রোহিঙ্গা ইস্যুতে রশির ওপর দিয়ে হাঁটছে ভারত

Slider সারাবিশ্ব

 

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সমালোচনায় অনীহা নয়া দিল্লির। এতে বাংলাদেশ অসন্তুষ্ট। বাংলাদেশের এই অসন্তোষ দূর করে শান্ত করার জন্য পুরনো প্রচলিত কূটনৈতিক হাতিয়ার ব্যবহার করছেন ভারতের টুইটার-বান্ধব পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তার সেই হাতিয়ারের মধ্যে রয়েছে- গভীর রাতে ফোন করা, অঘোষিত মিটিং ও সমর্থন প্রদর্শন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় টান টান রশির ওপর দিয়ে হাঁটছে ভারত। ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন সাংবাদিক চারু সুদন কস্তুরি। তিনি লিখেছেন, এরই মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বেশ কয়েক দফা দেখা-সাক্ষাত হয়েছে সুষমা স্বরাজের। তবে সেগুলো সৌজন্য সাক্ষাত। তাতে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কোনো আলোচনাই হয় নি। চারু সুদন তার প্রতিবেদনে লিখেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের ঘাড়ে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন নয়া দিল্লি ভারতে অবস্থানরত প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে। এ সময়ে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সহানুভূতি প্রদর্শনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সুষমা স্বরাজ। ১৫ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ হিসেবে ৭০ লাখ কিলোগ্রাম খাবার ও কয়েক হাজার মশারি সরবরাহের জন্য গৃহীত কর্মসূচি অপারেশন ইনসানিয়াতের ঘোষণা দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর কয়েক ঘন্টা পরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেন সুষমা। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বর্তমানে কমপক্ষে ৪ লাখ ২১ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। চারু সুদন লিখেছেন, এ সপ্তাহের শুরুতে ইতিহাদ এয়ারওয়েজ ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবু ধাবি থেকে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়েছেন। ওই একই ফ্লাইট ব্যবহার করেছেন সুষমা স্বরাজও। ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, এ সময়ে বিমানে দু’নেত্রীর মধ্যে কথাবার্তা হয়েছে। সোমবার শেখ হাসিনার সঙ্গে আবার নিউ ইয়র্কে সাক্ষাত হয়েছে সুষমার। আগামী মাসে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার জন্য ঢাকা সফরে আসার কথা রয়েছে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। সরকারি সূত্র মতে, এরই মধ্যে দু’নেত্রীর মধ্যে যে মিটিং হয়েছে সেগুলো সৌজন্য ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা। এতে রোহিঙ্গা ইস্যু স্থান পায় নি। নিউ ইয়র্কে শেখ হাসিনা ও সুষমা স্বরাজের মধ্যে আলোচনার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভীশ কুমার বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওই মিটিংগুলো অধিকতর সৌজন্য প্রকৃতির ছিল। এটা ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত বৈঠক। এ সময়ে রোহিঙ্গা ইস্যু সামনে আসে নি। কিন্তু সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তারা বলছেন, সুনির্দিষ্টভাবে শেখ হাসিনার সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের আন্তরিক সম্পর্ককে ব্যবহার করে বাংলাদেশের উদ্বেগ প্রশমনের চেষ্টা করতে নির্দেশনা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হাসিনা-সুষমার মধ্যকার এই ব্যক্তিগত সম্পর্ক অনেক বছরের। শাড়ির প্রতি ভালবাসা থেকে তাদের এই সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। শেখ হাসিনা ও সুষমা স্বরাজ একে অন্যকে শাড়ি উপহার দিয়েছেন। অতীতে তারা তাদের পছন্দ ও অপছন্দ নিয়ে আলোচনা করেছেন। গত সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাতে তিনি ঢাকার উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন । এরপরেই বাংলাদেশের সঙ্গে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য ভূমিকা রাখতে সুষমা স্বরাজকে বলা হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্করকে হাই কমিশনার মুয়াজ্জেম আলী বলেছেন, মিয়ানমারের প্রসঙ্গে অবস্থান পাল্টাতে হবে নয়া দিল্লিকে। ঢাকা এমনটাই চায়। একই সঙ্গে মিয়ানমারকে চাপ দিতে হবে, যাতে সেখানে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করে মিয়ানমার। কমে আসে শরণার্থীদের প্রবাহ, যা বাংলাদেশকে বেশি আক্রান্ত করছে।
ওই সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যেভাবে সঙ্কট মোকাবিলা করছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশের ইঙ্গিত দেয়। তারা ‘বিরত থাকার ও পরিপক্বতার’ আহ্বান জানায়। চারু সুদন লিখেছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হয়ে উঠেছে টান টান রশির ওপর দিয়ে হাঁটার মতো। রীতি অনুযায়ী, মানবাধিকারের ইস্যুতে কোনো দেশের ওপর বাইরের চাপের বিরোধিতা করে ভারত।  এর কারণ, তারা মনে করে কাশ্মীর ইস্যুতে নয়াদিল্লির দিকে একই রকম ঢিল ছোড়া হতে পারে। এ উদ্বেগের কারণেই ভারত বিরত থাকে। মিয়ানমারের বর্তমান নেত্রী অং সান সুচি ঝুঁকে পড়েছেন চীনের দিকে। এ অবস্থায় মিয়ানমারের এই ঝুঁকে পড়া নিয়েও ভারত উদ্বিগ্ন। এরই মধ্যে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে যে, তারা ভারতে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদেরকে নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখছে। একটি পুরো শরণার্থী গ্রুপকে বের করে দেয়ার জন্য এটাকে যথেষ্ট উপযোগী কারণ হিসেবে মনে করছেন না কূটনৈতিক কোরের অনেক সদস্য।
কিন্তু বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনাকে হতাশ করার সামর্থ রাখে না দিল্লি। কারণ, গত ৯ বছরে তারা ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং আঞ্চলিক সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল অংশীদার হয়ে উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *