দল থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা ল্য পেনের

Slider সারাবিশ্ব

62936_pen

 

ঢাকা; নয়া ফরাসি বিপ্লবে নেমে ন্যাশনাল ফ্রন্ট দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন উগ্র ডানপন্থি, কট্টর ইসলাম বিরোধী ম্যারিন ল্য পেন। আগামী ৭ই মে উদার, মধ্যপন্থি এমানুয়েল ম্যাক্রোনের সঙ্গে দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তিনি। নির্বাচনে নিজেকে দলের বাইরে রাখার জন্য তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ল্য পেন জানিয়েছেন ফ্রেঞ্চ টিভি’কে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। আগামী ৭ই মে’র এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুধু ফ্রান্স নয়, ইউরোপ তথা সারা বিশ্বের রয়েছে কৌতুহল। কারণ, ল্য পেন ফ্রান্সকে ইউরোপের কব্জা থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অর্থাৎ বৃটেনের ব্রেক্সিট গণভোটের মতো তিনিও গণভোট দেয়ার কথা বলেছেন। প্রতিশ্রুত সেই গণভোটকে ফ্রেক্সিট নামে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। রোববার ফ্রান্সে প্রথম দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়। এতে ভোটাররা মূলধারার সব প্রধান রাজনৈতিক দলকে ছুড়ে ফেলে দেয়। বেছে নেয় রাজনীতিতে নবাগত এমানুয়েল ম্যাক্রোন ও ম্যারিন ল্য পেনকে। ভোটের হিসাবে এরা দু’জনই শীর্ষে রয়েছেন। তাই দ্বিতীয় দফায় ভোট হচ্ছে এ দু’জনের মধ্যেই এবং তাদের যেকেউ হতে যাচ্ছেন ফ্রান্সের নতুন প্রেসিডেন্ট। ওদিকে প্রথম দফা ভোটে প্রধান সব রাজনৈতিক দল আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদে সহ পরাজিত প্রার্থীদের বেশির ভাগই সমর্থন দিয়েছেন ম্যাক্রোনকে। ল্য পেনকে আখ্যায়িত করা হয়েছে কট্টরপন্থি (এক্সট্রিমিস্ট) হিসেবে। তাকে থামানোর জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে প্রধান সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে। ফলে জনমত জরিপে দেখা গেছে, দ্বিতীয় দফার ভোটে ম্যাক্রোনই বেশি জনপ্রিয়। তা সত্ত্বেও হাল ছেড়ে দেয়ার মানুষ নন ল্য পেন। তিনি বলেন, আমরা জিততে পারি। আমরা জিতব।
তিনি এক্ষেত্রে ফরাসি যে শব্দ ব্যবহার করেছেন তাতে ইঙ্গিত মেলে যে, দল থেকে তার সরে দাঁড়ানোর এ ঘোষণা সাময়িক। তিনি ফ্রান্স-২ কে বলেছেন, ফ্রান্স সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো একটি মুহূর্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে সারাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হয়। তারই অংশ হিসেবে তিনি দল থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি ঘোষণা সোমবার সন্ধ্যায় ঘোষণা দেন, এই সন্ধ্যা থেকে আমি আর ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রেসিডেন্ট নই। আমি ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শুধুই একজন প্রার্থী। প্যারিসে অবস্থানরত বিবিসির সাংবাদিক হিউ স্কফিল্ড বলছেন, ল্য পেন এর মধ্য দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন যে, তিনি পুরো দেশের। তিনি তার দলের নন। এখন এমানুয়েল ম্যাক্রোনকে তিনি ঘায়েল করার চেষ্টা করে যাবেন এবং তা শুরুতেই শুরু করেছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এক্ষেত্রে আদর্শগত লড়াই বেশ পরিষ্কার। এখন থেকে ৭ই মে না আসা পর্যন্ত তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে ফ্রান্সবিরোধী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করবেন। এক্ষেত্রে ল্য পেন নিজেকে দেশপ্রেমিক হিসেবে তুলে ধরবেন। ম্যাক্রোনকে ঘায়েল করতে আরো একটি পয়েন্ট ব্যবহার করতে পারেন তিনি। সেটা হলো, প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের সঙ্গে ম্যাক্রোনের অতীত সম্পর্ক, সংশ্লিষ্টতা নিয়ে। এক সাক্ষাতকারে ল্য পেন তো বলেছেনই, ম্যাক্রোন হলেন ‘ওঁলাদের বেবি’। এটাকে বলা হচ্ছে চতুর রাজনীতি। কারণ, এই একই যুক্তি এর আগে প্রথম দফায় ব্যবহার করেছিলেন লেস রিপাবলিকান দলের ফ্রাঁসোয়া ফিলন। এখন সেই ফিলনের পাওয়া ভোটগুলো ল্য পেন পাওয়ার চেষ্টা করবেন। তাই তিনি কথা বলতে পারেন ফিলনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে। এমানুয়েল ম্যাক্রোনকে অগ্রহণযোগ্য বলে আখ্যায়িত করে ল্য পেন বলছেন, তাহলে ভোটগুলো আমাকে দিন। রোববারের নির্বাচনে ল্য পেন পেয়েছেন ৭৬ লাখ ভোট। ন্যাশনাল ফ্রন্ট দলের হয়ে এ যাবতকাল সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন তিনি। ২০০২ সালে তার পিতা যে ভোট পেয়েছিলেন তার চেয়ে এ ভোট ২৮ লাখ বেশি। ল্য পেন তার নির্বাচনী প্রচারণায় যে ধারণাকে সামনে নিয়ে এসেছেন তা হলো:
ক. একটি গণভোটের পর নতুন ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে ব্রাসেলসের সঙ্গে সমঝোতা।
খ. অবৈধ অভিবাসন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করা ও বৈধ অভিবাসন বছরে ১০ হাজারে নামিয়ে আনা।
গ. কট্টরপন্থি মতবাদ প্রচারণামুলক মসজিদগুলো বন্ধ করে দেয়া। সামাজিক গৃহায়ণে ফরাসি নাগরিকদের অগ্রাধিকার দেয়া।
ঘ. অবসরের বয়স ৬০ বছর নির্ধারণ করা এবং সপ্তাহে ৩৫ কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *