‘আমার সঙ্গে যা ঘটেছে, তা প্রকাশে ভীত নই’

Slider জাতীয়

1_241

 

 

 

 

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের সঙ্গে কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার এক সাক্ষাৎকারে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন। উদ্ধার পাওয়ার পর এই প্রথম কোনো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন তিনি। বুধবার বারডেম হাসপাতালে বসে নেয়া সাক্ষাৎকারটিতে ফরহাদ মজহার দাবি করেন, ‘ঢাকার বাসা থেকে ভোর পাঁচটায় চোখের ওষুধ কিনতে বের হলে তিনজন লোক জোর করে মিনিবাসে (মাইক্রোবাস) উঠিয়ে নেয় এবং ১৬ ঘন্টা পর ঢাকা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে এক শহরে তাকে পাওয়া যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গত সপ্তাহের সোমবার তিনি নিখোঁজ হবার ঘটনা ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আনা হয়। তখন জাতিসংঘসহ মানবধিকার সংগঠনগুলো নিরাপত্তাবাহিনী দ্বারা জোরপূর্বক গুম ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশকে চাপ সৃষ্টি করে।

হাসপাতালে তার রুমে নেয়া সাক্ষাৎকারটিতে ফরহাদ মজহার বলেন,  ‘তারা আমার সঙ্গে কটূ ভাষায় আচরণ করছিল। আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে চোখ বেঁধে ফেলে এবং মিনিবাসের মেঝেতে তাদের হাঁটুর মাঝখানে চাপ দিয়ে বসিয়ে রাখে।’

সাক্ষাৎকারে তিনি একজন অপহরণকারীকে কৌশলে সামান্য সময়ের জন্য মোবাইলটা নিয়ে তার স্ত্রীকে ফোন করে অপহরণকারীরা তাকে নিয়ে যাচ্ছে এবং মেরে ফেলবে বলে জানান। ফোন ট্র্যাক করে যাতে পুলিশ তার অবস্থান নির্ণয় করতে পারে সেজন্য তিনি অপহরণকারীদের মুক্তিপণ দেয়ার মাধ্যমে তাকে ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব করেন, যার কারণে অপহরণকারীরা তাকে কয়েকবার ফোনে কথা বলার সুযোগ দেয়।

তিনি আরো বলেন, ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা মিনিবাসটি চলতে থাকে। তারা আমাকে অপমান করে, মাঝেমধ্যে গালিগালাজ করে, চড়ও মারে। ১০/১২ ঘন্টা পর তাদের একজন বলে আমাকে ছেড়ে দেয়া হবে। পরবর্তীতে চোখের বাঁধন খুলে দিয়ে খানিক অন্ধকার নির্জন এক জায়গায় নামিয়ে দেয়া হয় আমাকে।’

পরে তিনি কিছুদূর হেঁটে খুলনার একটি মার্কেটে গিয়ে পৌঁছান। সেখানে থেকে তিনি খাদ্য কিনেন। অপহরণকারীরা তাকে রাত সোয়া নয়টার বাসের একটি টিকেট দিয়ে খুলনা থেকে ঢাকায় ফেরত যাওয়ার জন্য বলে জানান ফরহাদ মজহার।

কারা তাকে অপহরণ করেছে সে বিষয়ে তার কোনো ধারণা নেই বলে জানান, অপহরণকারীরা সাধারণ পোশাকে ছিল। তাদের পরিচয় কিংবা কোন গোষ্ঠী সে সম্পর্কে কিছুই তিনি বলতে পারেননি।

স্ত্রীকে করা ফোনকল ট্র্যাক করে পুলিশ তাকে আরো আগে উদ্ধার করতে পারত বলে তিনি জানান, ‘আমি অবাক হয়েছি পুলিশ কেন খুলনা পৌঁছার আগেই মাইক্রোবাসটি আটক করল না?’

ফরহাদ মজহার জানান, ‘তিনি এখনো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কিছু সময় লাগবে।’ অপহরণ থেকে ফিরে আসা অন্যদের মত নিরব থাকবেন কিনা এ বিষয়ে তিনি জানান, আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা প্রকাশ করতে আমি ভীত নই। বেশিরভাগ মানুষ অপহরণ হওয়া নিয়ে রহস্যজনকভাবে চুপ হয়ে যায়। আমি যখন কাজে ফিরে আসব এ বিষয় নিয়ে কাজ করব। আমাদের অপহরণ করার এ সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হবে।

এদিকে কবি, কলামিস্ট ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহারের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী। তাকে হাসপাতাল থেকে শ্যামলীর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বুধবার বিকেল পাঁচটায় বারডেম হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ছাড়পত্র দেন। ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ও উন্নয়নকর্মী ফরিদা আখতার পরিবর্তন ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ফরিদা আখতার বলেন, ‘তার (ফরহাদ মাজহার) শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। তিনি সামান্য ট্রমায় ভুগছেন। ডাক্তার বলেছেন তাকে এখন বাসায় নিয়ে চিকিৎসা দেয়া যাবে। তাই তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দিয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *