মুখে মদ ঢেলে দেন ওসি গোপনাঙ্গে খোঁচায় এসআই

টপ নিউজ সিলেট

51069_f1

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

সিলেট: সেবিকা অনিতার গোপনাঙ্গে লাঠি দিয়ে খোঁচায় এসআই আঁখি। আর মুখে পাইপ লাগিয়ে মদ ঢেলে দেন ওসি মনিরুল। এরপর মাটিতে ফেলে গলায় বুট দিয়ে চেপে ধরেন।

এমন রোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে সিলেটের কোতোয়ালি থানায়। রিমান্ডে রোমহর্ষক এ নির্যাতনের ঘটনায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সেবিকা অনিতা ভট্টাচার্য। আর এ নিয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ দেয়ার পর হইচই পড়ে গেছে সিলেটে।
ইতিমধ্যে নির্যাতনের অভিযোগে সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ও সাব-ইন্সপেক্টর হাসিনা আক্তার আঁখিকে কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। ঘটনা সিলেটের আলোচিত শিশু স্নিগ্ধা দেব জয়ী অপহরণ মামলাকে ঘিরে। অপহরণের ১৬ মাসেও উদ্ধার হয়নি শিশু জয়ী। সম্প্রতি আসামি রবিউল আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। এ জবানবন্দির সূত্র ধরে এ মামলার আসামি
সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালের নার্স অনিতা ভট্টাচার্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই মামলায় প্রথম পর্যায়ে নার্স অনিতা ভট্টাচার্যকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। রিমান্ডে পুলিশের নির্যাতনে তিনি গুরুতর আহত হন বলে তার স্বামী কিশোর ভট্টাচার্য সোমবার মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক তদন্তে নির্যাতনের সত্যতা মিলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম ও এসআই হাসিনা আক্তার আঁখিকে ক্লোজড করা হয়।

এদিকে, সেবিকার স্বামী কিশোর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে অভিযোগে বলেন, তার শ্রীমঙ্গলের আলিসাকুল বাড়ি থেকে স্ত্রীকে কোতোয়ালি থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ৭ই নভেম্বর অনিতাসহ কিশোর ও তাদের সন্তানকে পুলিশ কোতোয়ালি থানায় নিয়ে আসে। ৮ই নভেম্বর পুত্র ও ৯ই নভেম্বর কিশোরকে পুলিশ ছেড়ে দিলেও তাকে আদালতে উপস্থাপন করে ৫ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত মহিলা পুলিশের উপস্থিতিতে হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক জিজ্ঞাসাবাদ করতে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ওই দিনই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সিরাজুল ইসলাম তাকে পুলিশ হেফাজতে কোতোয়ালি থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে নিয়ে যান। অভিযোগে কিশোর জানান, জিজ্ঞাসাবাদে কোন তথ্য না পেয়ে বাদীপক্ষ কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম ও এসআই হাসিনা আক্তার আঁখি শারীরিক নির্যাতন করে অনিতার ওপর। ওসি (তদন্ত) মনির তার গলার ভেতরে পাইপ ঢুকিয়ে মদ খাওয়ায়, পায়ের বুট দিয়ে গলায় চাপ দিয়ে অহরণের ঘটনা স্বীকার করতে বলে। এসআই আঁখি আসামি অনিতার গোপনাঙ্গে লাঠি দিয়ে খোঁচায়।

এ ছাড়া তাকে নানাভাবে বর্বরোচিত নির্যাতন করে। এভাবে ৩ দিনের নির্যাতনে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ১২ই নভেম্বর আদালতে নিয়ে এলে কোর্ট পুলিশ অনিতাকে না রেখে চিকিৎসা দেয়ার জন্য বললে সন্ধ্যায় তাকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকের দেয়া পরামর্শের পরও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রথমে জেল কর্তৃপক্ষ অসুস্থ আসামিকে এভাবে গ্রহণ করতে রাজি না হলেও পরে গ্রহণ করে এবং কারারক্ষীদের পাহারায় ওই দিন রাত ৯টায় ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩ দিন হাসপাতালে চিকিৎসার পর তাকে আবার জেলহাজতে পাঠানো হয়। ১৬ই নভেম্বর আবার তাকে আদালতে সোপর্দ করে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। ওসি (তদন্ত) মনির ও এসআই আঁখির নির্যাতনের কারণে অনিতার অবস্থা বর্তমানে সঙ্কটাপন্ন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি আসাদুজ্জামান দু’জনকে প্রত্যাহারের কথা স্বীকার করে বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। ২০১৩ সালের ২১শে জুলাই সিলেট নগরীর ভাঙ্গাটিকর এলাকা থেকে স্কুলশিক্ষক সন্তোষ কুমার দেব ও সর্বাণী দেবের কন্যা ৪ বছরের শিশু জয়ীকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনার পর পুলিশ প্রথমে তদন্তে নামলেও কোন সুরাহা পায়নি। আলোচিত এ অপহরণের ঘটনাটি নিয়ে সিলেটে আন্দোলন দানা বাধে। দেয়া হয় পুলিশকে আলটিমেটামও। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ প্রথমে একই এলাকার রবিউলকে গ্রেপ্তার করে। রবিউল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জয়ী অপহৃত হয়েছে বলে ধারণা পায় পুলিশ। রবিউল জানিয়েছিল, ‘শংকর দাম নামের এক ব্যক্তি জয়ীকে নৌকায় উঠিয়ে দক্ষিণ সুরমা চলে যায়। কাজিরবাজার খেয়াঘাটে শঙ্কর সেবিকা অনিতার কোলে বাচ্চাটিকে দিয়েছিল।’ তার এ স্বীকারোক্তির পর পুলিশ অনিতার সন্ধানে নামে। কিন্তুতার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে গত ৭ই নভেম্বর পুলিশ শ্রীমঙ্গলের সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে তাকে। জয়ীর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, প্রায় ১৬ মাস ধরে খোঁজ নেই শিশু জয়ীর। সে জীবিত না মৃত কেউ বলতে পারছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *