেই মাঠে আমরা মহিউদ্দিন ভাইয়ের শোকসভা করব। আশা করছি, জানাজার মতো লাখ লাখ মানুষ শোকসভায়ও শরীক হবেন। ‘
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন দেশে ফেরার পর শোকসভা নিয়ে জোরালো প্রস্তুতি শুরু হবে বলে তিনি জানান।
মেজবানে নিহতদের পরিবারকে হিন্দু ফাউন্ডেশনের অনুদান : নগরীর রীমা কমিউনিটি সেন্টারে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানির মেজবানে পদদলিত হয়ে নিহত ১০ জনের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু ফাউন্ডেশন। শুক্রবার ফাউন্ডেশনের কার্যকরী সংসদের সভায় ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান দুলাল কান্তি মজুমদার। মহাসচিব শ্যামল কুমার পালিত বলেন, ‘প্রয়াত নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানিতে অমুসলিমদের জন্য ভোজের আয়োজনে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের পরিবারকে আমরা ১০ হাজার টাকা করে দেব। অসহায় পরিবারগুলোর যেকোনো বিপদে-আপদে পাশে থাকব। ’ সভায় আরো বক্তব্য দেন প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরী, কে পি দাশ, দিলীপ কুমার মজুমদার প্রমুখ।