নিউইয়র্কে বোমা হামলা

Slider সারাবিশ্ব

6b86e31e042a71eac468c60f6f78f2a0-5a308a470dd7a

 

 

 

 

গত সোমবার সকালে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে বোমা হামলায় কেউ মারা যায়নি—এটা স্বস্তির বিষয়। কিন্তু সাধারণ মানুষের ওপর এ রকম চোরাগোপ্তা হামলার প্রবণতা যে বন্ধ হচ্ছে না, তা যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাই এবং শান্তিকামী সব মানুষকে অশুভ সন্ত্রাসবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।

সন্দেহভাজন বোমা হামলাকারী ব্যক্তি একজন অভিবাসী বাংলাদেশি—এই তথ্য যারপরনাই দুর্ভাগ্যজনক। শুধু যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অভিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য নয়, খোদ বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও বাংলাদেশি সমাজের জন্যও। আমরা উদারপন্থী গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত হতে চাই, যদিও আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশকে ‘মধ্যপন্থী মুসলিম দেশ’ বলে বর্ণনা করে থাকে। আমাদের এই ভাবমূর্তিও যেন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের জোরের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করতে হবে যে সন্দেহভাজন হামলাকারী আকায়েদ উল্লাহ বাংলাদেশ, বাংলাদেশি বা মুসলমান সম্প্রদায়—এসবের কোনো কিছুরই প্রতিনিধিত্ব করেন না। এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটায় তারা বিচ্ছিন্ন সমাজবিরোধী, মানবতাবিরোধী অশুভ শক্তির প্রতিনিধি, যে শক্তিকে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে।

আমেরিকান সমাজে এবং রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এই হামলার সম্ভাব্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া ভাবনার বিষয়। ঘটনার পরপরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর দেশে বিদ্যমান অভিবাসনব্যবস্থার ‘ভয়ংকর ক্ষতিকর’ দিকের কথা পুনরুল্লেখ করে বলেছেন যে তিনি এই ব্যবস্থা উন্নত করতে বদ্ধপরিকর, যেখানে ‘আমাদের দেশ’ ও ‘আমাদের জনগণের’ স্থান হবে সবকিছুর আগে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসননীতির বিরুদ্ধে আমেরিকান সমাজে প্রবল প্রতিবাদ আছে। কেননা তা সংকীর্ণ, বহুত্ববাদী নীতির প্রতিকূল এবং বর্ণবাদী বৈষম্যমূলক। অন্যদিকে এই সংকীর্ণতার পক্ষে কিছু সমর্থনও সে দেশে আছে। এ রকম পরিস্থিতিতে অভিবাসী সম্প্রদায়ের কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যক্তির দ্বারা সন্ত্রাসবাদী হামলা পরিচালিত হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকদের অভিবাসনবিরোধী অবস্থান জোরদার করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। আর হামলাকারীরা ইসলাম ধর্মাবলম্বী হলে পুরো মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্যই বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাই আকায়েদ উল্লাহর মতো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রবল সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত।

কিন্তু কাজটা যে খুব সহজ নয়, তা বেশ স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী আকায়েদ উল্লাহ পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন যে তিনি হামলা চালাতে চেয়েছেন ইসলামিক স্টেটের ওপর মার্কিন বাহিনীর হামলার প্রতিশোধ নিতে। ইতিমধ্যে ইসলামিক স্টেটের মূল ঘাঁটির পতন ঘটেছে এবং সংগঠনটি অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। কিন্তু আকায়েদ উল্লাহর মতো ‘লোন উলফ’ বা ‘একাকী নেকড়ে’দের নির্মূল করা অত্যন্ত কঠিন। সেই কঠিন কাজটা সবাই মিলে করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *