দুঃখ ঘোচেনি পরিবারের, শিগগির অভিযোগপত্র

Slider ঢাকা

2686509fa01c4e3ec8063ae72f2d2f2b-59c95aeb73128

টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে তরুণী ধর্ষণ ও হত্যা ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও মামলাটির তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। ঘোচেনি পরিবারটির দুঃখও। ধর্ষণের শিকার রূপা খাতুনের বোন ও ভাইকে সরকারের পক্ষ থেকে চাকরির আশ্বাস দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহবুব আলম গতকাল বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হবে।

রূপার ভাই হাফিজুর রহমান বলেন, তদন্তকাজ দ্রুত হচ্ছে এ জন্য তিনি সন্তুষ্ট। একইভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়, সে জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন। তবে পরিবারের উপার্জনক্ষম বোনটিকে হারিয়ে তাঁরা দুর্দশায় পড়েছেন বলে জানান।

রূপা (২৫) সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ী গ্রামের জেলহাজ প্রামাণিকের মেয়ে। একটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মী ছিলেন তিনি। গত ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহে যাওয়ার পথে চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার হন তিনি। তাঁকে হত্যা করে লাশ মধুপুর বন এলাকায় ফেলে যান বাসটির শ্রমিকেরা। পুলিশ রাতেই লাশটি উদ্ধার করে। লাশে আঘাতের চিহ্ন থাকায় পুলিশ বাদী হয়ে মধুপুর থানায় হত্যা মামলা করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মধুপুরের অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক কাইয়ুম খান সিদ্দিকী গতকাল বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের সদ্যবিদায়ী আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সাইফুর রহমান খান ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জমা দেন। তিনি উল্লেখ করেন, মাথায় আঘাতজনিত কারণে রূপার মৃত্যু হয় এবং এর আগে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। ময়নাতদন্তের সময় সংরক্ষিত রূপার দাঁত ও পরিধেয় বস্ত্র আদালতের অনুমতি নিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এর প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যেই পাওয়া যাবে। মামলার তদন্তও শেষ পর্যায়ে। এক সপ্তাহের মধ্যে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২৫ আগস্ট রূপা বগুড়ায় শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নেন। এরপর বগুড়া থেকে ময়মনসিংহে যাওয়ার জন্য সন্ধ্যা সাতটার দিকে ছোঁয়া পরিবহনের ওই বাসে ওঠেন। রাত ১০টা পর্যন্ত রূপার সঙ্গে তাঁর বড় ভাই হাফিজুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ ছিল। এরপর রূপার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন খোঁজ না পেয়ে হাফিজুর ময়মনসিংহে যান এবং কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে ২৮ আগস্ট হাফিজুর মধুপুর থানায় যান। সেখানে লাশের ছবিদেখে তা রূপার বলে শনাক্ত করেন। পরে হাফিজুরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাসচালক, সুপারভাইজার, সহকারীসহ পাঁচজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, চালক হাবিবুর (৪৫), সুপারভাইজার সফর আলী (৫৫), সহকারী শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীরের (১৯) বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে গণধর্ষণের অভিযোগ এবং দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় হত্যার অভিযোগ, ২০১ ধারায় লাশ গুমের অভিযোগ এবং ৩৪ ধারায় সহায়তার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তাঁরা বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন। অভিযোগপত্রে ২০-২২ জনকে সাক্ষী করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে পুলিশ, চিকিৎসকসহ পাঁচ-ছয়জন সরকারি কর্মকর্তা।

তদন্তকারী কর্মকর্তা কাইয়ুম খান সিদ্দিকী বলেন, গত ২৯ আগস্ট বাসের তিন সহকারী শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীর এবং ৩০ আগস্ট চালক হাবিবুর ও সুপারভাইজার সফর আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

রূপার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রূপা ও তাঁর ছোট বোন পপি খাতুন একসঙ্গে চাকরি করতেন। তাঁদের আয় দিয়েই সংসার চলত। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গত ঈদুল আজহার আগের দিন তাঁদের বাড়িতে সমবেদনা জানাতে গিয়ে রূপার বোনকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ সময় ছোট ভাই রোমান হোসেনকেও একটি বেসরকারি চাকরি জুটিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দেন সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক।

রূপার বোন পপি খাতুন বলেন, ‘বড় আপা মারা যাওয়ার পর অনেকেই সমবেদনা জানিয়েছেন। আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সমবেদনা জানাতে এসে আমাকে চাকরি দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত এর কোনো খবর জানি না। এই চাকরির আশায় পুরোনো চাকরিতেও আর যোগ দেই নাই।’

জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা বলেন, ‘পপির চাকরির জন্য মন্ত্রী মহোদয় দায়িত্ব নিয়েছেন। আশা করি দ্রুতই এটি বাস্তবায়ন হবে। রূপার ছোট ভাইয়ের যোগ্যতা অনুযায়ী বেসরকারি চাকরির চেষ্টা চলছে। সার্বিকভাবে পরিবারটি আমাদের নজরে আছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *