মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেকারত্বের ছোবল থেকে ৯.১ শতাংশ তরুণ-তরুণী কে বাঁচান !

Slider গ্রাম বাংলা

Photo-1-4
এম আরমান খান জয় :

“হত্যা আর সন্ত্রাসের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে— ব্যথিত জীবন ,আজ বড় দুঃসময়-ইটের দেয়ালে বন্দী ফুলের চিৎকার,ওই শোনো, কাতর কান্নার ধ্বনি ভেসে আসে নিষিদ্ধ বাতাসে। রক্তাক্ত করেছে যে বুক, নতজানু সে-মানুষ হয়নি কখনো।”
জেগে ওঠ যুবকেরা- প্রতিবাদী আগুনের লাভায়, একবার বলে উঠি আমরা। “দুঃশাসন” “জঙ্গিবাদ” “সন্ত্রাস” মানি না মানব না। ভুল মানুষের কাছে আমরা ভুল শিক্ষায়, নতজানু হব না। বিশ্বেও সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ নির্মূলে আমরা বদ্ধপরিকর।
বলতে চাই তরুণরাই গড়বে শান্তিময় বিশ্ব “তরুণের দেশ” আজকের বাংলাদেশ। জাতির জনকের “সোনার বাংলার” অর্থনৈতিক মুক্তির যুদ্ধে অগ্রণী সৈনিক আজকের যুবকেরা। ভুলে গেলে চলবে না, বাংলার তরুণেরাই ছিনিয়ে এনেছিল একাত্তরের স্বাধীনতার লাল সূর্য। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে “জয় বাংলা” শ্লোগানের শক্তি ধরে পরাজিত করেছিল বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সশস্ত্র “পাকিস্তান বাহিনীকে”। শহীদের তালিকায় নাম লিখিয়েছিল হাজার হাজার যুবক-যুবতী। বাংলার যুবরাই ভিন দেশি ভাষার রাহুগ্রাস থেকে মাতৃভাষাকে রক্ষা করতে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত করেছিল। বুকের পাঁজরে গুলি খেয়ে রক্ত দিয়ে লিখে গেছে “মোদের গরব মোদের আশা আমরি বাংলা ভাষা”। বীরত্বের ইতিকথায় বাংলার যুব সমাজের গৌরবান্বিত অধ্যায় স্মরণ করেছেন বিখ্যাত গুণীজনরা। এ.পি.জে. আব্দুল কালাম আজাদ তাঁর জীবনের শেষ সফরে বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন “নদীমাতৃক বাংলাদেশ” আর “তারুণ্য দীপ্ত” মেধাবী যুব সমাজকে নিয়ে। ২০১৪ সালে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী “বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে” তাঁকে দেওয়া গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে, দীর্ঘ বক্তব্যের সবচাইতে প্রশংসনীয় অধ্যায় ছিল “বাংলাদেশের যুব সমাজ”। তাঁর ভাষায় যুব সমাজকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার “সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ” বলে উল্লেখ করেন।
সুখের কথা, যুব বান্ধব বর্তমান সরকার ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেটে ৩ লক্ষ ৪১হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করেছেন। যার অগ্রভাগে রয়েছে যুব সমাজের উন্নয়ন। অর্থাৎ দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি। বর্তমান সরকার বিশ্বাস করে, উন্নয়নের জন্য যুবকদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতেই হবে। সমৃদ্ধ দেশ গড়বার লড়াইয়ে তরুণরাই আজ অগ্রপথিক। আজকের বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় ৬৬ শতাংশ যুব সমাজ বদ্ধপরিকর। আমরা যার- যার অবস্থান থেকে দেশের জন্য কাজ করছি। আমরাই বাংলদেশকে গড়ব। ইতোমধ্যেই তরুণরা জানান দিচ্ছে, লাল সবুজের নিশান নিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের ইতিহাসে তরুণরাই মাথা তুলে দাঁড়াবে। সাতক্ষীরা জেলার সাধারণ ঘরের ছেলে, “মোস্তাফিজ” আজ বিশ্ব ক্রিকেটের এক চমকের নাম। আর তাঁর হাতে আছে লাল সবুজের নিশান। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে, রক্তের উত্তরাধিকারী হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয় আজ তারুণ্যের অহঙ্কার। “ডিজিটাল বাংলাদেশে” তথ্য প্রযুক্তি আজ ৬৬ শতাংশ যুব সমাজের উন্নয়নের “যাদুর কাঠি”।
শুধু উন্নয়ন নয়, আদর্শিক বাংলাদেশকে গড়ে তুলবার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশিত পথে বাংলার যুব সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিশ্রুতিশীল উৎপাদনক্ষম ও কর্মপ্রত্যাশী যুব গোষ্ঠীকে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ, ঋণ প্রদানের মধ্য দিয়ে, উন্নত বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আত্মকর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে, সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবার লক্ষ্যে কাজ করছেন। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের যুব সমাজ বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে। “জেগেছে যুব জেগেছে দেশ, লক্ষ্য ২০২১’এ উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ”
সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদকে রুখতেই হবে। জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার নেতৃত্বে যুব সমাজ আজ ঐক্যবদ্ধ। আদর্শিক অবস্থান থেকে যুব নেতৃত্ব আজ সময়ের দাবি।
বৈশ্বিক জঙ্গিবাদের নিশানায় পরিণত হয়েছে, বিশ্ব যুব সমাজ। যুগে যুগে যুবকেরা যে বীরত্বেও ইতিহাস গেঁথেছে সুগন্ধি ফুলের মালায় – ইতিহাসের পাতায় পাতায়। সেই অর্জনকে কিছু মাত্র “পথহারা ” “ঘর পালানো” জঙ্গি নিশানধারী যুবক-যুবতী কলঙ্কিত করতে পারে না। তা আমরা হতে দিব না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বেকার যুবক পরিচয়ে কে পরিচিত হতে চায়! অথচ বাংলাদেশের মোট ২ কোটি যুব শ্রমশক্তির মধ্যে ১৯ লাখকেই এই পরিচয়ের ঘানি বহন করতে হচ্ছে। তরুণদের বেকারত্ব সমাজ ও ব্যক্তি সবার জন্যই অপচয়। তাদের সঠিকভাবে কাজে না লাগানোর অর্থ হচ্ছে এই যে শ্রমশক্তির একটি বিশাল অংশ থেকে দেশ ও তার অর্থনীতি কোনো সুফল পাচ্ছে না। অন্যদিকে তারা পরিবারের ওপর নির্ভশীল থেকে যাচ্ছে, কারণ বেকার অবস্থায় তাদের জন্য আর কোনো সহায়তা নেই। দ্বিতীয়ত, তরুণ বয়সে বেকারত্বের কারণে তাদের ওপর যে প্রাথমিক ক্ষত সৃষ্টি হয়, তার প্রভাব সারা জীবনই থেকে যায়। গবেষণায় দেখা যায়, দেরিতে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার কারণে তার প্রভাব পড়ে ভবিষ্যতের কর্মজীবন ও উপার্জনের ওপরও। আবার তরুণ সমাজের বেকারত্ব সমাজের স্থিতিশীলতার জন্যও ভালো কিছু নয়। কোনো কোনো সময় অবশ্য তাদের সময় আর প্রাণশক্তি ইতিবাচক দিকেও প্রবাহিত হতে পারে। আবার জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের মতো ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের সহায়ক শক্তিও হয়ে উঠতে পারে। মাদকাসক্তি ও অন্যান্য অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কার কথাও বাদ দেওয়া যায় না।
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঈর্ষণীয়, দ্বিতীয়বার বলার অবকাশ নেই! তবে আশার পেছনে ঘাপটি মেরে বসে থাকে নিরাশা, তার নাম বেকারত্ব। দেশে বেকারের হার বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। প্রতিবছর তিন লাখ মানুষ চাকরি বা কাজ পাচ্ছেন। অথচ এ সময়ে প্রতিবছর দেশের কর্মবাজারে প্রবেশ করেছে প্রায় ২৭ লাখ মানুষ। বেকারত্ব নিয়ে সর্বশেষ খবর হলো, দেশের যুব সমাজের ৯ দশমিক ১ শতাংশই এখনো বেকার। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এই হারে বেকার আছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের যুব সমাজের বেকারত্ব নিয়ে যে তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করেছে, সেখানে এ চিত্র উঠে এসেছে। কর্মসংস্থান, বেকারত্ব ও শ্রমশক্তি নিয়ে জরিপ করে থাকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোও। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য দিয়ে বিবিএসের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশে প্রায় ২৬ লাখ বেকার রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ যুবক-যুবতী। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের যুব শ্রমশক্তি ধরে বিবিএস। এ বয়সী ১৯ লাখ ৩৯ হাজার তরুণ-তরুণী কোনো কাজ করেন না। তাঁরা সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজও করার সুযোগ পান না, অথচ সব সময়ই কাজের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকেন তাঁরা। এদিকে দেশের কর্মক্ষম যুব সমাজকে কাজে লাগাতে জাতীয় যুবনীতি ২০১৬ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে যুবনীতির খসড়া তৈরি করা হয়েছে। শিগগিরই জাতীয় যুবনীতি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে এ খসড়ার ওপর মতামত নেওয়া শুরু হয়েছে।
গত বছরের শেষদিকে আইএলও প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল বিশ্বে বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় ১২তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য-উপাত্তে স্বীকার করা হয়েছে, দেশে গত এক দশকে বেকারত্ব বেড়েছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। আর নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার কমেছে ২ শতাংশ। বিবিএসের হিসাবে বাংলাদেশে প্রতিবছর ২৭ লাখ কর্মক্ষম মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করলেও সরকারি বা বেসরকারিভাবে কাজ পাচ্ছে মাত্র ১ লাখ ৮৯ হাজার মানুষ। ফলে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক মানুষ বেকার থাকছে। পরিণতিতে উৎপাদন কমে যাচ্ছে, বাড়ছে ভোগের মাত্রা। নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে, বেকারত্ব দূরীকরণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
সুতরাং তরুণদের বেকারত্ব, হতাশা আর উৎকণ্ঠা থেকে বের করে আনতে হবে, যাতে তারা জীবনকে ইতিবাচক দিক থেকে দেখতে পারে এবং অর্থনীতিতে, সমাজে ও পরিবারে তাদের যথাযথ অবদান রাখতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে সেটা করা যায়? এই প্রশ্নের প্রথম ও প্রধান উত্তর কর্মসংস্থান। ‘বেকার যুবক’ তকমার ঘানি থেকে তাদের মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু এ জন্য করণীয় কী? সমস্যার সমাধান খুঁজতে হলে বের করতে হবে তার কারণ; আর বেকারত্বের জন্য সাধারণভাবে দায়ী করা হয় শিক্ষা ও দক্ষতার অভাবকে। কিন্তু বিষয়টি এত সরল নয়। যদি হতো, তাহলে আরও বেশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। অথচ বাংলাদেশে (এবং আরও অনেক উন্নয়নশীল দেশেই) শিক্ষিতদের মধ্যেই বেকারত্বের হার বেশি। শ্রমশক্তি জরিপে দেখা যায়, উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার কম শিক্ষিতদের চেয়ে বেশি। তাহলে সমস্যাটা আসলে কোথায়? প্রথমেই দেখা যাক, উপাত্ত ও তথ্য থেকে কী বোঝা যায়।
যেসব দেশে সাধারণভাবে বেকারত্বের হার বেশি, সেসব দেশে যুবকদের মধ্যেও এই হার বেশি। তার অর্থ এই যে দেশের সার্বিক কর্মসংস্থানের সমস্যার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার বাড়াতে হবে। উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের মধ্যকার সম্পর্ক ইতিবাচক, কিন্তু উন্নয়নশীল দেশসমূহে এর উল্টো। সোজা কোথায়, উন্নত দেশে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বেকারত্ব কমাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে, কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে তা হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না, তা বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
উন্নত দেশগুলোতেও যুবকদের বেকারত্বের সমস্যা বেশ গুরুতর। তবে অনেক উন্নত দেশে এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বিশেষ নীতিমালা রয়েছে, যেটি ‘অ্যাকটিভ লেবার মার্কেট পলিসি’ নামে পরিচিত। এর মধ্যে রয়েছে বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রশিক্ষণ এবং শ্রমবাজারে চাকরিপ্রার্থী ও নিয়োগকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে শূন্য পদ পূরণের ব্যবস্থা। অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায়, যেসব দেশে এই নীতিমালার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয় এবং কার্যকরভাবে তা বাস্তবায়ন করা হয়, সেসব দেশে যুব বেকারত্ব কম।
উন্নত দেশগুলোতে, বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপের কয়েকটি দেশে কারিগরি শিক্ষার ওপর বেশ জোর দেওয়া হয়, যার ফলে তরুণেরা স্কুলের পড়া শেষ করার আগেই বৃত্তিমূলক ও শ্রমবাজারমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়। বিশেষ করে জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডে এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে। আর এ দুটি দেশে সাধারণ বেকারত্ব ও যুব বেকারত্ব উভয়ের হারই অন্যান্য দেশের চেয়ে কম।
