উন্মোচিত হলো চাঞ্চল্যকর শিশু তুষারের মৃত্যুরহস্য

Slider রংপুর সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

received_1884983281740166

এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ গত শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার মুনিষগাঁও গ্রামের সিরাজ মাস্টারের বাড়ির খড়ের গাদায় অর্ধগলিত গলাকাটা অবস্থায় শিশু তুষারের (৩) মরদেহ পাওয়া যায়।

লাশ উদ্ধারের ৩ দিনের মাথায় মুদ্রার উল্টোপিঠের রহস্য উন্মোচন করেছে ঠাকুরগাঁও পুলিশ। উন্মোচিত হয়েছে শিশু তুষারের মৃত্যুরহস্য।

সোমবার (১ মে) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ শিশু তুষার হত্যার মূল রহস্য। এসময় ৯ জনকে আটক করা হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি।

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার মুনিষগাঁও গ্রামের আল রাজি মোস্তাকিম রাজু দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া প্রেমে জড়িত। কিছুদিন যাবত ওই নারী রাজুকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে।

কিন্তু হঠাৎ বিয়ে করতে গেলে টাকার প্রয়োজন। এছাড়া অনেক টাকা দেনার মধ্যে ছিলেন রাজু। তাই মোটা অঙ্কের টাকা কীভাবে পাওয়া যাবে সে জন্য পরিকল্পনা শুরু করে রাজু।

সেই অনুযায়ী প্রতিবেশী মাসুদ রানার ছেলে আব্দুল কাফি তুষারকে (৩) অপহরণ করে মোটা অঙ্কের টাকা গ্রহণ করার কথা চিন্তা করেন তিনি।

তাই রাজু প্রতিবেশী মাসুদ রানার ছেলে আব্দুল কাফি তুষারকে (৩) অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে শিশু আব্দুল কাফি তুষারের পরিবারের কাছে।

কিন্তু রাজুর পক্ষে একাই অপহরণ করা সম্ভব ছিল না বলে টাকার লোভ দেখিয়ে শিশু তুষারের মামা সেতু ও চাচাতো ভাই শান্তকে ম্যানেজ করে সে।

রাজুর পরিকল্পনা অনুয়ায়ী গত ২৬ এপ্রিল বুধবার আনুমানিক সকাল ৯ টায় তুষারকে অপহরণ করে। সেই অপহরণের বিষয়টি প্রতিবেশী চাচা সিরাজুল ইসলাম টের পেলে রাজুর কাজে ফায়দা নেয়ার জন্য তুষারকে জিনে নিয়ে গেছে বলে মিথ্যা অপপ্রচার চালায়। দুই দিনের মধ্যে শিশু তুষার বাড়িতে ফেরত আসবে বলে শিশু তুষারের বাবা মাসুদ রানাকে জানান সিরাজুল ইসলাম।

অপহরণের আগে শিশু তুষারের মামা তার মায়ের মোবাইল চুরি করেন মুক্তিপণ দাবির জন্য। অপহরণের দিন সকালে প্রতিবেশী চাচা সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে গিয়েছিল শিশু তুষার।

ওই বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তুষারকে সিরাজুল ইসলামের ছেলে শান্ত’র (২০) কোলে দেখা যায়। আর সেদিনই তুষারকে অপহরণ করা হয়।

শিশু তুষার নিখোঁজের ছয় ঘণ্টা পর ওই চুরি হওয়া মুঠোফোন দিয়ে শিশু তুষারের বাবার কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে রাজু। পরে শিশু তুষারের বাবা মাসুদ রানা রানীংশকৈল থানায় অপহরণ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

বিষয়টি টের পেয়ে অপহৃতরা শিশু তুষারকে চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে একটি বস্তায় ভরে হত্যার উদ্দেশ্যে অন্য স্থানে নিয়ে যায়। পরে একটি ঘরে রাজু, সেতু, শান্ত ও রিপনসহ গলা ও হাতের রগ কেটে হত্যা করে শিশু তুষারকে।

গতকাল (৩০ এপ্রিল) ঠাকুরগাঁও নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন আদালতের বিচারক ফারহানা আক্তার খানের কাছে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে এভাবেই জবানবন্দি দিয়েছেন তুষারের মামা সেতু। পরে আদালত হত্যাকাণ্ডে সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে আটক ৯ জনকে জেল হাজতে প্রেরণ করে।

উক্ত সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেওয়ান লালন আহম্মেদ, রানীশংকৈল থানা পুলিশের সার্কেল এসপি মো. হাসিব, সদর থানা পুলিশের ওসি মশিউর রহমান, ওসি (তদন্ত) মান্নানসহ জেলা ও সদর থানার পুলিশ ও গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যবৃন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *