জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আজ বৃহস্পতিবার পাঁচ ঘণ্টা আদালতে কাটালেন। আদালতের মধ্যাহ্নবিরতির সময় তিনি কিছুই খাননি। তাঁর খাবার অন্যদের দেওয়া হয়।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শিমুল বিশ্বাস জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া দুপুরবেলায় কিছুই খাননি। তাঁর জন্য আনা খাবার অন্যদের দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি উপস্থাপন করার দিন ধার্য ছিল। আদালতে আসার জন্য খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা থেকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রওনা দেন। ৩০ মিনিট পর তিনি পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে হাজির হন। আদালতের চারপাশের সড়কগুলোতে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অবস্থান নেন। এসব সড়কে সব দোকানপাট বন্ধ ছিল।
বেলা ১১টার দিকে খালেদা জিয়া আদালতে আসার পর বিচারকের অনুমতি নিয়ে চেয়ারে বসেন। চেয়ারটি কাঠের হাতলযুক্ত। খালেদার বসার চেয়ার থেকে ১৫ হাত দূরে দুদকের আইনজীবীদের বসার টেবিল। এর ডান পাশে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের বসার জায়গা।
খালেদা আদালতে আসার পর তাঁর আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান যুক্তিতর্ক শুনানি উপস্থাপন করতে শুরু করেন। বেলা ১টা ২০ মিনিটের দিকে আদালত মধ্যাহ্নবিরতি দেন। তখন দেখা যায়, খালেদা জিয়া আদালতের একটি কক্ষে প্রবেশ করেন। ২৫ থেকে ৩০ মিনিট পরে তিনি সেই কক্ষ থেকে বের হয়ে তাঁর চেয়ারে এসে বসেন। খালেদার ব্যক্তিগত সহকারী শিমুল বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিরতির সময় ম্যাডাম নামাজ আদায় করেছেন। কিছুই খাননি। তাঁর খাবার তিনি অন্যদের দিতে বলেন।’
দুদকের পক্ষে মামলা পরিচালনা করছেন মোশাররফ হোসেন কাজল। তিনি বলেন, বিরতির সময় তাঁরা চা-বিস্কুট খেয়েছেন।
দেখা যায়, বিরতির সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা আদালতের বাইরে যান। বেলা আড়াইটার দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে মহাসচিবসহ বিএনপির অন্য নেতারা আদালতে আসেন। বিএনপি নেতা আবদুস সালামসহ খালেদার কয়েকজন আইনজীবী আদালত কক্ষের ভেতরে দুপুরের খাবার খান।
যুক্তিতর্ক শুনানির সময় খালেদার পক্ষে দুদক কর্মকর্তা হারুন অর রশীদের জবানবন্দি ও জেরার বক্তব্য তুলে ধরেন আইনজীবী রেজ্জাক খান। তিনি বলেন, অতি উৎসাহী ও অতি উদ্যোগী ব্যক্তি থেকে দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। তদন্ত কর্মকর্তা হারুন একজন অতি উৎসাহী ব্যক্তি।
প্রবীণ আইনজীবী রেজ্জাক খান বুধবারও খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। সকাল থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে চলছিলেন তিনি। বেলা ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে রেজ্জাক আদালতের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি আর চোখে দেখতে পারছি না।’ এরপর রেজ্জাক লাইট জ্বালিয়ে মামলার নথিপত্র দেখে বক্তব্য উপস্থাপন করতে শুরু করেন।
বিকেল চারটার দিকে বিচারক যখন যুক্তিতর্কের শুনানির নতুন দিন ঠিক করে এজলাস ত্যাগ করেন, তখন খালেদা জিয়া তাঁর চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান। সামনে এগিয়ে গিয়ে তাঁর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। খালেদা জিয়া খন্দকার মাহবুবের কাছে জানতে চান, কবে তিনি যুক্তিতর্ক শুনানি শুরু করবেন। পরে মাহবুব বলেন, তিনিও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে খালেদা আদালত চত্বর ত্যাগ করেন।
গত তিন দিন মামলার শুনানির সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, রুহুল কবীর রিজভী, আবদুল আওয়াল মিন্টু, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জয়নাল আবেদিন ফারুক, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, খায়রুল কবীর খোকনসহ একাধিক কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আদালতে উপস্থিত থাকেন।