সারি সারি ফলের গাছ আর শাকসবজির বাগান। দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এই ফলের গাছ আর শাকসবজির বাগান করেছেন মসজিদের মুয়াজ্জিন হায়দার আলী (৫৫)। কিন্তু এর ফল ও শাকসবজি খাচ্ছেন পুরো গ্রামবাসী। আর এতেই আত্মতৃপ্তি খুঁজে পান মুয়াজ্জিন হায়দার।
হায়দারের বাড়ি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের বাগডোকরা জোতদারপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন। তিনি দিনমজুর হিসেবে কৃষিকাজও করেন। বাসায় বাসায় কোরআন তিলাওয়াত, মসজিদে মিলাদ, বিয়ের অনুষ্ঠানে পাওয়া স্বল্প টাকা এবং দিনমজুর হিসেবে যা পান, তার বেশির ভাগ ব্যয় করেন গাছের চারা রোপণ ও পরিচর্যা করতে।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাকডোকরার জোতদারপাড়া গ্রামের কৃষিজমির মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া দুই কিলোমিটার দীর্ঘ পানির খালের উভয় পাশে ১০ বছর ধরে হায়দার লাগিয়েছেন কয়েক শ গাছ। উদ্দেশ্য, দিনমজুর কৃষকেরা কাজ শেষে একটু দম নেবেন। লাগানো গাছের ফল আর শাকসবজি উপকারে আসবে গ্রামবাসীর। এতেই মনে আত্মতৃপ্তি পান হায়দার। বছরখানেক আগে কে বা কারা রাতের আঁধারে কয়েকটি গাছ কাটায় শোকে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, খালের দুই ধারে দোল খাচ্ছে আম, জাম, কাঁঠালসহ হরেক রকমের চারা। এ সময় প্রকৃতিপ্রেমী হায়দারকে শাকসবজি পরিচর্যা করতে দেখা যায়। বাগডোকরা জোতদারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, ‘হায়দার একজন মহৎ মানুষ। তিনি কয়েক বছর ধরে আমাদের গ্রামের মানুষদের নিজের গাছের ফল ও শাকসবজি খাওয়াচ্ছেন বিনা মূল্যে। আমাদের যখন যা প্রয়োজন, শাকসবজি বা ফল নিয়ে যাই। এতে বাধা দেন না হায়দার।’
হায়দার আলী বলেন, ‘ছোটকাল থেকেই গাছ লাগিয়ে আসছি। তবে গত কয়েক বছরে কয়েক শ গাছ লাগিয়েছি। এখন খালের ধারে গাছগুলো লাগিয়েছি, যাতে দিনমজুর কৃষকেরা কাজের ফাঁকে গাছের ছায়ায় একটু বিশ্রাম নিতে পারেন।’ গাছে যে ফল আসে, সেগুলো গ্রামের মানুষকে বিনা মূল্যে দিচ্ছেন তিনি।
তবে ভবিষ্যতে শুধু খাল নয়, পুরো গ্রামে হরেক রকম গাছ লাগানোর ইচ্ছা আছে প্রকৃতিপ্রেমী হায়দারের। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তিনি তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তবু আজও তিনি স্বপ্ন দেখেন তাঁর এ কাজে সচেতনমহল এগিয়ে আসবে। তবে আজীবন গাছ রোপণ ও পরিচর্যার কথা জানান হায়দার।