আপনার নিশ্চয়ই বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের সবকটিকে মনে নেই, কিন্তু তাজমহলকে আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে। এই অসাধারণ সৌধটি ভারতের গর্ভ, এর পিছনে যে গল্প আছে তা অসংখ্য মানুষকে আবেগতাড়িত করে দেয়।
কিন্তু আপনার কি মনে হয় এই দৈত্য আকৃতির সৌধটির গল্প মানে শুধুই অসাধারণ স্থাপত্য কলা এবং অসাধারণ সুন্দর সুন্দর বাগান? না একবারেই নয়। শাহ জাহান এবং মুমতাজের অমর প্রেমকাহিনী ছাড়াও এর একটা রহস্যজনক গল্প আছে। এই গল্প হচ্ছে তাজমহলের ভিতর কিছু রহস্যজনক ঘরের, যেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ। আপনি কৌতূহলী হচ্ছেন নিশ্চয়ই?
এই ঘরগুলি আবিষ্কারের পরেই লোকের মুখে মুখে বিভিন্ন জনশ্রুতি ছড়িয়ে পড়ে। তাজমহলের দর্শনার্থীরা এই ঘরগুলি সম্পর্কে খুবই উৎসাহিত হয়ে পড়ে এবং তারা এই ঘরগুলিকে খুঁজে দেখবার চেষ্টা করে এবং নিজেদের মত করে গুজব ছড়াতে থাকে। কিন্তু আরও যেটা অদ্ভুত সেটা হল সরকার এই ঘরগুলিতে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ করে এগুলিকে সিল করে দিয়েছে কেন? আমরা বরং এই ঘরগুলি সম্পর্কে যে যে জনশ্রুতি ছড়িয়েছে সেগুলো নিয়ে অলোচনা করি।
১। গোপন তোরণ যার ভিতর ১০৮৯ টি কক্ষ থাকতে পারে। বলা হয় যে ওই অন্ধকারাচ্ছন্ন দালানগুলির দিকে যদি আপনি ভাল করে পরীক্ষা করেন, তাহলে দেখবেন যে ওখানে যে তোরণ এবং ভেন্টিলেটর গুলো আছে সেগুলি অন্য আয়তনের মার্বেল দিয়ে বন্ধ করা আছে।
এই তোরণগুলি নাকি এক সিঁড়িতে আপনাকে নিয়ে যাবে যেগুলি আপনাকে অনেক গোপন ঘরের সন্ধান দেবে।
১.১। গোপন তোরণ যেখানে আপনার যাওয়ার সাহস হবে না। আপনি কেন এরকম অন্ধকার ঘরে যেতে চাইবেন? এইখানে এরকম অনেক সিঁড়ি আছে যেগুলি আপনাকে তাজমহলের নিচে কিছু গুপ্ত ঘরে নিয়ে যাবে যেগুলি এখন ইট পাথর দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
১.২। আপনি কি ভিতরে যেতে চাইছেন? এখানে এরকম কয়েক হাজার তোরণ আছে আর এগুলি প্রত্যেকটারই আলাদা কিছু অজানা গল্প আছে।
২. মুমতাজের কবরের পাশে কিছু লুকানো আছে। আমরা সবাই জানি যে এখানে নদীর তিরে মুমতাজের কবর আছে। কিন্তু লোকে যেটা জানেনা সেটা হল এই নদীর পাশে দুতলা উঁচু একটা মার্বেলের কাঠামো লুকানো আছে। কিন্তু এটা এভাবে লুকিয়ে রাখার কারণ কি?
৩। গোপন ধর্মীয় দিক। আর একটা জনশ্রুতির প্রচোলন যেটা আছে সেটা হল, হিন্দুদের মত অনুসারে তাজমহল হল আসলে পুরানো একটা শিব মন্দির। শাহ জাহান তাই মার্বেল দিয়ে এই মন্দিরের সব অংশ ঢেকে দিয়েছেন যাতে শিব মন্দিরের কোন অংশ চোখে না পড়ে।
৩.১। হিন্দু মন্দির হওয়ার প্রমাণ। এই স্তম্ভগুলি আগে হিন্দু দেব-দেবীতে ভর্তি ছিল।
৩.২। কিছু হিন্দু সংযোগ। এটা বলা হয় যে আসলে ১০৮৯ টা ঘর নয়, ২২টা বন্ধ ঘরের অস্তিত্ব আছে। এই ঘরগুলিতে শাহ জাহান সমস্ত হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি এবং ছবি লুকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু এখানে যে প্রশ্নটা ওঠে তা হল শাহ জাহান এরকম করবেনই বা কেন?
৩.৩। শাহ জাহান সব কিছু লুকিয়ে রেখেছেন। এই স্তম্ভগুলি হিন্দু দেব দেবীর মূর্তিতে ভর্তি ছিল।
৪। মানুষ সব গুজব বন্ধ করে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ভেবে দেখছে। যদি অপার্থিব কার্যকলাপকে বিজ্ঞান ধরতে পারে তাহলে এটাই বা বুঝতে পারবে না কেন? মানুষ এগুলিকে সাধারণ বুদ্ধি খাটিয়ে ধরার চেষ্টা করছে। এই তোরণগুলি বন্ধ করে দেওয়ার কারণ হতে পারে যে এই গুপ্ত চেম্বারগুলি মার্বেল দিয়ে তৈরি যা কারবন-ডাই-অক্সাইডের (মানুষের শ্বাস প্রশ্বাসের) সাথে বিক্রিয়া ঘটিয়ে ক্যালসিয়াম কারবোনেটে পরিণত হয়।
৪.১। মার্বেল বিক্রিয়া করে এই রুপ ধারণ করে। যদি ঘরগুলিকে আমাদের জন্য এখন খোলা হয় তাহলে আমরা মার্বেলের দেওয়ালগুলিকে এরকম দেখব। নিচে নামাতে থাকুন এবং তাজমহলের গুপ্ত ঘরের এরকম অনেক ছবি দেখতে পাবেন।
৫। মি. ওক এর বক্তব্য। মি. ওক তাজমহল সম্পর্কে একটা অদ্ভুত গল্প শুনিয়েছেন, ঔরঙজেব নাকি তাজমহলকে তার আসল মালিক রাজা মান সিংহ এর নাতি জয় সিংহ এর কাছ থেকে কিনেছিলেন, মুমতাজের কবরস্থল নির্ধারিত হওয়ার পরে।
৫.১। বিশ্বাস করুন বা নাই করুন। আর এক লেখক ডঃ গডবোলে বলেছেন যে তাজমহল আসলে শাহ জাহান তৈরি করেননি, এটা রাজা মান সিংহ এর প্রসাদ ছিল।
৬। কিছু মানুষ কোন কিছু বিশ্বাস করে না। অনেকে বলে থাকেন যে ঘরগুলি বন্ধ করে রাখার কারণ হল ঘরগুলি ফাঁকা ছিল।
৭। আপনি এই ছবিতে গুপ্ত দরজা দেখতে পাবেন। এই গুপ্ত দরজা যা স্তম্ভগুলির সাহায্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা আপনাকে ওই গুপ্ত ঘরগুলিতে নিয়ে যাবে।
৮। সত্যি না মিথ্যা? আমরা জানিনা আসল সত্যি কি, তবে এই গুপ্ত ঘরগুলির যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত ইতিহাসে কেউ দিতে পারেনি।