জঙ্গিদের হেডকোয়ার্টার?

Slider সারাদেশ

59190_f2

 

ঢাকা; আতিয়া মহল। সিলেট মহানগরের দক্ষিণ সুরমায় শিববাড়ি এলাকায় অবস্থান বাড়িটির। চারদিন ধরে এ বাড়ির
দিকে দৃষ্টি সারা দেশের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে বাড়িটি ঘিরে রাখে। বাড়ির ভেতর থেকে জঙ্গিরা গ্রেনেড নিক্ষেপ করে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়।
শনিবার সকালে আতিয়া মহলের জঙ্গি আস্তানায় মূল অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। ওই বাড়িতে আটকে পড়া সাধারণ মানুষদের উদ্ধার করা হয় নিরাপদে। অভিযান চলে তিন দিন। সোমবার সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, অভিযানে চার জঙ্গি নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক জন নারী।
বাংলাদেশে অতীতে কোনো জঙ্গি আস্তানা ঘিরে এত দীর্ঘতম সময় পর্যন্ত অভিযান পরিচালিত হয়নি। পুরো বাড়িটিতে বিস্ফোরক লাগিয়ে রাখে জঙ্গিরা। ভেতর থেকে বারবারই গুলি আর গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তারা। বলা হচ্ছে, এখনো ওই বাড়িতে এত বিস্ফোরক রয়েছে যে, এসব বিস্ফোরণ ঘটলে বাড়িটির অংশ বিশেষ উড়ে যেতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতিতে ধারণা করা যায়, আতিয়া মহল বাড়িটি জঙ্গিরা নিজেদের হেড কোয়ার্টার হিসেবেই গড়ে তুলেছিল।
বাংলাদেশে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একাধিক সফল অভিযান পরিচালনা করেছে এ পর্যন্ত। হলি আর্টিজানে অভিযান চালিয়ে খুব দ্রুত সাফল্য পায় সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল। এমনকি শীর্ষ জঙ্গি নেতা গুলশান হামলার মাস্টারমাাইন্ড তামিম চৌধুরীকেও স্বল্প সময়ের অভিযানে ধরাশায়ী করছিল পুলিশের বিশেষায়িত টিম সোয়াট সদস্যরা।
গত বছর ১লা জুলাই রাজধানীর গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর রোডের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা নৃশংসভাবে হত্যা করে বিদেশিসহ ২০ জনকে। জিম্মিদের উদ্ধার করতে গিয়ে নিহত হন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (ডিবি উত্তর) সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম এবং বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন। জঙ্গিদের ছোড়া বোমায় আহত হন র‌্যাব, ডিবি, সোয়াট ও থানা পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য। রাত পেরিয়ে পরদিন শনিবার সকালে জীবিত জিম্মিদের উদ্ধার করার জন্য ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল। ১২-১৩ মিনিটের ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ এ জীবিত উদ্ধার হন ১৩ জন। অভিযানে ৫ হামলাকারী মারা যায়। এর এক সপ্তাহের মাথায় ৭ই জুলাই ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সকাল সাড়ে ৯টায়  শোলাকিয়া মাঠের অদূরে শহরের আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে মুফতি  মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদের মোড়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের ওপর বোমা হামলা করে জঙ্গিরা। এ ঘটনায় জহিরুল ইসলাম ও আনছারুল ইসলাম নামে দুই পুলিশ সদস্য, এক হামলাকারী ও এক নারী নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল একটি চাপাতি উদ্ধার এবং আহত অবস্থায় দুই সন্ত্রাসীসহ তিনজনকে আটক করা হয়।
গত বছর ২৬শে জুলাই ভোররাতে জঙ্গিদের কল্যাণপুরের আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশের সোয়াট ইউনিট। অপারেশন স্টর্ম টোয়েন্টি সিক্স নামে মূল অভিযান চলে ভোর ৫টা ৫১ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা। এ সময় গোলাগুলিতে ৯ জঙ্গি নিহত হয়। ২৭শে আগস্ট সকালে সোয়াট, সিটি ইউনিট, র‌্যাব ও পুলিশ  যৌথভাবে ‘অপারেশন হিট স্ট্রং-২৭’ চালায় নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়ার বড় কবরস্থান এলাকার একটি তিনতলা আবাসিক ভবন ‘দেওয়ান বাড়িতে।’ এ অভিযানে গুলশান হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ কানাডা প্রবাসী তামিম চৌধুরীসহ তিনজন নিহত হয়। ৫ই সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরের ৩৩ নম্বর সড়কের ৩৪ নম্বর বাড়িতে আরেকটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ অভিযানে গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার সামরিক প্রশিক্ষক মেজর জাহিদ নিহত হয়। রাজধানীর আজিমপুরে ১০ই সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আরো একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিজিবি সদর দপ্তরের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন ২০৯/৫ নম্বরের ছয়তলা ওই বাড়িতে অভিযান চালানোর সময় ভেতরে থাকা নারী জঙ্গিরা পুলিশকে ছুরিকাঘাত ও মরিচের গুঁড়া ছুড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ঘটনাস্থলে আত্মহত্যা করে পুরুষ জঙ্গি তেহজীব করিম ওরফে আবদুল করিম। পুলিশ ওই সময় জানিয়েছিল গ্রেপ্তারকৃত নারী জঙ্গিরা জেএমবি’র অন্যতম শীর্ষ নেতা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী এবং জঙ্গিনেতা রাহুলের স্ত্রী। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা তিন শিশুকে পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পৃথক অভিযানে ৮ই অক্টোবর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (গাসিক) হাড়িনাল পশ্চিমপাড়া লেবুবাগান ও নোয়াগাঁও পাতারটেক এলাকায় পৃথক দু’টি জঙ্গি আস্তনায় র‌্যাব, পুলিশ, সিটি ইউনিট ও সোয়াটের অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হয়। এর মধ্যে হাড়িনাল পশ্চিমপাড়া লেবুবাগানের অভিযানে ২ জন এবং হাড়িনাল পাতারটেক এলাকায় অভিযানে ৭ জঙ্গি নিহত হয়। একইদিনে টাঙ্গাইলে র‌্যাবের সঙ্গে পৃথক অভিযানে ২ জঙ্গি নিহত হয়। রাজধানীর পূর্ব-আশকোনার ‘সূর্য ভিলা’ নামে একটি বাড়ির আস্তানায় অপারেশন রিপল-২৪ নামে পুলিশের সোয়াট টিম ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের যৌথভাবে চালানো অভিযানে সন্তানসহ দুই নারী জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেন। আত্মঘাতী ভেস্ট বিস্ফোরণে নিহত হয় আরেক নারী জঙ্গি। এ সময় এক শিশু গুরুতর আহত হয়। এছাড়া গোলাগুলিতে নিহত হয় এক কিশোর জঙ্গি। ১৫ই মার্চ বিকাল ৩টা থেকে ১৬ই মার্চ সকাল ১০টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড  উপজেলার কলেজ রোডে ছায়ানীড় নামে একটি বাড়িতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলাকালে ‘আত্মঘাতী বিস্ফোরণে’ দুইজন এবং জঙ্গি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে গুলিবিনিময়ের সময় দু’জন নিহত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *