সাবেক এমপি টিপুর দুর্নীতির তথ্য জানায় মাহজাবিন খুন!

গ্রাম বাংলা টপ নিউজ

50474_f2

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

গ্রাম বাংলা নিউজ২৪.কম
যশোর: যশোর-৫ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতানের দুর্নীতির তথ্য জানায় শামারুখ
মাহজাবিন সুমিকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার পিতা ইঞ্জিনিয়ার নূরুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, মৃত্যুর আগে মাহজাবিন তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে কথা বলেছে। শ্বশুরের দুর্নীতির তথ্যের বিষয়ে তাকে অবহিত করে এ কারণে তার ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সে। ১২ই নভেম্বর সকাল ১১টায় নুরুল ইসলামের সঙ্গে প্রায় ৩২ মিনিট কথা বলেন মাহজাবিন। তার পরের দিনই নিহত হন তিনি। স্বামীর বাড়ির লোকজন মাহজাবিন আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রচার করলেও নুরুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, তার কন্যাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হচ্ছে। নুরুল ইসলাম জানান, ফোনে কথা বলার সময় মাহজাবিন তার জীবন নিয়ে আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে নানাভাবে অত্যাচার করছে। লেখাপড়া করতে দিচ্ছে না। যে কোন সময় তাকে মেরে ফেলতে পারে এসব জানিয়ে একপর্যায়ে তিনি নুরুল ইসলামকে বলেন, আব্বু, আমি খুব ভয় পাচ্ছি। আমার শ্বশুরের দুর্নীতির কিছু ডকুমেন্ট আমি দেখে ফেলেছি। বিষয়টি তিনি জানার পর আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়েছেন।
নুরুল ইসলাম তখন মাহজাবিনের কাছে জানতে চেয়েছিলেন কিসের দুর্নীতি। কিন্তু ফোনে তা না জানিয়ে মাহজাবিন তখন বলেছিলেন, আব্বু দেখা হলে বলবো। এগুলো ফোনে বলা ঠিক হবে না।
নুরুল ইসলাম জানান, মাহজাবিন কিছু কাগজপত্র পেয়ে তার সুটকেসে সংরক্ষণ করেছিলেন। ওই কাগজ পড়েই তিনি জানতে পেরেছিলেন তার শ্বশুরের দুর্নীতির কথা। পরে শ্বশুর খান টিপু সুলতান ওই কাগজগুলো যখন খুঁজে পাচ্ছিলেন না তখন মাহজাবিন জানিয়েছিলেন কাগজগুলো তার কাছে রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কাগজগুলো খান টিপু সুলতানের হাতে তুলে দেন। তখন খান টিপু সুলতান তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তুমি কি কাগজগুলো পড়েছো? খান টিপু সুলতানের রুদ্রমূর্তি দেখে আতঙ্কে মাহজাবিন তখন মিথ্যা করে বলেছিলেন, কাগজগুলো আমি পড়িনি। কিন্তু খান টিপু সুলতানের আচরণে মনে হয়েছে তিনি তা বিশ্বাস করেননি। নুরুল ইসলাম মনে করেন, খান টিপুর দুর্নীতির বিষয় জানার কারণেই তার কন্যাকে হত্যা করা হয়েছে।
কিসের দুর্নীতিতে খান টিপু সুলতান জড়িত থাকতে পারেন এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেননি নুরুল ইসলাম। তবে তিনি মনে করেন, খান টিপু সুলতান নানা অপকর্মে জড়িত। তা অস্ত্র বা স্বর্ণের চোরাচালান হতে পারে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তদন্ত করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। নুরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, মাহজাবিনকে হত্যার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় খান টিপু সুলতানকে প্রথম আসামি করা হয়েছে। তার স্ত্রী ডা. জেসমিন আরা বেগমকে দ্বিতীয় ও তাদের পুত্র মাহজাবিনের স্বামী সুলতান সাদাবকে তৃতীয় আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় সুলতান সাদাবকে গ্রেপ্তার করা হলেও প্রথম ও দ্বিতীয় আসামিকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি হিসেবে খান টিপু সুলতান প্রভাব বিস্তার করে মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন নিহত মাহজাবিনের পিতা নুরুল ইসলাম।
তবে মাহজাবিনকে হত্যা করা হয়েছে নাকি তিনি আত্মহত্যা করেছেন- এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। যদি তিনি আত্মহত্যা করে থাকেন তাহলে ঘটনার পরপর কেন আলামত নষ্ট করা হলো এ নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুবকর সিদ্দিক জানান, যদি তিনি বাথরুমের গ্রিলের সঙ্গে আত্মহত্যা করে থাকেন তাহলে তার ঝুলন্ত লাশ পুলিশ ছাড়া নামানো ঠিক হয়নি। মাহজাবিনকে হত্যা করা হয়েছে নাকি তিনি আত্মহত্যা করেছেন- এ বিষয়ে এখন তদন্ত করছে পুলিশ। এজন্য গ্রেপ্তারকৃত নিহতের স্বামী সুলতান সাদাবকে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি বলে জানান তিনি। এজন্য ঢাকা মাহনগর হাকিম আদালতে তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক কাজী শরিফুল। রোববার (আজ) রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে।
মামলার প্রথম আসামি সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতানকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না জানতে চাইলে ওসি আবুবকর সিদ্দিক জানান, তিনি বর্তমানে সংসদ সদস্য না হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করতে কোন বাধা নেই। হত্যা বা আত্মহত্যা যা-ই হোক, এতে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *