লাশ নয়, জীবিত ফিরে এল শিশুটি

Slider নারী ও শিশু

41e759a5a6ceda5ddb8ef0e2979b4b01-59e4e243ae47f

 

 

 

 

কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের কমলপুর জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র জাসিমুল হক (১৩)। খোরশেদ আলম (৩৮) নামের এক শিক্ষক গত ২১ সেপ্টেম্বর তাকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন। এতে ব্যর্থ হয়ে ওই দিনই শিশুটিকে হত্যা করেন খোরশেদ। পরে তিনি লাশটি বস্তাবন্দী করে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেন।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর হত্যার দায় স্বীকার করে খোরশেদ কিশোরগঞ্জের আদালতে ওই জবানবন্দি দিয়েছিলেন। এরপর থেকে জাসিমুলের লাশের খোঁজ করে আসছিলেন তার পরিবারের সদস্যরা। দুই সপ্তাহ পর গতকাল রোববার জাসিমুল জীবিত ফিরে এসেছে। জীবিত ফিরে পেয়ে শিশুটির পরিবারে আনন্দের শেষ নেই।

খোরশেদ আলম চট্টগ্রামের খুলশী থানাধীন লালখান বাজার এলাকার আমীন সেন্টার এবাদত খানার ইমাম ও চট্টগ্রামের তালিমুল কোরআন একাডেমির শিক্ষক। জাসিমুলের বাড়ি ভৈরব শহরের ভৈরবপুর উত্তরপাড়া মহল্লায়। জাসিমুলকে গতকাল রোববার পুলিশ উদ্ধারের পর বিকেলে তাকে কিশোরগঞ্জের আদালতে হাজির করে। জাসিমুল আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দি রেকর্ড করেন জ্যেষ্ঠ মুখ্য বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ আবদুর নূর। পরে বিচারক জাসিমুলকে তার বড় ভাই নাইমুর রহমানের জিম্মায় দেন।

১ অক্টোবর ভৈরব থানায় সাংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ জানায়, আগের দিন ৩০ সেপ্টেম্বর খোরশেদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, ২১ সেপ্টেম্বর তিনি জাসিমুলকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হওয়ায় ওই দিনই জাসিমুলকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেন।

আজ সোমবার জাসিমুলদের ভৈরব পৌর শহরের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। জাসিমুল ও তার পরিবারের সদস্যদের কথা বলে জানা গেছে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর পরিবারের সদস্যদের ওপর অভিমান করে জাসিমুল বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। জাসিমুল জানায়, সে একপর্যায়ে চট্টগ্রামে চলে যায়। চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে সাকিব নামের এক মাদ্রাসা ছাত্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সাকিব তাকে খোরশেদের কাছে নিয়ে যায়। খোরশেদ তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে চেয়েছিল। রাজি না হওয়ায় খোরশেদ তার গলা চেপে ধরেন। এরপর আর তার কিছু মনে পড়ছে না। পরে জাসিমুল দেখতে পায়, সে একটি ক্যাম্পে রয়েছে। সে জানতে পারে, এটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প। পরিবারের কারও ফোন নম্বর মুখস্থ না থাকায় সে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।

জাসিমুলের বড় ভাই নাইমুল ইসলাম বলেন, ‘হত্যার কথা জানার পর আমরা লাশের খোঁজে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। পুলিশও তল্লাশি চালাচ্ছিল। কয়েক দিন আগে চট্টগ্রামের এক ব্যক্তি জাসিমুলের ছবি পাঠায়। এরপর আমরা খোঁজ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে জাসিমুলকে শনাক্ত করি।’

সন্তান ফিরে পাওয়ায় আনন্দের শেষ নেই মা রাবেয়া বেগমের। রাবেয়া বেগম বলেন, ‘আমাদের জানানো হয়েছে যে জাসিমুলকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর থেকে লাশের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ছেলেকে জীবিত ফিরে পাব চিন্তাও করিনি।’

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ভৈরব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং এলাকার একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাসিমুলের সন্ধান পান পরিবারের সদস্যরা। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে। আপাতত খোরশেদকে হত্যার দায় থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২১ সেপ্টেম্বর জাসিমুলের বড় ভাই নাইমুল ইসলামের কাছে এক ব্যক্তি ফোন করে জাসিমুলকে অপহরণের কথা জানিয়ে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। পুলিশ ওই ফোনের সূত্র ধরে ২৮ সেপ্টেম্বর সাকিবকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করে। সাকিব যাত্রাবাড়ীর তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্র। সাকিব ২৯ সেপ্টেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এতে সাকিব জানিয়েছিল, খোরশেদ তার পূর্বপরিচিত। খোরশেদ ছেলে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে বিকৃত যৌনকর্মে লিপ্ত হতেন। সাকিব খোরশেদের যৌন লালসা মেটানোর জন্য শিশুদের জোগাড় করার কাজ করত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *