তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যুতে মমতা-মোদির লড়াই

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

53224_madi

 

  ডেস্ক;  এ সময়ের সর্বোৎকৃষ্ট বিষয় হলো পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক। যেহেতু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত (ওয়ারপাথ) লিপ্ত রয়েছেন সেহেতু এটা উত্তম সময় নয়। অতীতের মতো, এর প্রভাব রয়েছে ঢাকার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে আসার কথা রয়েছে মার্চে। প্রকৃতপক্ষে এ সফর হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। ২০১৫ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় তার সঙ্গী হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোনা গিয়েছিল, তিনি তখন দুটি বড় প্রকল্প নিয়ে সমঝোতায় রাজি হয়েছিলেন। তার একটি হলো তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি। অন্যটি গঙ্গায় ব্যারেজ প্রকল্প। কিন্তু বাস্তবে এ দুটি প্রকল্পের কোনোটিই বাস্তবতার মুখ দেখেনি। নয়া দিল্লি ও ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, সমঝোতা আটকে আছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাতে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্বাস করেন, তিস্তা চুক্তি তাকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই তিনি এটা নিশ্চিত করেছেন, গত পাঁচ বছরেও এ চুক্তি হয়নি। গঙ্গা ব্যারাজ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একগুঁয়েমি কমই বোধগম্য। এ ব্যারাজ থেকে সুবিধা পাবে পশ্চিমবঙ্গ। সেচকাজে সহায়ক হবে। রাজ্যে পানি ধরে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত হবে।
২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফর করেন। তার এ সফরের পুরোটা জুড়েই যেন ছিলেন মমতা। কারণ, মনমোহনের ওই সফরের একেবারে অন্তিম মুহূর্তে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে, পার্লামেন্টে সীমান্ত চুক্তির অনুমোদন পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালে ঢাকা সফর করেন। তিনি চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার সফরসঙ্গী হন। তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি সরকার প্রধান (হেড অব গভর্নমেন্ট) হিসেবে মর্যাদা দিয়েছিলেন। তারপর থেকে তিস্তা ও গঙ্গা ব্যারাজ উভয় ইস্যুতে কাজ করতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা। পশ্চিমবঙ্গের কৃতিত্বের মধ্যে আরেকটি কালো বাস্তবতা আছে। সেটা হলো এ রাজ্যটি কট্টর ইসলামপন্থি উগ্রবাদীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। এসব উগ্রবাদীর বেশির ভাগই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রবেশ করেছে।
শেখ হাসিনা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালিয়েছেন। ভারতীয় নকল মুদ্রা তৈরির নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছেন। তার একটি প্রভাব পড়েছে। তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার কিভাবে এসব উগ্রপন্থিকে সীমান্তের এপারে (পশ্চিমবঙ্গে) আশ্রয় নিতে দিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক সংঘাত কয়েক বছর ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে।
কপালে ভাঁজ বা বলিরেখা থাকা সত্ত্বেও গত বছরে ভারতে সবচেয়ে বেশি পর্যটক ছিল বাংলাদেশের। সম্প্রতি এমন ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা। এর পরিপ্রেক্ষিতে গোয়াহাটিতে একজন ডেপুটি হাইকমিশনার নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়াটি ভারত সহজ করে দিয়েছে। এতে বেশি বেশি পর্যটক আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখন দু’দেশের সরকারের মধ্যে আরো একটি ধারণা কাজ করছে। তা হলো যেসব বাংলাদেশি ভারতে কাজ করতে চান তাদের জন্য ওয়ার্কপারমিট বা কাজের অনুমোদন দেয়া। এতে অর্থনৈতিক অভিবাসন ইস্যুর সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে। এভাবে যদি সরকারি ব্যবস্থাপনায় লোক নিয়োগ করা হয় তাহলে তাতে স্বচ্ছতার চর্চা হবে।

(অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত সাংবাদিক ইন্দ্রানী বাগচির লেখার অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ আবুল হোসেন)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *