জলযটে অস্থির জনপদ

Slider সারাদেশ

52962eaaa2d41f7c71a647d9a89c0cb6-5978396c990c8

ঢাকা: টানা বৃষ্টিতে জলজট আর যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীবাসী। গত রাতে থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও আজ বুধবার সকাল থেকে প্রায় টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অফিসগামী মানুষের কষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

বৃষ্টির কারণে রাজধানীর প্রায় অধিকাংশ সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। ঘর থেকে বের হয়েই পড়তে হয়েছে দুর্ভোগে। যানবাহনের সংকটের কারণে অনেকেই হেঁটে রওনা দেন কর্মস্থলের দিকে। সুযোগ বুঝে রিকশাওয়ালা ও সিএনজিচালকেরা ভাড়া হাঁকেন দ্বিগুণেরও বেশি। বাধ্য হয়ে তাঁদের দাবিই মেনে নিতে হয় যাত্রীদের। বৃষ্টির ভোগান্তির পাশাপাশি রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের এমন ব্যবহারে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সকাল সাতটায় রাজধানীর খিলগাঁও থেকে কারওয়ান বাজারে অফিসের উদ্দেশে রওনা দেন শাপলা বেগম (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, বাসা থেকে বের হয়েই পড়তে হয় দুর্ভোগে। বৃষ্টির কারণে কোনো রিকশা পাওয়া যাচ্ছিল না। কেউ রাজি হলেও দ্বিগুণ ভাড়া চান। অগত্যা ৭০ টাকার ভাড়া ১২০ টাকা দিয়ে আসেন তিনি। তবে রিকশা পেলেও যাত্রা সুখকর ছিল না। বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে আর গর্তের কারণে নাজেহাল হতে হয়েছে। বিশেষ করে মালিবাগ-মৌচাক এলাকার রাস্তার যে অবস্থা হয়েছে, তাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই এলাকা পার হতে হচ্ছে।

মুগদা থেকে কারওয়ান বাজারে যাচ্ছিলেন আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় বইয়ে পড়েছিলাম ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সাঁতরে দামোদর পার হওয়ার কথা। আর আজ অনেকটা সেভাবেই অফিসে যেতে হচ্ছে। কিছু দূর বাসে করে এসে পরে পানির জন্য একটি ভ্যানের ওপর দাঁড়িয়ে বাকি রাস্তা পার হতে হয়েছে।’

এদিকে বৃষ্টির পাশাপাশি যানজট ভোগান্তির মাত্রা বাড়িয়েছে আরও কয়েক গুণ। সকাল সাতটা থেকেই রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি এলাকা ছিল যানজটের কবলে। ওই সব এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বহনকারী ব্যক্তিগত গাড়ির চাপে স্থবির হয়ে পড়ে সড়কগুলো। অনিরুদ্ধ রনি নামের একজন জানান, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে সকাল সাতটা থেকেই গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সাত মসজিদ সড়কসহ আশপাশের এলাকার রাস্তাগুলোও ছিল চরম যানজটের কবলে। মোটরসাইকেলে করেও মাত্র চার কিলোমিটার রাস্তা যেতে দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে বলে জানান তিনি।

জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের অনেকটা এলাকাজুড়ে পানি জমে যাওয়ায় মিরপুর, গাবতলী ও মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আসা ব্যক্তিগত গাড়িগুলো ওই সড়কে না গিয়ে সোজা যাওয়ার চেষ্টা করছে। এ কারণে মিরপুর সড়কে অতিরিক্ত চাপ পড়ায় আসাদগেট এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে চরম যানজট।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর ও মিরপুর রোডের সংযোগ সড়কে প্রায় বুকসমান পানি জমে গেছে। ফলে ওই সড়কে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে রওনা দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর গ্রিন রোডে অনেক জায়গায় দুই ফুটের ওপরে পানি জমেছে। ফলে হেঁটে চলাচল করাও অনেকটা অসাধ্য হয়ে পড়েছে ওই সড়কে। এ ছাড়া মিরপুর, বাড্ডা, রাজারবাগ, পুরান ঢাকাসহ অধিকাংশ এলাকায় দুই থেকে চার ফুট পর্যন্ত পানি জমে গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, কাল বৃহস্পতিবার বৃষ্টি কমে যেতে পারে। এর লক্ষণ দেখা যেতে পারে আজ বুধবার দুপুরের পর থেকে।

এদিকে আজ সকাল থেকে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলো থেকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। ১৮ জুলাই থেকে এই সংকেত দিয়ে রেখেছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। ৩ নম্বরের বদলে এখন শুধু নৌবন্দরগুলোতে ১ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *