হাসপাতালের লিফটে আটকা পড়ে হাঁসফাঁস

Slider খুলনা

1d6ae296d8dce3f72f2a7b3efa19e53a-5a13902b3ad21

 

 

 

 

বেলা দেড়টা। স্বামী সৈয়দ জাহিদুল ইসলামকে ডায়ালাইসিস করতে রেখে তাঁর জন্য খাবার কিনতে গিয়েছিলেন স্ত্রী সৈয়দা রশ্নী সুলতানা। ২০ মিনিট পর খাবার কিনে ফিরে এসে হাসপাতালের লিফটে ওঠেন তিনি। দরজা বন্ধ হওয়ার পর তৃতীয় তলায় যাওয়ার সুইচ চাপেন তিনি। কিন্তু লিফট আর ওপরে ওঠেনি। দরজাও খোলেনি। ঘণ্টা খানেক পর তাঁকে লিফটের ভেতর থেকে বের করা হয়।

ঘটনাটি ঘটেছে আজ সোমবার খুলনা নগরের শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে।

সৈয়দা রশ্নী সুলতানা আজ বিকেলে ওই হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের সামনে বসে বলেন, তাঁদের বাড়ি বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার সৈয়দ মহল্লা গ্রামে। আবু নাসের হাসপাতালে প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার তাঁর স্বামীকে ডায়ালাইসিসের জন্য নিয়ে আসেন। আজ বেলা একটায় তাঁর স্বামীর ডায়ালাইসিস শুরু হয়। এ সময় রোগীকে কিছু খাওয়াতে হয়। এ জন্য খাবার কিনে দুইটা বাজার মিনিট দশেক আগে হাসপাতালের ৩ নম্বর লিফটে ওঠেন তিনি। দরজা বন্ধ হওয়ার পর লিফটটি বিকল হয়ে পড়ে। কাছে কোনো মুঠোফোন না থাকায় তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন। লিফটের দরজায় লাগাতার চাপড়াতে থাকেন এবং দরজা খোলার চেষ্টা করেন। কাজ হচ্ছিল না। একপর্যায়ে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত ও আহত হয়ে পড়েন। পৌনে তিনটার দিকে তিনি বাইরে থেকে আওয়াজ শুনতে পান। তাঁকে উদ্দেশ করে বলা হচ্ছিল আপনি চিৎকার থামান, আপনাকে উদ্ধার করা হচ্ছে। এরপর তাঁকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

রশ্নী সুলতানা বলেন, ‘ঘণ্টা খানেক পরও যখন সাড়া মিলছিল না, তখন মৃত্যুভয় আমাকে পেয়ে বসে। আমার ছোট ছোট তিন সন্তানের কী হবে, সে চিন্তা আমাকে ভর করে।’

উদ্ধারকাজ প্রত্যক্ষ করেছেন এ রকম পাঁচজন রোগীর স্বজন বলেন, একজন লিফটম্যান তালা খুলে রশ্নীকে উদ্ধার করেন। উদ্ধারের পর তাঁর চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল। প্রচণ্ড ভীত দেখাচ্ছিল তাঁকে। তাঁর হাতের বেশ কয়েক জায়গায় কালসিটে দাগ পড়ে গেছে। নার্সরা তাঁকে প্রাথমিক সেবা দেন।

হাসপাতালের দুজন লিফটম্যান জানান, বহির্বিভাগ বন্ধ হওয়ার পর ৩ ও ৪ নম্বর লিফটটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর শুধু জরুরির বিভাগের দিকের ৫ নম্বর লিফটটি চালু থাকে।

রশ্নী সুলতানা বলেন, ‘আমাকে ভেতরে রেখে কেন লিফটে তালা দেওয়া হলো! কেন দেখা হলো না, ভেতরে কেউ আছে কি না। আমি লিখিত অভিযোগ করব।’

হাসপাতালের পরিচালক বিধান চন্দ্র গোস্বামী বলেন, ‘ওই লিফটম্যানের কাছে বিষয়টি জেনেছি। লিফটে ওঠার সময় লিফটম্যান বলেছিল লিফটটা বন্ধ। কিন্তু রোগীর ওই স্বজন তা না শুনে লিফটে উঠে পড়েন। এরপর লিফট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁর চিৎকারে মিনিট দু-একের মধ্যে তিনি লিফটটি খুলে তাঁকে বের করেন। তবে এ বিষয়ে এখনো রোগীর স্বজনের বক্তব্য জানতে পারিনি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *