ইরানের গুরুত্বপূর্ণ চাবাহার বন্দরের উন্নয়নে বিনিয়োগের ব্যাপারে একসময় যে জাপানকে খুব উৎসাহী দেখা গিয়েছিল, সেই জাপান এখন পিছিয়ে যেতে চাইছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি বলেছেন, কথিত পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে গত জুলাইয়ে আমেরিকা ইরানের উপর অবরোধ আরোপ করার পর সেখানে বিনিয়োগের ব্যপারে সতর্ক হয়ে গিয়েছে জাপান। এতে করে ভারত তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত অক্টোবরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ২০১৫ সালে যে অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির অধীনে ইরানের উপর থেকে কিছু অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছিল, সেই চুক্তি সঠিকভাবে মানছে না ইরান। উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি জানান, মার্কিন অবরোধের বিষয়টি মাথায় রেখেই ভাবতে হচ্ছে জাপানকে। ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি সম্প্রতি চাবাহার বন্দরের প্রথম অংশের উদ্বোধন করেন। এ অংশের নাম হলো শহিদ বেহেশতি বন্দর। পাকিস্তানকে এড়িয়ে আফগানিস্তানের সাথে যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ করতে এই বন্দর ভারতকে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত অক্টোবরে চাবাহার বন্দর ব্যবহার করে ভারত প্রথম আফগানিস্তানে গম পাঠিয়েছে।
জাপান ছাড়াও চাবাহার বন্দর উন্নয়নের আগ্রহ দেখিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন। বেইজিং এরই মধ্যে পাকিস্তানের গোয়াদার বন্দর উন্নয়নের কাজ করেছে, যেটা চীনের ‘ওয়ান বেল্ট অ্যান্ড ওয়ান রোড’ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভারতীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, জাপান অংশ নিলে ব্যাপারটা রাজনৈতিকভাবে আরো তাৎপর্যপূর্ণ হতো। তাছাড়া, বিদেশি সাহায্যকারী হিসেবে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতিও বাড়িয়ে দিত তারা।
ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে পারস্য উপসাগরের বাইরে অবস্থিত চাবাহার বন্দর ভারতের কাছে মধ্য এশিয়ার প্রবেশদ্বারের মতো। ভারতে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত কেনজি হিরামাতসুকে উদ্ধৃত করে সংবাদে প্রকাশ, জাপান ভারতের সঙ্গে এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করতে আগ্রহী। তিনি বলেছিলেন যে, চাবাহার বন্দরের উন্নয়নে ভারতের পাশাপাশি কাজ করার জন্য তেহরান ও নয়াদিল্লির সঙ্গে কথা বলছে জাপান সরকার। রিপোর্টে হিরামাতসুকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘এ অঞ্চলকে আরো অবাধ ও মুক্ত করতে আমরা সংযোগ প্রকল্পের ব্যপারে আগ্রহী। আর চাবাহারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বন্দর আঞ্চলিক সংযোগের ক্ষেত্রে উত্তম… আমরা জানি না কখন এটা বাস্তবায়ন হবে, কিন্তু আমরা আমাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছি।’
কিন্তু আগের এই অবস্থান থেকে সরে আসতে চাইছে জাপান। যা বোঝা গিয়েছিল গত সেপ্টেম্বরে জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আলোচনার পর। ইন্দো-জাপান যৌথ ঘোষণার কোথাও চাবাহার বন্দরের উল্লেখ নেই। আসলে আমেরিকার সামরিক মিত্র হিসেবে মার্কিন চাপের কাছে জাপান অনেক বেশি অসহায়, এমন মন্তব্য করেছেনন ভারতের প্রাক্তন কূটনীতিক দিলীপ সিনহা, যিনি ইরান নিয়ে বহু কাজ করেছেন।