শিক্ষানবিশি ব্যবস্থাও তরুণদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়ার আগেই কর্মজগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। অনেক উন্নত দেশে গ্রীষ্মকালীন চাকরি তরুণদের শ্রমবাজারে প্রবেশ সহজ করে দেয়। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের চাকরির সঙ্গে প্রকৃত চাকরির বিশেষ মিল দেখা যায় না । উন্নত দেশগুলোর অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়ার অর্থ এই নয় যে তা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান পুরোপুরি আমাদের দেশে কাজে লাগানো যাবে। তবে তা থেকে আমাদের সম্ভাব্য করণীয় সম্পর্কে কিছু হলেও ধারণা পাওয়া যায়। প্রথমত, যেকোনো দেশের অর্থনীতিতেই প্রবৃদ্ধি ও তার সঙ্গে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশে সেখানেই মূল সমস্যা: এ দেশে উচ্চ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলেও যথেষ্ট পরিমাণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। তা ছাড়া সাম্প্রতিক কয়েক বছরে সেই হার আরও কমেছে বলে মনে হয়। নীতিমালা প্রণয়নকারীদের প্রথমেই এ বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। তারপর আসবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে কীভাবে তরুণদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো যায় এবং শিক্ষার জগৎ থেকে কর্মজগতে প্রবেশের প্রক্রিয়াকে কীভাবে আরও মসৃণ করা যায়।
শিক্ষার গুণগত মান অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে শিক্ষার বিষয় নির্ধারণে আরও বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন, আর সে ব্যাপারে শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা দরকার। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বা তাদের অভিভাবকেরা যথেষ্ট পরামর্শ পাচ্ছেন বলে মনে হয় না। ইতিহাস, দর্শন এমনকি অর্থনীতি বা ব্যবসা প্রশাসনের লাখ লাখ স্নাতকের প্রয়োজন রয়েছে কি না, তা কি তাঁরা জানেন?
কারিগরি শিক্ষার ওপর এখনো যথেষ্ট জোর দেওয়া হচ্ছে না; অথচ দেশে যে দক্ষ শ্রমিক ও মাঝারি ব্যবস্থাপকের বিরাট ঘাটতি রয়েছে, তা আর এখন অজানা নয়। তবে ঢালাওভাবে কারিগরি শিক্ষার সুযোগ বাড়িয়ে গেলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। এ ধরনের শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণদের মধ্যেও বেকারত্ব রয়েছে; তবে তা সাধারণ শিক্ষাপ্রাপ্তদের তুলনায় বেশ কম। তা ছাড়া এই খাতে প্রশিক্ষণকে শ্রমবাজারের প্রয়োজনের সঙ্গে সমন্বিত করার কিছু প্রচেষ্টা চলছে, যা থেকে হয়তো সুফল পাওয়া যাবে। আর এটা অস্বীকার করা যাবে না যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে (অন্তত একটা পর্যায় পর্যন্ত) কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন লোকেরই কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি বাড়বে।
উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা এবং স্বকর্মসংস্থান সৃষ্টিও যুবকদের জন্য কাজের সুযোগ বাড়ানোর হাতিয়ার হতে পারে। বাংলাদেশেও এ ধরনের অনেক কর্মসূচি রয়েছে। এ প্রসঙ্গে দু-একটি কথা বলা যেতে পারে। প্রথমত, সবার মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষমতা থাকে না। তা ছাড়া চাকরি পাওয়ার ব্যাপারে তরুণেরা যে রকম অসুবিধার সম্মুখীন হয়, উদ্যোগ সৃষ্টি ও নিয়মিত উপার্জনের সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রেও সে ধরনের বাধা থাকবে না, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। সুতরাং তরুণেরা যেন সেই সব বাধা অতিক্রম করতে পারে, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, প্রশিক্ষণের সঙ্গে অন্যান্য সহায়তা যেমন ঋণ, বাজার খোঁজা, বাজারজাত করা ইত্যাদির সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ দেওয়া হলে কর্মসূচির সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ে।
গণপূর্ত কর্মসূচির আদলে যুবকদের জন্য বিশেষ কর্মসূচির কথা ভাবা যেতে পারে। তবে তাদের শিক্ষার স্তর ও অন্যান্য যোগ্যতার সঙ্গে কী ধরনের কাজ সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, সে বিষয় বিবেচনা করেই এ রকম কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে। সরকারি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার প্রতিষ্ঠানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত, সামাজিক সেবা, যেমন বয়স্কদের সেবা-দেখাশোনা, শিশুদের দেখাশোনার ব্যবস্থা ইত্যাদি কাজ অন্তর্ভুক্ত করে এ ধরনের কর্মসূচি প্রণয়ন করা যেতে পারে। যুব বেকারত্ব সম্পর্কে ওপরে যা বলা হলো, তা একটি মোটা দাগের রূপরেখা। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা, নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।
এম আরমান খান জয়,গোপালগঞ্জ
মোবাইল : ০১৯৫২৫১৮০৮২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *