একটি চিঠি…সেই মেয়েটির প্রতি যে আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছিল

বাধ ভাঙ্গা মত বিচিত্র

image_157153.letter penআমার বয়স ছিল ১৫ আর তোমার ১৩। ঠিক এক বছর ৪ মাসের ব্যবধান। আমরা একই স্কুলে পড়লেও তোমাকে আগে কখনো দেখিনি। প্রতি শুক্রবার রাতের পরিচিত বন্ধুদের বাড়িতে পার্টি আর মজা হতো বন্ধুদের আধুনিক বাবা-মায়ের সম্মতিতে।
একটি পার্টিতে তোমার সঙ্গে আমার দেখা হয়। আমরা এক সময় কথা বলেছিলাম যখন তুমি আমার সঙ্গে ভাব জমানোর চেষ্টা করছিলে। আমি আসলে স্কুলের তেমন ছেলে নই যাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায় মেয়েরা।
একদিন পার্টি শেষে আমরা তিন বন্ধু ডায়নিং রুমে তিনটি আলাদা ম্যাট্রেসে শুয়েছিলাম। যখন আলো বন্ধ হয়ে গেলো তখন তুমি আমার হাত তোমার বুকে টেনে নিয়েছিলে। ওই রাতে আমরা আট মিনিটের মাথায় দুজন দুজনের কৌমার্য বিসর্জন দিলাম।
ঘটনা শেষ হওয়ামাত্র আমরা বুঝতে পারলাম কি করেছি! আমরা কনডম ব্যবহার করিনি। আমি কখনো ভাবতে পারিনি এই বয়সে এত দ্রুত আমি সেক্স করবো। আমরা এতটাই অনভিজ্ঞ ছিলাম যে খোলামেলা হতেও ঘাম ঝরাতে হয়েছিল।
ওই রাত কাটতেই সকালে ঘুম ভাঙলো বন্ধু যখন আতঙ্কের চেহারা নিয়ে আমাকে ধাক্কা দিচ্ছিল। উঠেই দেখলাম আমার ওই বন্ধুর বাবা এবং দুজন পুলিশ অফিসার। আমাকে আমার কাপড় ব্যাগে ভরতে বলা হলো। তাদের সঙ্গে চোখ কচলাতে কচলাতে বের হলাম আমি। বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখলাম আরো অনেক পুলিশ তোমাকে ঘিরে রয়েছে। আমার বন্ধুরা আমাকে নির্দোষ বলে চিৎকার করছিল। কিন্তু আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো তোমাকে ধর্ষণের অভিযোগে।
আমি শুধু কাঁদছিলাম আর ভাবছিলাম এই দুঃস্বপ্ন কখন শেষ হবে। আমার বাবাকে ডাকা হলো এবং তিনিও এসে আমার সঙ্গে কাঁদলেন।
তোমার দেহে ও কাপড়ে আমার নখ, স্যালিভা এবং চুল পাওয়া গেলো নমুনা হিসেবে।
তদন্ত চলাকালে টানা তিন মাস ধরে প্রতি মাসে জামিন নিতে হলো আমাকে। স্কুলে অন্যদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমাকে স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দিলো না কর্তৃপক্ষ। আমাকে আলাদাভাবে স্কুলে বসতে দেওয়া হতো। পড়ার বিষয় বাইরে থেকে নিতে হতো। অন্যদের সঙ্গে কথা যেন বলতে না পারি সে জন্য পাহারায় রাখা হতো আমাকে। আমি হয়ে পড়লাম পুরোপুরি অন্তর্মুখী।
জানুয়ারিতে আমি অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলাম। আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে ক্রিসমাস ছিল ওটা। ওই রাতের পর আমি তোমাকে আর দেখিনি। ছয় বছর ধরে আমি সেই রাতের দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি। সেই থেকে সবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমি আর আমার পার্টনারদের ওপর ভরসা করতে পারি না। নিজেকে ধর্ষণকারীর পরিচয় বহন করতে হয়েছিল এবং আমি বুঝতে পেরেছিলাম যারা সত্যিকার ধর্ষণের শিকার হয়, তার গল্প কেমন হতে পারে।
পুরনো জীবনের বন্ধুদের সঙ্গে সামান্য বন্ধন রক্ষা করে চলছিলাম। কিন্তু তুমি যা করেছো তা আমি কোনোদিন ভুলবো না। আমি জানি না কেন তুমি বলেছিলে যে আমি তোমাকে ধর্ষণ করেছি। হয়তো তুমি মানতে পারোনি যে এত সহজে তুমি নিজেই সেক্স করেছো অথবা করার পর হয়তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলে।
কিন্তু যাই হোক, কোনোদিন আমি তোমাকে ক্ষমা করতে পারবো না। মেয়েদের সম্পর্কে চিরদিনের মতো আমার ধারণা তুমি খারাপ করে দিয়েছো এবং কোনোদিন আমি কাউকে বিশ্বাস করতে পারবো না।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *