জুলাইয়েই আসছে পাকিস্তান

Slider খেলা সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

এখানেই কাল এসিসির একটি সভা হলো। এসিসির বর্তমান চেয়ারম্যান পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান শাহরিয়ার খান বললেন, সভাটি অনানুষ্ঠানিক। শাহরিয়ার খানের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের সভাপতি থিলাঙ্গা সুমাথিপালা এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নাজমুল হাসান। ভারতীয় প্রতিনিধির উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত কোনো কারণে তিনি গরহাজির।

এসিসির এই অনানুষ্ঠানিক সভার অনেকটা জুড়েই ছিল বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সফর বিনিময়-সংক্রান্ত আলোচনা। আর তাতে কেটে গেছে একটা ধোঁয়াশা। পিসিবি-প্রধান পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশ সফরে আসছে পাকিস্তান দল। নতুন করে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিসিবি তাদের হাইপারফরম্যান্স দল পাঠাবে পাকিস্তানে। এটাকে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরানোর ব্যাপারে বড় অগ্রগতি হিসেবেই দেখছেন পিসিবি-প্রধান, ‘বাংলাদেশ তাদের হাইপারফরম্যান্স দল পাকিস্তানে পাঠাতে রাজি হয়েছে। তারা খেলবে আমাদের হাইপারফরম্যান্স দলের সঙ্গে। এটি আসলে বড় একটি পদক্ষেপ। আশা করি, এরপর বাংলাদেশ দলও পাকিস্তান সফর করবে।’ আইসিসি হাইপারফরম্যান্স দলের সফরটি আগামী জুলাইয়ে করতে বললেও শাহরিয়ার খান বলেছেন, ‘সফরের সময় চূড়ান্ত করব আমরা দুই বোর্ড মিলে।’

পাকিস্তানে জাতীয় দল পাঠানোর ব্যাপারে যে বিসিবি এখনো রাজি নয়, তা-ও জানিয়েছেন পিসিবি-প্রধান, ‘জাতীয় দলের কথা বললে বিসিবি এখনো পাকিস্তানে দল পাঠাতে রাজি নয়। তবে ভবিষ্যতে আমরা বাংলাদেশে বা দুই বোর্ডের কাছেই গ্রহণযোগ্য অন্য কোনো দেশেও সিরিজ খেলতে পারি।’ পাকিস্তানের সম্ভাব্য ‘হোম’ ভেন্যু হিসেবে শ্রীলঙ্কার কথাও বলেছেন তিনি।

পাকিস্তান শ্রীলঙ্কাকে নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে বেছে নিতে চায়, যাতে একটু আর্থিক সাশ্রয় হয়। নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে দুবাইতে খেলে যে আর কুলিয়ে উঠতে পারছে না পিসিবি! দুবাই অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে। প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, শ্রীলঙ্কা পাকিস্তানের জন্য নতুন নিরপেক্ষ ভেন্যু নয়। ২০০২ সালে এই কলম্বোতেই নিরপেক্ষ ভেন্যুতে প্রথম টেস্টটি খেলেছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।

পাকিস্তানে নিরাপত্তা এক বড় প্রশ্ন। ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পর কোনো আন্তর্জাতিক দলই আর পাকিস্তানে খেলতে যেতে চায় না। মাঝখানে অনেক সাধ্যসাধনা করে জিম্বাবুয়েকে নিয়ে যেতে পেরেছিল পিসিবি। কিন্তু এরপর আর কোনো দলই সেখানে যেতে রাজি হচ্ছে না। অথচ নিজেদের দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরাতে মরিয়া পিসিবি। বাস্তবতা মেনে নিয়ে পিসিবি-প্রধান তাই আফসোসই করলেন, ‘জুলাই-আগস্টে পাকিস্তান দল বাংলাদেশে যাচ্ছে। তবে বিষয়টি একেবারে একপক্ষীয় হয়ে যাচ্ছে। এবার যদি বাংলাদেশে আমরা যাই, সেটি হবে টানা তৃতীয়বারের মতো। আমাদের তাই আর্থিক বিষয়গুলোতেও একমত হতে হবে।’

সভা থেকে ফিরে হোটেল তাজ সমুদ্রে কথা বলেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও। সরাসরি হাইপারফরম্যান্স দল পাঠানোর কথা না বলে একটু ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে বলেছেন, ‘পাকিস্তানে আমাদের জাতীয় দলের যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে আমরা বলেছি, বিকল্প কিছু ভাবব। হতে পারে, আমাদের জুনিয়র কোনো দল পাকিস্তান সফরে যাবে।’

পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরানোর বড় মাধ্যম হোক বাংলাদেশ, এটি অনেক আগে থেকেই চেয়ে আসছে পিসিবি। বাংলাদেশকে নেওয়ার ব্যাপারে চেষ্টা-চরিত্র তারা কম করেনি। এর আগে একবার কথা দিয়ে বাংলাদেশ পাকিস্তানে যায়নি, তা নিয়ে গোসসাও আছে পিসিবির।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের খেলার অনুমতি না দেওয়া তার একটি বড় প্রমাণ। যদিও ‘নাকের বদলে নরুন’ পাওয়ার মতো পাকিস্তান ২০১৫ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেট দলকে নিয়ে ছেড়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের ক্রিকেটার এনামুল হক লাহোরে গিয়ে খেলে এসেছেন পিএসএল ফাইনালে। এবার আবার হাইপারফরম্যান্স দলকে পাঠানো হবে বলে কথা দিল বিসিবি। সবকিছুই হয়তো পাকিস্তানে জাতীয় দল না পাঠিয়ে সময়ক্ষেপণের কৌশল। কিন্তু কাল শাহরিয়ার খানের কথা শুনে মনে হলো, আজ হোক, কাল হোক বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে তাঁরা পাকিস্তানে নিয়ে ছাড়বেনই।

ছিলেন পেশাদার কূটনীতিক। ক্রিকেট কূটনীতিটাও ভালোই জানেন ৮৪ বছরে পা দেওয়া শাহরিয়ার খান। হাতের লাঠিতে ভর দিয়ে যা বলে গেলেন, সেটি বিশুদ্ধ ক্রিকেট কূটনীতি, ‘আমরা শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের সঙ্গে একজোট হয়ে চলতে চাই। হ্যাঁ, সবকিছুতে ঐকমত্য থাকবে না সেটি মানি, কিন্তু আপাতত আমরা এক হয়ে আইসিসির গঠনতন্ত্রে তিন প্রধানের কর্তৃত্ব নিরোধমূলক সংশোধনী আনতে যাচ্ছি। ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খবরদারি করবে, এটা তো হতে পারে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *