সম্পাদকীয়: জোহরা তাজউদ্দীনের মৃত্যুবার্ষিকীতে কেন শব্দ করেনি বাংলাদেশ!

Slider টপ নিউজ সম্পাদকীয় সারাদেশ

c9fea37425687f3eea2b6ac4e0cb23ab-5991fe343a5cb

 

 

 

 

 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ক্রান্তিকালের আহ্বায়ক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের পত্নী সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের ৮১তম জন্মদিনের ঠিক তিন দিন আগে ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। একজন সাধারণ কর্মী থেকে নেতা হয়েই তিনি চিরবিদায় নিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, জোহরা তাজউদ্দীনের একমাত্র ছেলে সোহেল তাজ  গতকাল তার ফেইসবুক ষ্ট্যাটাসে লিখেছেন,  ২১ ডিসেম্বর ২০ ২০১৭ আজ আমার মা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী I ১৯৭৫ এর ১৫ই অগাস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কে সপরিবারে নির্মম ভাবে হত্যা করার পর এবং ৩রা নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করার পর যখন দেশ ও জাতি দিশেহারা ঠিক তখন এই মহিয়সী নারী ঝাঁপিয়ে পড়েন জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুন:প্রতিষ্ঠার জন্য আর এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড গুলোর বিচারের দাবিতে I আমার স্মৃতিতে সেই দিনগুলো এখনো সংরক্ষিত হয়ে আছে- সেই দিনগুলো যখন আমার মা ছুটে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে- টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া I অনেক সময় আমাকে সাথে নিয়ে যেতেন বিভিন্ন মিটিং আর অনুষ্ঠানে I আমার মাকে বলতে শুনতাম “আমি আমার স্বামীকে হারিয়েছি, আমার সন্তানেরা এতিম হয়েছে কিন্তু জাতি হারিয়েছে বঙ্গবন্ধুকে আর জাতীয় চার নেতাকে। আমার ক্ষতির চেয়ে জাতির অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেলো আর তাই আজ আমি আমার রক্তে মাখা আঁচল নিয়ে আপনাদের কাছে বিচার দিয়ে গেলাম”। তার এই ষ্ট্যাটাস অনেকটা হতাশার জন্ম দিয়েছে। কারণ মহিয়সী এই রমনীর মৃত্যুদিনটি নীরবে কেটে গেলো তাই ওই হতাশার জন্ম।

গতকাল ছিল তার ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী। রাষ্ট্রীয় বা দলীয় কোন ভাবেই ঘটা করে পালিত হয়নি  মহিয়সী এ রমনীর মৃত্যুবার্ষিকী। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধু দিয়েই গেছেন। নেননি কিছুই। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ রাষ্ট্র থেকে জাতীয় পতাকা পেয়েছেন। এমনকি রাজাকারও জাতীয় পতাকা থেকে বাদ পড়েননি। কিন্তু কোনো দিন একটি জাতীয় পতাকার জন্য কাউকে কিছু বলেননি বেগম জোহরা তাজউদ্দীন।

বঙ্গতাজ পরিবারের প্রাপ্ত তিনটি জাতীয় পতাকা আসার সঙ্গে সঙ্গে চলে গেলেও বিন্দুমাত্র দুঃখ প্রকাশ করেননি এ মহিয়সী রমনী। তবে তিনি জাতীয় পতাকা পেয়েছেন মৃত্যুর পর। বিদায় বেলায় জাতীয় পতাকায় মোড়ানো কফিনে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সালাম।

আওয়ামী লীগের ক্রান্তিকালে যেমন দলের অনেক বড় দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তেমনি মৃত্যুর আগ অবধি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হয়েই কাজ করে গেছেন।

ক্ষমতায় যাওয়ার লোভ কোনো দিন তাকে আঁকড়ে ধরতে পারেনি। আওয়ামী লীগের কর্মী হয়ে রাজনীতি শুরু করে নেতা হয়েই চিরনিন্দ্রায় শায়িত হলেন তিনি। ক্ষমতার মোহ তাকে কোনো দিনই স্পর্শ করতে পারেনি।

সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন ১৯৩২ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জ উপজেলায়। ১৯৫৯ সালে বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তিনি তিন মেয়ে ও এক ছেলের জননী।

বঙ্গতাজ দম্পতির একমাত্র ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ ২০০১ এবং ২০০৮ সালে কাপাসিয়া আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। পরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

পরে তার ছেড়ে দেওয়া আসনে ২০১২ সালে উপনির্বাচনে জোহরা তাজের মেজো মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার বড় মেয়ে শারমিন রিপি প্রবাসী ও ছোট মেয়ে মাহজাবিন মিমি এখন দেশে বসবাস করছেন।

২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেগম জোহরা তাজউদ্দীনের মৃত্যু হয়। আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কাণ্ডারি জোহরা তাজউদ্দীন অনেকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। ২০১৩ সালের নভেম্বরে বাসায় পড়ে গিয়ে তিনি আহত হয়েছিলেন। গতকাল তার ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী নীরবে নিভৃতেই চলে গেলো। শব্দ করেনি বাংলাদেশ।

ড. এ কে এম রিপন আনসারী

এডিটর ইনচীফ

গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *